নিবন্ধন ছাড়া অনলাইন গণমাধ্যম চলবে না

জেসমিন পাপড়ি
2017.06.19
ঢাকা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। জুন ১৯, ২০১৭।
ফোকাস বাংলা

তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনসহ প্রচলিত অন্যান্য আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেশ কিছু বিধিনিষেধসহ সোমবার জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭-এর খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

এই নীতিমালা অনুযায়ী ইলেকট্রনিক মাধ্যমের মতো দেশের সব অনলাইন গণমাধ্যমও চলবে সম্প্রচার কমিশনের অধীনে। এই কমিশনের কাছে সবাইকে নিবন্ধিত হতে হবে।

অংশীজনদের একটি অংশ মনে করেন, এই নীতিমালা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করবে এবং বিকাশমান এই গণমাধ্যমকে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে ফেলবে। আরেকটি অংশের মতে, যেভাবে বিশৃঙ্খল এই গণমাধ্যম চলছে তাতে নূন্যতম একটি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।

প্রতিষ্ঠিত অনলাইন বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে বেনারকে বলেন, “নীতিমালা না থাকলে যারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের ইচ্ছাই নীতিমালায় পরিণত হয়। কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি হলে, সেটার ভিত্তিতে আলোচনা-সমালোচনা করা যাবে।”

“তবে একটি কমিশন হচ্ছে, যে কমিশনটি রেজিস্ট্রেশন দেওয়া থেকে অনলাইনের বিষয়গুলো নিয়ে ভাববে। কমিশনটিতে সাংবাদিকদের প্রাধান্য যেন থাকে। অর্থাৎ কোনো আমলা যেন এখানে বসিয়ে না দেওয়া হয়,” বলেন তিনি।

এছাড়া পত্রিকার ওয়েজ বোর্ডের মতোই অনলাইন নীতিমালার আলোকে সাংবাদিকদের বেতন ভাতার বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

তবে জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের চিফ নিউজ এডিটর মহিউদ্দিন সরকার বেনারকে বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম একটা পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা হবে। আমরা একটা গাইডলাইন পাব। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে পুরো বিষয়টি ঝুলে গেছে। যা দুঃখজনক।”

তিনি মনে করেন, এই কমিশনের মাধ্যমে অনলাইনের কণ্ঠরোধ হতে পারে।

গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক। নীতিমালা অনুমোদন হওয়ার আগেই তথ্য অধিদপ্তরের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৮০০ অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।

দেশে এখন কয়েকহাজার অনলাইন গণমাধ্যম চলছে কোনওরকম অনুমোদন ছাড়াই। এর পক্ষে–বিপক্ষে মত রয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, দি সেন্সরশিপ অব ফিল্ম অ্যাক্ট, কপিরাইটসহ প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করা যাবে না।

অনলাইন গণমাধ্যম বলতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে ‘হোস্টিংকৃত’ বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র বা ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি ও লেখা বা মাল্টিমিডিয়ার অন্য কোনো রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশি নাগরিক বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে।

ইউটিউব ও অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ এই নীতিমালার আওতায় আসবে না।

নীতিমালা অনুযায়ী, ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধিকরণ) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী ‘ডিক্লারেশন’ দিয়ে যারা ছাপা পত্রিকা প্রকাশ করছে বা সম্প্রচারের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তাদের অনলাইন গণমাধ্যম হিসেবে নতুন করে নিবন্ধন করতে হবে না।

তবে তাদের অনলাইন সংস্করণ বা অনলাইন প্রকাশের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য কমিশনকে জানাতে হবে। নিবন্ধনের জন্য সব অনলাইন গণমাধ্যমকে কমিশনের ঠিক করা ফি দিতে হবে।

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিং করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সচিব বলেন, সম্প্রচার কমিশন গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কমিশন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলবে অনলাইন গণমাধ্যম। কমিশন অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের জন্য একটি অনুসরণীয় নিয়মাবলি তৈরি করবে।

নীতিমালা বলছে, অনলাইন প্রতিষ্ঠানের কোনো তথ্য-উপাত্ত যদি কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের অধিকার ক্ষুণ্ন করে তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে অভিযোগ দিতে পারবে। পরে কমিশন অভিযোগ তদন্ত ও শুনানি করে ৩০ দিনের মধ্যে আদেশ এবং নিবন্ধন সম্পর্কে নির্দেশনা ও জরিমানা করতে পারবে।

নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ববোধ ও সম্পাদকীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এটি সম্প্রচার কমিশনের অনুমোদিত হতে হবে। অনলাইনে সংবাদ, অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন প্রচারে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার নিয়মকানুন প্রযোজ্য হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ভাষণসহ সরকার অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করতে হবে। অশ্লীল, হিংসাত্মক, সন্ত্রাসমূলক এবং দেশীয় সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কোনো তথ্য-উপাত্ত বা দৃশ্য প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করা যাবে না।

উল্লেখ্য, পরবর্তী ধাপে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই নীতিমালাটি চূড়ান্ত করবে তথ্য মন্ত্রণালয়।

“আমরা চেয়েছিলাম অনলাইনের জন্য আলাদা কমিশন করতে। কারণ এই মাধ্যম ও সম্প্রচার মাধ্যমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমাদের খসড়া সংযোজন ও বিয়োজন হয়ে এখন কোন পর্যায়ে চূড়ান্ত হচ্ছে, তা জানি না,” বেনারকে জানান মোস্তাফা জব্বার, যিনি অনলাইন নীতিমালার খসড়া তৈরির প্রক্রিয়ায় জড়িত তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।