ছয় মাস পর বাংলাদেশের জন্য কাতারের শ্রম বাজার উন্মুক্ত

জেসমিন পাপড়ি
2020.02.06
ঢাকা
200206_Qatar_story_1000.jpg কাতারের রাজধানী দোহায় বিদেশি শ্রমিকদের জন্য বানানো আবাসনের রান্নাঘরে খাবার তৈরি করছেন বাংলাদেশি শ্রমিক সোহাগ। ৩ মে ২০১৫।
[এএফপি]

প্রায় ছয় মাস অনানুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ থাকার পরে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। যাতায়াতসহ সকল খরচ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেবে দেশটি। শ্রমিকদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা। মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদও উপস্থিত ছিলেন।

গত - ফেব্রুয়ারি দোহায় দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠকে কাতার বিষয়ে সম্মত হয় বলে জানান সচিব। বৈঠক শেষে দোহার থেকে বৃহস্পতিবারই দেশে ফেরেন তিনি।

সেলিম রেজা বলেন, কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা ২০২২এবং কাতারের ভিশন ২০৩০উপলক্ষে সিকিউরিটি সার্ভিস, সেবা খাত ও অন্যান্য খাতে দেশটিতে ব্যাপক কর্মী চাহিদা রয়েছে। কাতারে বাংলাদেশি কর্মীদের সুনাম ও চাহিদাও ব্যাপক।

তিনি বলেন, “বর্তমানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কাতারে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে আরও অধিক পরিমাণ দক্ষ কর্মী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। বিশেষ করে কৃষি, হসপিটালিটি ও সিকিউরিটি সার্ভিসে কর্মী নেবে তারা।”

প্রবাসী কল্যাণ সচিব বলেন, “কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার কথা তারা জানায়নি, দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিক নেবে কাতার। আমরা কতজন দক্ষ কর্মী দিতে পারছি সংখ্যা তার ওপর নির্ভর করবে। কারণ তাদের চাহিদা অনেক।”

এ ছাড়া কাতার জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন দেশ থেকে সাত হাজার চালক নেবে। বাংলাদেশ থেকে তারা দেড় হাজার চালক নেবে। ফিফা বিশ্বকাপে দেশটিতে প্রচুর বিদেশি অতিথি আসবে বলে ইংরেজি জানা গাড়ি চালকদের চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছে কাতার,” বলেন তিনি।

নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি

প্রবাসী কল্যাণ সচিব বেনারকে বলেন, ‘ফিফা ২০২২এবং ভিশন- ২০৩০র মতো মেগা প্রজেক্ট এবং মেগা ইভেন্ট বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে কাতার। তারাই মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ যারা সেখানে বিশ্ব শ্রম সংস্থার (আইএলও) অফিস করার অনুমতি দিয়েছে।

সেলিম রেজা বলেন, “কাতার শ্রমিকদের অধিকার, সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে শুধু নিরাপত্তা নয় বাংলাদেশি শ্রমিকদের সব ধরনের অধিকার দেশটি রক্ষা করবে বলে আমরা মনে করি।

কাতারের বাজার উন্মুক্ত হওয়ার খবরটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সুখবর বলে মন্তব্য করছেন বাংলাদেশের অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে যেকোনো দেশের তুলনায় কাতারের কর্মপরিবেশ ভালো বলেও মত দিয়েছেন তাঁরা।

ব্র্যাকের অভিবাসন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বেনারকে বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে কাতার অর্থনীতির দিক থেকে প্রধান হতে চায়। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে তারা শ্রমিকদের জন্য হটলাইন, মানবাধিকার কমিশন গঠনসহ ধারাবাহিকভাবে নানা ধরনের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে এসেছে।

যার বেশির ভাগই ইতিবাচক। কাতার মূলত বিশ্বকে দেখাতে চায় তারা বিদেশি কর্মীদের সব ধরনের নিরাপত্তা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন,” বলেন তিনি।

শরিফুল হাসান বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশের তুলনায় কাতারে বিদেশি শ্রমিকদের বেতন ভালো, আমাদের কর্মীদের কাছ থেকে অভিযোগও কম আসত। কাতারের মতো পরিস্থিতি মধপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে হলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বেনারকে বলেন, নিঃসন্দেহে মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশের তুলনায় কাতারের কর্মপরিবেশ ভালো।

কারণে কাতারের বাজারটি উন্মুক্ত হয়েছে এটা আমাদের জন্য বিরাট সুখবর। বায়রা এটাকে স্বাগত জানায়। এখন যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে মন্ত্রণালয় ও বায়রা সমন্বিতভাবে কাজ করব যাতে সম্ভাবনার এ বাজারটি আর বন্ধ না হয়,” বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, কাতারে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে গিয়ে গত কয়েক বছরে শুধু নেপালেরই অন্তত ১৪০০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানায় জার্মানভিত্তিক পাবলিক ব্রডকাস্টার ওয়েস্টডাশ্চার রান্ডফাঙ্ক কোল (ওয়াইডিআর)।

গত বছর জুনে ট্র্যাপড ইন কাতার’ শিরোনামে প্রকাশিত তথ্যচিত্রভিত্তিক ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়, কীভাবে নির্মাণাধীন ভবনগুলোর ভেতরেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন শ্রমিকরা। তাদের নিরাপত্তার জন্য ন্যূনতম ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ।

তবে এ ধরনের দুর্ঘটনায় কাতারে কতজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে সে হিসেব নেই বলে জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

খরচ দিয়ে কর্মী নিয়ে যাবে কাতার

প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে কাতার যেতে সরকার নির্ধারিত খরচ সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭৮০ টাকা। তবে ভবিষ্যতে যাতায়াতসহ সব ধরনের খরচ দিয়ে কাতারের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী নিতে আগ্রহী।

বাংলাদেশি কিছু কর্মী মিলে মিছিল, মিটিং করা, একজন নেপালি কর্মী বাংলাদেশি কর্মীর হাতে নিহত হওয়া- এমন ছোটখাটো বেশ কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে মাস ছয়েক আগে কাতার বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় বলে জানান বায়রা মহাসচিব।

এদিকে প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা জানান, “কাতার কোনো দেশ থেকে অদক্ষ কর্মী নেবে না। তাদের এখন বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ কর্মী দরকার। তারা সরকারি ডেটাবেইস থেকে কর্মী নিতে আগ্রহী।

আমরা জানিয়েছি সহসাই জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডেটাবেইসটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হবে এবং ওই ডেটাবেইস থেকে কাতার গমনেচ্ছু কর্মীদের নির্বাচন করা হবে,” বলেন প্রবাসী কল্যাণ সচিব।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে শুধু ঢাকা জেলায় বিদেশ গমনেচ্ছুক কর্মীদের নিবন্ধন শুরু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে ২৩ হাজার কর্মী নিবন্ধন করেছেন। আগামী মাসে সারা দেশে নিবন্ধন শুরু করা হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সাল থেকে কাতারে কর্মী পাঠানো শুরু করে বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।