পাহাড়ধসে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, এখনো অনেকে নিখোঁজ

জেসমিন পাপড়ি
2017.06.14
ঢাকা
বান্দরবান শহরের আগাপাড়া এলাকায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে সেনা বাহিনী। বান্দরবান শহরের আগাপাড়া এলাকায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। জুন ১৪, ২০১৭।
ফোকাস বাংলা

চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলায় পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৫ জনে পৌঁছেছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। তাঁদের সন্ধানে বুধবার সকাল থেকে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাঙ্গামাটিতে ১০০ জন, চট্টগ্রামে ২৯ জন, বান্দরবানে ৬ জন, কক্সবাজারে দুজন এবং খাগড়াছড়িতে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে গাছ চাপা, দেয়াল চাপা ও পানিতে ভেসে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে মাঠ থেকে এসব তথ্য পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত সেনাবাহিনীর চার সদস্যসহ মৃতের সংখ্যা ১২৬ বলে জানানো হয়।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার থেকে দেশের দক্ষিণ পূর্বের জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। বুধবারও পার্বত্য এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবারও ভূমিধসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস।

রাঙ্গামাটির সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি আসার তিনটি রাস্তা রয়েছে। তিনটি সড়কই পাহাড় ধসে বন্ধ হয়ে গেছে।

গত মঙ্গলবার পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির অন্তত ৩০টি স্থানে পাহাড় ধসে মারা গেছেন ১০৫জন। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮২ জন। এই ৩০ স্থানের বাইরে আরও অসংখ্য এলাকায় পাহাড় ধসে পড়েছে। ধ্বংসের পরিমাণ এমনই যে, উদ্ধার তৎপরতা চালানোর পর্যাপ্ত ক্ষমতাও নেই স্থানীয় প্রশাসনের। তাই চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ৬০ জনের উদ্ধারকারী দল।

পাহাড় ধসের দ্বিতীয় দিনে বান্দরবান শহরের আগাপাড়া এলাকায় মৃতদেহের সন্ধানে প্রশাসনের অভিযান। জুন ১৪, ২০১৭।
পাহাড় ধসের দ্বিতীয় দিনে বান্দরবান শহরের আগাপাড়া এলাকায় মৃতদেহের সন্ধানে প্রশাসনের অভিযান। জুন ১৪, ২০১৭।
ফোকাস বাংলা
চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বেনারকে বলেন, কল্পনার চেয়েও বেশি ধ্বংস্তুপ দেখা গেছে রাঙ্গামাটিতে। প্রশাসনকে উদ্ধারকাজে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে ফায়ার সার্ভিস।

তিনি জানান, ধংসস্তুপ খুঁড়ে কিছুক্ষণ পর পর বের করে আনা হচ্ছে লাশ। লাশ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের আহাজারি আর আর্তনাদ।

সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলো জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত তিন জেলায় ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে চার থেকে সাড়ে ৪ হাজার মানুষকে রাখা হয়েছে।

রাঙ্গামাটির বেদ বেদি এলাকায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত ভুক্তভোগী রুপন মল্লিক বেনারকে জানান, “আমার পরিবারে ১১ জন সদস্য ছিল। আমার ছোট ভাই লিটন মল্লিক তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে সোমবার ভোরে পাহাড়ধসে চাপা পড়ে। অনেক কষ্ট করে আমরা বের হতে পেরেছি, কিন্তু এখন আমরা নিঃস্ব। নিজের ভাই, তিল তিল করে জমানো সংসার সবকিছুই মাটির নিচে চলে গেছে।”

রাঙ্গামাটির পরিস্থিতি বর্ণনা করে স্থানীয় সাংবাদিক সুশীল চাকমা বেনারকে জানান, “বুধবার দিনভর রাঙ্গামাটির বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। তবে এর মধ্যেই সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। এখনো চট্টগ্রামের সঙ্গে জেলার যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি সবকিছুই বন্ধ। দুর্গতরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।”

৫০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা

বুধবার পার্বত্য এলাকার পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর জন্য জরুরি মুহূর্তে ৫০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ বান্ডিল টিন সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন।

সবার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপাতত নিহতদের পরিবারকে ৩০ হাজার করে টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।