মালদ্বীপে জরুরি অবস্থা: বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ

জেসমিন পাপড়ি
2018.02.06
ঢাকা
রাজধানী মালেতে বিরোধী দলের এক সমর্থককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে মালদ্বীপের পুলিশ। রাজধানী মালেতে বিরোধী দলের এক সমর্থককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে মালদ্বীপের পুলিশ। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
AP

সার্কভুক্ত দেশ মালদ্বীপে জরুরি অবস্থা জারির পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে মালের বাংলাদেশ দূতাবাস। সরকারি হিসাবে, মালদ্বীপে বিভিন্ন পেশায় প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি নিয়োজিত রয়েছে।

সোমবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশিদের বিনা প্রয়োজনে বাইরে না থাকার এবং সতর্ক থেকে চলাফেরা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মিছিল, সমাবেশসহ যে কোনো ধরনের ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস।

বাংলাদেশিদের জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি হটলাইন (+9603320859) চালু করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা চলছে। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া একটি ঐতিহাসিক রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন সোমবার সন্ধ্যায় জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেন।

এই পরিস্থিতিতে পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই দেশটি ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা জীবনের ঝুঁকি বা নিরাপত্তার সমস্যা না পড়লেও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়বে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন।

তিনি বেনারকে বলেন, “রাজনৈতিক এই সংকটের ফলে মালদ্বীপ এক ধরনের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে পড়বে। ফলে যে সকল বাংলাদেশি সেখানে কাজ করছে তাঁরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।”

এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হলে বিষয়টা বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তার বলেন ড. দেলোয়ার।

দেশটির মাভাহ দ্বীপের লামু অটলে বসবাস করেন বাংলাদেশি চিকিৎসক তাসনোভা আফরিন। তিনি বেনারকে বলেন, “মালে থেকে বেশ দূরে হলেও এই দ্বীপে বসে আমরা কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করতে পারছি। আমার কর্মস্থলের পাশে পুলিশ পাহারা বেড়েছে। তবে আমরা বিদেশিরা ভালো আছি।”

আদালতের যে রায়কে কেন্দ্র করে সংকট

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশ মালদ্বীপে এই রাজনৈতিক সংকটের শুরু দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একটি রায় থেকে। গত সপ্তাহে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বেচ্ছানির্বাসনে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদসহ বিরোধী দলের কারাবন্দী নয়জন নেতাকে মুক্তির আদেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি বহিষ্কার করা ১২ জন আইনপ্রণেতাকে তাঁদের পদে ফিরিয়ে আনার আদেশও দেওয়া হয়।

এই ১২ জনের বহিষ্কারাদেশ ফিরিয়ে নেওয়ায় ৮৫ সদস্যের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে ক্ষমতাসীন দল। এ কারণে সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করে ইয়ামিন সরকার। আর এরপর থেকেই দেশটিতে এই রাজনৈতিক সংকটের শুরু।

এদিকে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের বিরুদ্ধে একটি রুলও জারি করেছে মালদ্বীপের সর্বোচ্চ আদালত। রোববার আবার রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির আদেশ পালন না করায় অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রধান কৌঁসুলিকে অপসারণের জন্য বিরোধী দলের নেতারা পার্লামেন্টে একটি পিটিশন দায়ের করেন।

এরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পার্লামেন্ট সিলগালা করে এর চারপাশে সতর্ক অবস্থান নেয়। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন আদালতের আদেশ কার্যকর না করতে দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।

জরুরি অবস্থা জারির পরে সোমবার রাতেই প্রধান বিচারপতি আব্দুল্লাহ সাঈদসহ আলী হামীদ নামে অপর একজন বিচারক এবং জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হাসান সাঈদকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।

এর আগে মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম এবং তার মেয়ের জামাই মোহাম্মদ নাদিমকেও আটক করা হয়।

দেশটির এই মারাত্মক রাজনৈতিক সংকট সমাধানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শ্রীলঙ্কায় নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তিনি বিচারক ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিকদের মুক্ত করতে সেনাবাহিনীর সমর্থনে মালদ্বীপে দূত পাঠাতে ভারতের প্রতি আহবান জানান। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন মোহাম্মদ নাশিদ।

প্রতিবেশি মালদ্বীপের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের জন্য কিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে কোনো অবস্থাতেই সহিংসতার পর্যায়ে বা আইনের শাসনের জন্য হুমকির দিকে নিয়ে যাওয়া উচিৎ নয়। রাজনৈতিক বিরোধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তবে দেশের ভেতরে যে অস্থির অবস্থা তৈরি হয় তা দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।”

তবে আনুষ্ঠানিকভাবে মালদ্বীপের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ মালদ্বীপের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে দেশটিতে আমাদের দূতাবাসের সঙ্গে সাবর্ক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।