সংবাদের সত্যতা যাচাই করবে ইউ ল্যাবের ‘ফ্যাক্ট ওয়াচ’
2018.06.05
ঢাকা

খবরের সত্যতা যাচাইয়ে এক বিশেষ কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ‘ফ্যাক্ট ওয়াচ’ নামের এক কর্মসূচির মাধ্যমে সংবাদের সত্যতা যাচাই এবং বস্তুনিষ্ঠতা খোঁজ করবে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউ ল্যাব)-এর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘ফ্যাক্ট-ওয়াচ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এক বছরের জন্য এই কর্মসূচিতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ঢাকার আমেরিকান সেন্টার। গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে এই ফ্যাক্ট ওয়াচ টিম কাজ শুরু করেছে।
খবরের সত্যতা যাচাইয়ে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক প্রথম এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিচ্ছিন্নভাবে এমন উদ্যোগ কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজি বেনারকে বলেন, “মিডিয়ার ওপরে মানুষের আস্থা নাই বললেই চলে। এ দেশে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। মিডিয়া এই পরিস্থিতির বদল করতে পারত কিন্তু তা মিডিয়া করতে পারেনি এখনও।”
তাঁর মতে, “এর পেছনে মিডিয়াকর্মীদের প্রশিক্ষণ শিক্ষা-দিক্ষা, গণতন্ত্র নিশ্চিত করার ব্যাপার যেমন আছে, তেমনি আছে অর্থনৈতিক সামর্থ্যের দিকটিও।”
“এ দেশের মানুষ তথ্য কেনার জন্য খুব বেশি মূল্য দিতে চায় না বা পারে না। যেমন স্বল্প ব্যয় তারা তথ্য কেনার জন্য করে তেমনি নিম্নমানের তথ্য তারা পায়।”
“তথ্য সরবরাহকারীরা তথ্য যাচাই করতে যে অর্থ ও সময় ব্যয় হয় তা বিনিয়োগ করে না, কারণ সে বিনিয়োগ ফেরত আসবে না। এভাবে একটা জটিল আবর্তে ঘুরছে সবকিছু,” বলছিলেন আলী আর রাজি।
ইউ ল্যাবের শিক্ষার্থীদের জন্য এমন উদ্যোগ অবশ্যই কাজের হলেও বিচ্ছিন্নভাবে এমন উদ্যোগ নিয়ে খুব বেশি কিছু হবে না বলেও মনে করেন সাংবাদিকতার এই শিক্ষক।
এই উদ্যোগের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাক্ট’ বিষয়টা যে কী তা আমাদের কাছে পরিষ্কার না। আমি অনুমান করি, যারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন তারা বাংলাদেশে কাজ করবেন বলেই দেখছি কিন্তু তারা "ফ্যাক্ট" এর বাংলা কী করেছেন বা কী ভাবেন সেটা খুব গুরুত্বপুর্ণ।”
‘ফ্যাক্ট-ওয়াচ’ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান।
তিনি বলেন, “ক্রমাগত বিশ্বব্যাপী মিথ্যা-খবর ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। মাঝে মাঝে খবর এমনভাবে উপস্থাপিত হয়, কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা তা বোঝার উপায় থাকে না। যা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতারও একটি বড় অন্তরায়।”
“ফলে সত্য-মিথ্যা খবর যাচাইয়ের জন্য ইউ ল্যাবের সাংবাদিকতা বিভাগের এই উদ্যোগটি আসলেই প্রশংসনীয়,” বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় আমেরিকান অ্যাম্বাসির সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মকর্তা জুলি নিকলেস ইউ ল্যাবের ফ্যাক্ট ওয়াচ টিম খুব ভালো কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ‘ফ্যাক্ট ওয়াচ’ কর্মসূচির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট www.fact-watch.org.
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অসংখ্য ভুয়া নিউজ প্রকাশ এবং এর প্রেক্ষিতে কয়েকটি সংঘাতের ঘটনাও ঘটে।
দেশের প্রথম তথ্য যাচাইকারী সাইট ‘বিডি ফ্যাক্ট চেক’ ডটকম জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়া এবং ফেসবুকে ছড়ানো গুজবের জের ধরে নাসিরনগরের হিন্দু এলাকায় তাণ্ডব এবং কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের গণমাধ্যম জ্ঞান বাড়াতে যাত্রা করা এই ওয়েবসাইটটি গত এক বছরে বাংলা ভাষায় বহুল প্রচারিত ৭০টি ভুয়া সংবাদের সত্যতা উন্মোচন করে।