নিউইয়র্কে বোমা হামলা: প্রতিবেশীরা বললেন হামলাকারী বাংলাদেশি ছিল ‘উদ্ভট’ ও ‘উগ্র’
2017.12.11
ওয়াশিংটন ডিসি

আপডেট: ১১ ডিসেম্বর, ইস্টার্ন টাইম জোন সন্ধ্যা ০৬:৩০
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বোমা হামলাকারী বাংলাদেশি আকাইদ উল্লাকে তাঁর প্রতিবেশীরা ‘উগ্র’ ও ‘উদ্ভট’ হিসেবে বর্ণনা করলেও এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততায় তাঁরা বিস্মিত।
নিউইয়র্ক শহরের টাইমস স্কয়ারের কাছে পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে সোমবার সকাল সাতটা বিশ মিনিটের দিকে ওই বোমা হামলার ঘটনায় আকাইদ উল্লাকে (২৭) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এতে হামলাকারীসহ চারজন আহত হন।
এক বিবৃতিতে নিউইয়র্ক পুলিশের কমিশনার জেমস ও’নিল জানান, “ঘটনাস্থলের অনুসন্ধান থেকে এটা বোঝা যায় যে ওই ব্যক্তি তাঁর শরীরের সাথে বিস্ফোরক বহন করছিল। সে স্বেচ্ছায় ওই বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই ঘটনায় আশপাশের আরো দুজন সামান্য আহত হন।”
“সে খুব একটা সামাজিক ছিল না। অনেকটা উগ্রই ছিল,” বেনারকে বলেন আকাইদের দীর্ঘ দিনের প্রতিবেশী আলান বুটরিকো।
“সে প্রায় সময়ই আমার গাড়ির রাস্তা বন্ধ করে রাখত,” বলেন তিনি।
আকাইদ গত সাত বছর ধরে তাঁর প্রতিবেশী বলে বেনারকে জানান ব্রুকলিনের ফ্লাটল্যান্ডস এর হার্ডওয়্যার ও তালা মেরামতি দোকানের মালিক বুটরিকো।
তিনি বলেন, “সে যখন তার গাড়ি দিয়ে আমার রাস্তা বন্ধ করে রাখত, তখন আমি তাকে গাড়ি সরাতে বললে সে এমন ভাব করত যেন মনে হতো সে আমাকে দয়া করছে।”
ওই এলাকায় গত ২৭ বছর ধরে বসবাসকারী বুটরিকো জানান, আকাইদ এর আগে ট্যাক্সি ড্রাইভার ও ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করত।
তবে বোমা হামলায় আকাইদের সম্পৃক্ততায় তিনি বিস্মিত বলে জানান।
তিনি বলেন, “আমি ভাগ্যবান যে সে আমার দোকান উড়িয়ে দেয়নি। আমার কপাল ভালো যে সে ম্যানহাটন গেছে।”
এদিকে আকাইদের বাড়ির কাছে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে কাজ করা কেট মারিয়া তাঁকে “খুবই গোটানো স্বভাবের” বলে বেনারের কাছে বর্ণনা করেন।
“সে সব সময় এক ধরনের ঘোরের মধ্যে থাকত। মনে হতো সব সময় সে কিছু নিয়ে চিন্তা করছে,” বেনারকে বলেন ৬৩ বছরের কেট মারা।
তিনি তাঁকে প্রায়ই তাঁর অফিস থেকে রাস্তার ওপাশের দোকানে দেখতেন বলে বেনারকে জানান।
“সে খুবই গোটানো স্বভাবের। আমি তাকে হ্যালো বললে সে উত্তরে কিছুই বলত না। সে একটু বিকট ধরনেরই ছিল,” বলেন কেট মারা।
আকাইদ একটি দোতলা বাড়ির নিচের তলায় বাবা, মা ও ভাইয়ের সাথে বসবাস করত বলে প্রতিবেশীরা জানান।
বাংলাদেশে কোনো অপরাধের তথ্য নেই
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক এর বরাত দিয়ে আকাইদ উল্লার বাড়ি চট্টগ্রাম বলে জানিয়েছে।
আকাইদের পাসপোর্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে আইজিপি রয়টার্সকে জানান, সে সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখ বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছিল এবং বাংলাদেশ তাঁর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কোনো তথ্য নেই।
এদিকে সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস ওইদিন সকালে ঘটা নিউইয়র্কের ঘটনাসহ পৃথিবীর যে কোনো স্থানে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
“একজন সন্ত্রাসীর জাতিসত্ত্বা বা ধর্ম যাই হউক না কেন তার একমাত্র পরিচয় সে সন্ত্রাসী, এবং অবশ্যই তাঁকে বিচারের আওতায় আনা উচিত,” বিজ্ঞপ্তিতে বলেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার প্রেস, শামিম আহমেদ।
তবে এখন পর্যন্ত নিউইর্য়ক পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি বলে হামলাকারীর পরিচয় সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস।
“নিউইয়র্কে আমাদের কনসুলার ডিপার্টমেন্ট নিউইয়র্ক পুলিশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রাখছে, আমরা এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিবেদন পাইনি,” বেনারকে বলেন শামিম আহমেদ।
“আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি যে হামলাকারী একজন বাংলাদেশি। তবে আমরা পুলিশের কাছ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাইনি,” বলেন তিনি।
এদিকে হামলাকারী আকাইদকে বাংলাদেশি জেনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি কাজী নিশাত তারানা বেনারকে বলেন, “এই হামলাকারী কোনোভাবেই বাংলাদেশের শান্তি এবং সহাবস্থানের মহান সংস্কৃতিকে ধারণ করে না।”
“বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়” উল্লেখ করে তারানা বলেন, “পুরো ঘটনায় আমি গভীরভাবে হতাশ। আশা করি, এই ঘটনার ফলে কোনো বাংলাদেশী অভিবাসী কিংবা শিক্ষার্থী কোনো প্রকার হয়রানির শিকার হবেন না।”
তদন্ত চলবে বাংলাদেশেও
বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পরপর তাৎক্ষণিকভাবে টাইম স্কয়ার ও পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালের আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারের নিকটবর্তী এই পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াই লাখের মতো যাত্রী বিভিন্ন দূরবর্তী রুটে যাতায়াত করে থাকেন।
গ্রেপ্তারের সময় আকাইদের কাছ থেকে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ বিস্ফোরণের ডিভাইস উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে স্থানীয় বেলেভু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানান নিউইয়র্ক পুলিশ কমিশনার।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে গাড়ি হামলার ঘটনার ছয় সপ্তার ভেতরেই এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটল।
ওয়ার্ল্ড ট্রেট সেন্টারের কাছে সাইকেল লেনের ওপর পিকাপ ভ্যান চালিয়ে ওই হামলার ঘটনায় আটজন নিহত ও বারো জন আহত হন। পরে হামলাকারী সাইফুল্ল হাবিবুল্লাভিচ সাইপভ পুলিশের গুলিতে আহত হয়।
সোমবার হামলার তদন্ত চলমান রয়েছে বলে বিবৃতিতে জানান নিউইয়র্কের পুলিশ কমিশনার।
“অবশ্যই আমরা তাঁর বিষয়ে তদন্ত করব,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) সোহেলী ফেরদৌস।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী।