সমকামী অধিকার কর্মীকে হত্যার হুমকি
2017.11.15
ঢাকা

সমকামীদের অধিকার আদায়ের কর্মী জুলহাস মান্নানের হত্যাকাণ্ডের দেড় বছরের মাথায় এসে সমকামীদের আরেক কর্মীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে সন্দেহভাজন জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম সৈকত নামের ওই সমকামী অধিকার কর্মীকে দুই দফায় মোবাইল ফোনে কল করে হত্যার হুমকি দেয় অপরিচিত ব্যক্তিরা।
সৈকত নওগাঁ জেলায় আইন পেশায় যুক্ত। তিনি সমকামীদের মানবাধিকারকর্মী, ব্লগার ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক জাস্টিসমেকার্সের ফেলো (২০১০)।
এর আগে গত অক্টোবরের ১৯ ও ২৩ তারিখে তাঁকে দুবার হত্যার হুমকি দিয়ে ফোন করা হয়। এ ছাড়া ফেসবুকেও একাধিকবার তাঁকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। এরপর তিনি পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে ২৭ অক্টোবর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তবে এখনো এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
বর্তমানে সৈকত শঙ্কায় রয়েছেন। তিনি বলেন, জঙ্গি গোষ্ঠীরা তাঁকে মোবাইল ফোনে ও ফেসবুকে হুমকি দিচ্ছে।
এর আগে ১৯ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের কান্ট্রি কোডযুক্ত আরেকটি নম্বর থেকে ফোন করে একই ধরনের হুমকি দেওয়া হয় বলেও সৈকত ডায়রিতে উল্লেখ করেন।
সৈকত তাঁর ডায়রিতে দুটি ফোন নম্বরই উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পরে বাংলাদেশি দুটি নম্বর থেকে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলে বেনারকে জানান সৈকত। তবে সর্বশেষ ঘটনাটি তিনি পুলিশকে জানাননি।
“আমাকে আবারও জঘন্য ভাষায় গালাগালি করে বলে, আমি নাকি নাস্তিক এবং আমাকে আবারও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। জঙ্গিরা ছাড়া এ কাজ আর কেউ করতে পারে না। আমি খুব ভয়ে আছি। এবারের বিষয়টি পুলিশকে জানাইনি। তাদের জানিয়ে কী হবে? তারা তো ধরবে না,” বেনারকে বলেন সৈকত।
‘প্রযুক্তির অভাবে ধরা যাচ্ছে না’
হুমকিদাতাদের কাউকে শনাক্ত করতে না পারার বিষয়ে নওগাঁ সদর সার্কেলের এএসপি হিমেল রায় বলেন, “অ্যাডভোকেট সাহেব জিডি করেছেন। উনাকে যে নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের নয়। এগুলো চিহ্নিত করার প্রযুক্তি জেলা পর্যায়ের পুলিশের কাছে নেই। ঢাকায় আমাদের সাইবার ল্যাব ও ফরেনসিক ল্যাব আছে। ঘটনাটি সেখানে পাঠিয়ে তদন্ত করে বের করার চেষ্টা আছে।”
২০১৬ সালের ২৫ মার্চ জঙ্গি গোষ্ঠী আনসার-আল-ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গিদের হাতে ঢাকার কলাবাগানের নিজ বাসভবনে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা ও সমকামীদের মানবাধিকার বিষয়ক ম্যাগাজিন রূপবানের সম্পাদক জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয় নৃশংস খুনের শিকার হন। হত্যার আগে তাদের মোবাইল ফোন ও ফেসবুকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হলেও তারা এর তদন্তকাজ এখনো শেষ করতে পারেনি।
সমকামী ও অন্যান্য যৌন সংখ্যালঘুদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, জুলহাস মান্নান ও তনয় হত্যার বিচার না হওয়ায় জঙ্গিরা আশকারা পেয়ে গেছে। এখন তাদের লক্ষ্য সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলা বাকি ব্যক্তিদের হত্যা করা।
“পুলিশের কাছে গেলে তারা উল্টো আমাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে। যে কারণে যৌন সংখ্যালঘুরা পুলিশের কাছে যেতে নিরাপদ বোধ করেন না,” জানান ওই কর্মকর্তা।
মুবাশ্বার হাসানকে খুঁজে বের করতে পেন আমেরিকার আহ্বান
এদিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুবাশ্বার হাসানের নিখোঁজের ঘটনাটিকে বাংলাদেশে ‘সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার সার্বিক পরিস্থিতির অংশ’ হিসেবে উল্লেখ করে তাঁকে খুঁজে বের করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা পেন আমেরিকা।
সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, “অধ্যাপক ড. মুবাশ্বার হাসান, যিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসলামি চরমপন্থা বিষয়ক গবেষণার জন্য পরিচিত, তাঁর নিখোঁজের ঘটনা মননশীলতা চর্চার ক্ষেত্রে স্বকীয় ধ্যান ধারণার মানুষদেরকে বাংলাদেশের নিরপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহারণ।”
মুবাশ্বার হাসান গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টা থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল মৌলবাদ ও রাজনীতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আগে তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
“ড. মুবাশ্বার হাসানের নিখোঁজের ঘটনা বাংলাদেশে মুক্ত চিন্তার মানুষদের ওপর বিদ্যমান হুমকির আরেকটি উদাহরণ,” বিবৃতিতে বলেন পেন আমেরিকার ফ্রি এক্সপ্রেশন অ্যাট রিস্ক প্রগ্রামের ডিরেক্টর কারিন কারলেকার।
তিনি বলেন, “ড. হাসানের নিখোঁজের পেছনে যে গোষ্ঠীই জড়িত থাকুক না কেন, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অতি দ্রুত তাঁকে খুঁজে বের করার জন্য উদ্যোগী হতে হবে।”