ভূমধ্যসাগরে ভাসছেন ৬৪ বাংলাদেশি
2019.06.12
ঢাকা

ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে ৬৪ বাংলাদেশিসহ ৭৫ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছিল মিসরের একটি নৌযান। এরপর পেরিয়ে গেছে ১২ দিন। কিন্তু সেই ৭৫ জন এখনো সাগরেই রয়েছেন।
রেড ক্রিসেন্ট গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষ নৌযানটিকে তীরে ভেড়ার অনুমতি দিচ্ছে না। আবার ভাসমান অভিবাসী দলটাও দাবি জানিয়েছে তাঁদেরকে ইউরোপ যেতে অনুমতি দেবার।
লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সেকান্দার আলী ত্রিপোলি থেকে বুধবার টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “১২-১৩ দিন ধরে সাগরে ভেসে থাকার কারণে ওই অভিবাসীদের অবস্থা এখন খুব খারাপ। তবুও তারা খাবার এবং চিকিৎসা সেবা প্রত্যাখান করে ইউরোপে ঢুকতে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে।”
“মানবপাচারকারীদের হাতিয়ে নেওয়া অর্থ বা তামাম কষ্ট জলে যাবে তা মেনে নিতে পারছে না তারা,” বলেন এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, তিউনিসিয়ায় দূতাবাস না থাকায় গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত লিবিয়ার ত্রিপোলি দূতাবাসের মাধ্যমেই সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে বাংলাদেশ।
লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ওই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। গত ৩১ মে তিউনিসিয়ার জলসীমায় তাঁদের উদ্ধার করে মিসরীয় নৌযানটি। যদিও তাঁদের ঠিক কোন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তারা জানান, তিউনিসিয়ার মেডিনিন রাজ্য সরকার নৌকাটিকে তীরে আনার অনুমতি দিচ্ছে না। তারা বলছে, নতুন কাউকে নেওয়ার মতো জায়গা তাদের অভিবাসী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় নেই।
এ রাজ্যের উপকূলীয় শহর জার্জিস থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরেই নৌকাটি রয়েছে।
অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড়ানো এই দুর্ভাগাদের ৬৪ জনই বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রদূত শেখ সেকান্দার আলী।
তিনি বলেন, “নৌকাটিতে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি মরক্কো, সুদান এবং মিশরের মানুষও রয়েছেন। আমরা সবগুলো দেশ একত্রে তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে সবাইকে ডাঙায় নেওয়া হয়।”
“আমাদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে তিউনিসিয়ার সরকার ও রেড ক্রিসেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
রাষ্ট্রদূতের দাবি, বিষয়টি অবগত হওয়া মাত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন নৌকায় অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টার নির্দেশ দিয়েছেন।
রয়টার্স জানায়, গত ১০ মে এই তিউনিসীয় উপকূলে নৌকা ডুবে কমপক্ষে ৩৭ বাংলাদেশিসহ অন্তত ৬৫ অভিবাসীর মৃত্যু হয়। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের প্রথম চার মাসে এই পথে ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সাগরপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয় বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
রয়টার্স বলছে, লিবিয়ার পশ্চিম উপকূল ইউরোপের উদ্দেশে আফ্রিকান অভিবাসী পাচারের প্রধান ট্রানজিট হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে ইতালির নেতৃত্বে পাচার বিরোধী প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। লিবিয়ার কোস্টগার্ডের সহায়তা সত্ত্বেও পাচারকারীদের থামানো যাচ্ছে না।
প্রলুব্ধ করে স্বজনরাও
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) গবেষক ড. জালাল উদ্দিন শিকদার বেনারকে বলেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যারা এভাবে যাচ্ছে, তাদের আত্মীয়-স্বজন ইউরোপে আগে থেকেই আছে। প্রথমত তারাই এদের প্রলুব্ধ করে। বলে তুই শুধু আয়, আমি চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।”
এমন স্বজনদের পাশাপাশি পেশাদার মানবপাচারকারীদের প্রলোভনের শিকার হওয়া বহু বাংলাদেশি ব্রাজিলের কারাগারে, পানামা ও নিকারাগুয়ার জঙ্গলে আটকে আছে দাবি করে এই গবেষক বলেন, যদিও সরকার এই তথ্য মানতে চায় না।
ওদিকে তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট কর্তারা জানিয়েছেন, নৌকার ওই ৭৫ জনের ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত জানতে পারেননি তাঁরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সংস্থার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক এনায়েতুল্লাহ একরাম পলাশ বেনারকে বলেন, “তিউনিসিয়া থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো বার্তা আসেনি।”