কয়েকঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর
2018.06.18
ওয়াশিংটন ডিসি

বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন নিউজ পেপার বিডিনিউিজ টোয়েন্টি ফোর ডট কম “কিছু আপত্তিকর মন্তব্য” প্রকাশ করার দায়ে “সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে” গতকাল রোববার কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা (বিটিআরসি) গতকাল বিকেলে মোবাইল ফোন ও আইআইজি অপারেটরগুলোকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করার পরই বন্ধ হয়ে যায় ওয়েবসাইটি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ তাঁরা এই নির্দেশ সম্পর্কে জানতে পারেন। তবে রাত সাড়ে ৯টার কিছু পরে আবারও সাইটটি চালু হয়।
তবে মোবাইল ফোন ও আইআইজি অপারেটর বরাবর নির্দেশিত চিঠিতে কেন জনপ্রিয় এই পোর্টালটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক তৌসিফ শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত ওই মেইল বার্তায় বলা হয়েছে, কমিশনের সিদ্ধান্তে নিচের লিংকগুলো এখনই ব্লক করার নির্দেশ দেওয়া হলো। ওই লিংকগুলো হলো: https://www.bdnews24.com ও https://m.bdnews24.com|
এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোরের বার্তা সম্পাদক মনিরুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বেনারনিউজকে বলেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত।
“বিটিআরসির সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত হয়েছি। এই সিদ্ধান্তের পেছনে কী কারণ রয়েছে তা আমরা জানি না,” মনিরুল ইসলাম বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিডি নিউজ টোয়েন্টি ফোর বিটিআরসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা জানিয়েছে, সরকারের "উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ" ছিল। টেলিকম অপারেটরদের কাছেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা একই কথা বলেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি) ও চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বেনারনিউজকে বলেন, “বিডি নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডট কম একটি প্রতিবেদনে কিছু আপত্তিকর মন্তব্য প্রকাশ করে। সে জন্য এটি কিছু সময়ের জন্য ব্লক করা হয়। আপত্তিকর মন্তব্য সরিয়ে নেওয়ার পর সাইটটি খুলে দেওয়া হয়েছে।”
তবে বিডি নিউজের কোন প্রতিবেদনে, কী ধরনের “আপত্তিকর মন্তব্য” ছিল সে সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু বলেননি বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এদিকে বিডি নিউজ টোয়েন্টি ফোর বন্ধের ঘোষণা আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন পাঠকেরা। কেউ কেউ এরই মধ্যে হ্যাশট্যাগ দিয়ে ‘ফ্রি বিডি নিউজ টোয়েন্টি ফোর’ শিরোনামে প্রচার চালাতে শুরু করেছেন। কেউ আকারে ইঙ্গিতে সমালোচনা করেছেন এই সিদ্ধান্তের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাকিব আহমেদ তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘সম্মানিত হাই আপসদের বলছি, শুধু বিডি নিউজ কেন, দেশের সব সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দিন। তারপর রাষ্ট্রীয় সংবাদ যন্ত্র বিটিভির মতো আরও কিছু যন্ত্র তৈরি করুন, যেগুলো শুধুই আপনাদের গুণগান গাইবে।”
“কোনো কারণ ব্যাখ্যা না করে আপনি একটি প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দিতে পারেন না। এটা অন্যায়। একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে জনগণ নানাভাবে জড়িত সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা তৈরি করুন,” বলেন রাকিব।
একরাম হোসেন নামের একজন এনজিওকর্মী লিখেছেন, “গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ কি গণতান্ত্রিক আচরণ?”
বন্ধ হয়েছিল ডেইলি স্টারও
১৭ দিন আগে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইট ১ জুন শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বিটিআরসির নির্দেশে বন্ধ ছিল। পরদিন শনিবারের পত্রিকায় দ্য ডেইলি স্টার এ নিয়ে ‘স্টার ব্লকড, আন ব্লকড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, টেকনাফের পৌর মেয়র একরামুল হককে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘মার্ডার ইট ওয়াজ’ একটি পক্ষকে অখুশি করে। ফলশ্রুতিতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ওই প্রতিবেদনটি অনলাইনে ব্লক হয়ে যায়।
এর আগেও ২০১৩ সালে বিএনপিপন্থী সংবাদপত্র আমার দেশ ও ডানপন্থী বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় সরকার।
তবে, সামাজিক মাধ্যমগুলো বিডি নিউজ টোয়েন্টি ফোর আকস্মিকভাবে বন্ধের ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া জানালেও পেশাজীবী সাংবাদিকদের কোনো সংগঠন এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।