ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দুদের ওপর হামলার হোতাকে গ্রেপ্তারের দাবি পুলিশের
2017.01.05

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে দুই মাস আগের ওই ঘটনার প্রধান হোতা বলে দাবি করা হচ্ছে।
আতিকুর রহমান আঁখি নামের ওই ব্যক্তি যুবলীগের জেলা কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে সরকারি দলের সম্পৃক্ততা তাঁদের হতাশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক নির্মল রোজারিও বেনারকে বলেন, “সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগ নেতা জড়িত থাকার বিষয়টি হতাশাজনক। কারণ, আমরা আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখি এবং তারাও আমাদের রাজনৈতিকভাবে রক্ষা করে।” তবে অপরাধী ধরা পড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
রোজারিও বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয় না। সেখানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর আক্রমণের জন্য ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি প্রশংসনীয়।”
এদিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আতিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেন ঢাকার ভাটারা থানার উপপরিদর্শক মো. বাবুল। বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) ইশতিয়াক আহমেদ তাকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যান।
গত ৩০ অক্টোবর রাতে রসরাজ দাস নামে এক যুবকের ফেসবুক থেকে ধর্মীয় অবমাননা করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় রসরাজদের বাড়িও। এরপর আরও চার দফায় হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। যা দেশে বিদেশে নিন্দার ঝড় তোলে।
ঘটনার পরপরই পেশায় জেলে রসরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আঁখিকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “ওই ঘটনায় আটক যারাই স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যান আঁখির নাম এসেছে। এ ছাড়া হামলার জন্য লোক ভাড়া, ট্রাক ভাড়া করার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। সবকিছু বিবেচনা করে মনে হচ্ছে হিন্দু বাড়ি ও মন্দিরে হামলার পেছনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল।”
নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা প্রায় দুই হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে মোট আটটি মামলা হলেও এখন পর্যন্ত একটিরও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
আটটি মামলায় আতিকুরসহ এ পর্যন্ত ১০৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে ওই ঘটনার মূল কারণ হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বন্দ্বকেই দুষছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সাংসদ এবং মৎসমন্ত্রী ছায়েদুল হকের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। মূলত: ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে মন্ত্রী ছায়েদুলকে দল এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে মোকতাদিরের কর্মীরা ওই ঘটনা ঘটায়।
তবে ইউপি সদস্য আতিকুরকে নিজের কর্মী বলে অস্বীকার করেছেন সাংসদ মোকতাদির। তিনি বেনারকে বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সকল আওয়ামী লীগারই আমার কর্মী। আতিকুর বা বিশেষ কেউ আমার কর্মী নয়।” তবে আতিকুর অপরাধী হলে তাঁর বিচার হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।
এদিকে গত ২৮ নভেম্বর জেলা পুলিশের এক প্রতিবেদনে রসরাজের ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকর সেই কথিত ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। জাহাঙ্গীর আলম (৩০) নামে স্থানীয় এক সাইবার ক্যাফের মালিককে ওই ছবি পোস্ট করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
ছবি পোস্ট না করার বিষয়টি প্রমাণ হলেও ঘটনার প্রায় দুই মাস পরেও জামিন পাননি রসরাজ। সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি তার জামিন নামঞ্জুর করেছে আদালত। আগামী ১৬ জানুয়ারি পরবর্তী জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
তবে জাহাঙ্গীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে নিজেকে আতিকুর রহমানের সমর্থক বলে দাবি করেছেন। তিনি আরও জানান, আতিকুরের নির্দেশেই তিনি ট্রাক ভাড়া করেন। ভাড়া বাবদ আতিকুর তাঁকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।