প্রবাসী শ্রমিকদের সাথে মালয়েশিয়ার ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণের সমালোচনা: রায়হানকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে
2020.07.27
ঢাকা

করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে প্রবাসী শ্রমিকদের সাথে মালয়েশিয়ার সরকারের ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণের ব্যাপারে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে কারাগারে আটক বাংলাদেশি শ্রমিক রায়হান কবিরকে (২৫) বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে সেদেশের সরকার।
তাঁকে মুক্তি দিতে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থা এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা বিবৃতি দেয়ার দুদিনের মাথায় নারায়ণগঞ্জের ছেলে রায়হান কবিরকে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলো মালয়েশিয়া সরকার।
“তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। দুই একদিনের মধ্যেই তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে আমাদের জানান হয়েছে,” সোমবার বেনারকে বলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ।
দেশে ফেরার পর তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয় না। তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেব?”
“আমরা চাই সমস্যাটির সুন্দর সুরাহা হোক। যাতে দুদেশের সম্পর্কের কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে,” যোগ করেন মন্ত্রী।
গত ৩ জুলাই ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাতার ভিত্তিক আল-জাজিরা টেলিভিশন।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়, মালয়েশিয়া সরকার মুভমেন্ট কনট্রোল অর্ডার ব্যবহার করে মহামারিকালে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।
ওই প্রতিবেদনে রায়হান কবির সাক্ষাৎকার দিয়ে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের প্রতি ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণের বর্ণনা দেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে রায়হার কবিরকে খুঁজতে থাকে মালয়েশিয়ার পুলিশ। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত না করে সেদেশের পুলিশ আল-জাজিরার সাংবাদিকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
গত শুক্রবার রায়হানকে কুয়ালালামপুরের নিকটস্থ সেটাপাক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁর পক্ষে আইনী লড়াইয়ের ঘোষণা দেন মালয়েশিয়ার দুই আইনজীবী।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক খাইরুল জাইমি দাউদ এক বিবৃতিতে জানান, বাংলাদেশি ওই যুবককে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আজীবন তাঁর মালয়েশিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে, এবং তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
সংবাদমাধ্যমে কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবিরের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে শনিবার বিবৃতি দেয় বাংলাদেশের অভিবাসন খাতের ২১টি সংগঠন। রায়হানের নিরাপত্তা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত তাঁর মুক্তি দাবি করে সংগঠনগুলো।
এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন, ঢাকার পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
ওই সংগঠনগুলোর পক্ষে বিবৃতি প্রদানকারী ও ব্র্যাকের অভিভাসন শাখার প্রধান শরিফুল হাসান বেনারকে বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম, এই ঘটনার পর সাংবাদিকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করল মালয়েশিয়া। আল জাজিরার প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় বাংলাদেশি তরুণ মো. রায়হান কবিরের ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে সমন জারি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রশাসন।”
তিনি বলেন, “আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়া কোনো অন্যায় নয়। আর রায়হান কোনো অপরাধও করেননি। অথচ এমনভাবে মালয়েশিয়া বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁকে খুঁজছে যেন তিনি বড় অপরাধী।”
শরিফুল হাসান বলেন, “রায়হান কবির সকল অভিবাসী শ্রমিকদের কণ্ঠস্বর। তিনি সেখান অন্যায়, বৈষম্য তুলে ধরেছেন।”
“আমরা চাই তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসুন। দেশে ফিরে এলে আমরা তাঁর পুনর্বাসনের জন্য কাজ করব,” বলেন শরিফুল হাসান।
এদিকে মালয়েশিয়ার বেসরকারি সংগঠন লইয়ার্স ফর লিবার্টি সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রায়হান কবিরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আজীবন মালয়েশিয়ায় নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কাম্য নয়।
সংগঠনটির মতে, রায়হান কবির কী অপরাধ করেছেন সেটি ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। কর্তৃপক্ষের এহেন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে আল-জাজিরায় কথা বলার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এমন প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
লইয়ার্স ফর লিবার্টি জানায়, “আমরা তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে তিনি বিন্দু পরিমাণে দেশের আইন বিরোধী কোনো কাজ করেননি।”
বিবৃতিতে জানানো হয়, অভিবাসন শ্রমিকদের চলাচল নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তিনি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাত্র। একই রকম অভিযোগ এসেছে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে।
“সুতরাং, কথা বলার দায়ে রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে এমন কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ নেই।”
সংগঠনটি জানায়, রায়হানের কাজের অনুমতি বাতিল করে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ নয়।