পাবনায় ক্যাথলিক চার্চের নৈশ প্রহরীকে কুপিয়ে জখম
2017.03.10
ঢাকা

বাংলাদেশে আবারও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। গিলবার্ট কস্তা (৬৫) নামের ওই ব্যক্তি পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের ক্যাথলিক চার্চ সাধবী রিতার নৈশ প্রহরী। তিনি উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের লাউতিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্তের দাবি তুলেছেন চার্চ সংশ্লিষ্টরা।
অপরাধ বিশ্লেষকেরাও বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া জঙ্গিরা আবারও নড়েচড়ে বসতে পারে। গত এক সপ্তাহে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে দুটি হামলার ঘটনা ও একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে। তাই কোনো সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন তাঁরা।
এর আগে ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর একই জেলার ঈশ্বরদী ব্যাপ্টিস্ট চার্চের যাজককে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। ২০১৬ সালের ১০ জুন পাবনা জেলা সদরের শ্রী শ্রী অনুকুল চন্দ্র ঠাকুরে আশ্রমে এক সেবায়েতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এরা হলেন; লাউতিয়া গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে রাজীব হক (১৮), আনজিল হোসেনের ছেলে মুরাদ হোসেন (১৮) ও লাল চাঁদ মিয়ার ছেলে ফরিদ হোসেন (১৭)। তিনজনই পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। আহত নৈশ প্রহরী পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নৈশ প্রহরী গিলবার্টের সঙ্গে স্থানীয় যুবকদের শত্রুতার জের ধরেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছে পুলিশ। যদিও চার্চ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, স্থানীয় কিছু বখাটের যোগসাজসে এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে তাঁরা।
স্থানীয়রা জানান, চাটমোহর উপজেলার প্রায় ১০ টি গ্রামের দুই হাজার ৫০০ পরিবার এই চার্চের আওতাভুক্ত। তাঁরা নিয়মিত এখানে যাতায়াত করেন।
আহত নৈশ প্রহরী গিলবার্ট কস্তা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, চার্চের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকার সময় রাত সাড়ে তিনটার দিকে দেয়াল টপকে চার্চের ভেতর প্রবেশ করে ফাদার হাউসের চাবি চায় তিন–চারজন যুবক। চাবি দিতে অস্বীকার করে তাদের বাধা দিতে চাইলে ক্ষিপ্ত যুবকেরা তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে চার্চের অন্য সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
গিলবার্ট কস্তা বলেন, “স্থানীয় কারও সঙ্গে আমার শত্রুতা নেই। তারপরেও কেন এ ঘটনা ঘটেছে আমি জানি না।”
আহত গিলবার্ট কস্তার ছোট ভাই বকুল কস্তা সাংবাদকিদের জানান, “আমার ভাইয়ের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা আছে বলে শুনিনি। দুর্বৃত্তরা ডাকাতি অথবা অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে।”
এ প্রসঙ্গে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আহসান হাবীব বেনারকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে পূর্ব শত্রুতাবশত ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আটক তিন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।”
পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বেনারকে বলেন, “এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই সে বিষয়টি মোটামুটি পরিস্কার। সন্দেহভাজন তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এ বিষয়ে আরো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।”
গিলবার্টের পরিবার এ ঘটনায় একটি মামলা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “মামলার পর গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।”
গীর্জা সংশ্লিষ্টরা জানান, চার্চটির আবাসিক হোস্টেলে প্রায় ২০০ মেয়ে থাকায় বখাটেরা প্রায়ই তাঁদেরকে উত্যক্ত করে। তাঁরাও ঘটনাটি ঘটাতে পারে।
এ বিষয়ে চার্চের আবাসিক হোস্টেলের তত্বাবধায়ক মেরী সেলিনা সাংবাদিকদের বলেন, “এর আগেও আমরা বখাটেদের শিকার হয়েছি। এমনকি বেশ কিছু বখাটেকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।”
তবে এ ঘটনার সঙ্গে দেশের বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি তৎপরতার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে—এমন আশঙ্কা উড়িয়ে না দিয়ে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্তের আহবান জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজান বেনারকে বলেন, “সম্প্রতি জঙ্গিরা কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। এটা তার অংশ কিনা সেটি সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি।”
তাঁর মতে, সম্প্রতি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নব্য জেএমবির দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। এই ফাঁকে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমসহ নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো ফের সক্রিয় হতে পারে।