অলিম্পিকে বাংলাদেশ: প্রথম শত্রু কভিড, এরপর প্রতিপক্ষ
2021.07.19
ঢাকা

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়ার আসর অলিম্পিক গেমসে প্রথমবারের মতো অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধেও লড়তে হচ্ছে প্রতিযোগীদের। এবার পদক জিততে হলে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের আগে করোনাভাইরাসকে হারাতে হবে তাদের।
এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ছয় প্রতিযোগীও খেলার আগেই হেরে যাওয়ার শঙ্কা নিয়েই অলিম্পিক যাত্রা শুরু করেছেন।
“আমার দুশ্চিন্তা শুধু একটাই, কোনোভাবে যদি করোনায় আক্রান্ত হই, তবে প্রতিযোগিতা থেকে এমনিই ছিটকে যেতে হবে। এটাই শুধু ভয়ের,” টোকিওর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের আগে বেনারকে বলেন বাংলাদেশি আর্চার (তীরন্দাজ) মো. রোমান সানা।
“শুধু আর্চারদের নয়, সব খেলোয়ারেরই স্বপ্ন থাকে তাঁর গলায় একদিক অলিম্পিক পদক থাকবে। আমিও এই স্বপ্ন নিয়েই খেলার জগতে এসেছি। তবে যেহেতু এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা, এখানে পদক অর্জন করাটা মোটেই সহজ হবে না। তবে আমি আশাবাদী, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা,” বলেন বাংলাদেশকে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য এনে দেওয়া সানা।
কোভিড পরিস্থিতির কারণে এক বছর পিছিয়ে যাওয়া টোকিও অলিম্পিক মাঠে গড়াচ্ছে আগামী ২৩ জুলাই। গ্রীষ্মকালীন এই অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশে কোভিড সংক্রমণের হার বেশি তাদের ব্যাপারে বাড়তি বিধিনিষেধ জারি করেছে আয়োজক দেশ জাপান।
“বাংলাদেশও এমন দেশের তালিকায় থাকায় আমাদের প্রতিযোগী, কোচ এবং সফরকারী কর্মকর্তাদের অনেক বিধিনিষেধ মেনে টোকিওতে যেতে হচ্ছে। সেখানে অবস্থানকালেও আমাদের অনেক নিয়মকানুন মানতে হবে। প্রতিদিন প্রত্যেকের কোভিড পরীক্ষা করা হবে,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধাক্ষ্য কাজী রাজিব উদ্দিন চপল।
তিনি জানান, অলিম্পিক উপলক্ষে এবার মোট ১৮ বাংলাদেশি জাপানে যাবে। এর মধ্যে ছয়জন প্রতিযোগী, পাঁচজন কোচ ও সাতজন কর্মকর্তা। সেখানে পৌঁছানোর পর সবাইকে তিনদিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
“আমাদের সবাইকে দুই ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন নিতে হয়েছে, এটা বাধ্যতামূলক ছিল। যাওয়ার আগে আমাদের সাতদিন দুই দফা করে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার পাশাপাশি টানা তিনদিন কোভিড পরীক্ষা করে নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হচ্ছে,” বলেন চপল।
কোভিড বিষয়ক বিধিনিষেধ মেনেই চলতি বছরের মে মাসে সুইজারল্যান্ডের লুসানে আর্চারি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে এবং জুনে ফ্রান্সের প্যারিসে আর্চারির ফাইনাল কোয়ালিফিকেশন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে রোমান সানা বলেন, “এই নতুন বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতেই হবে।”
“বিধিনিষেধের কারণে সমস্যা নেই। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি আসলে। আমার খেলায় অন্তত এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব থাকবে না,” বলেন সানা।
ন্যাশনাল অলিম্পিক একাডেমির পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান সিদ্দিকী বেনারকে বলেন, “করোনার ভয়ে প্রতিযোগীদের মানসিক চাপে থাকা উচিত না। কারণ আয়োজকেরা যথেষ্ট প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।”
“খেলোয়াড়দের প্রত্যেককে নিজ নিজ ভেন্যুর কাছাকাছি হোটেলে রাখা হবে। তারা বাইরে যেতে পারবে না। কারো সাথে মেলামেশা করতে পারবে না,” বলেন তিনি।
সিদ্দিকী আরো বলেন, “বেইজিং, সিডনি, রিও ডি জেনারিও অলিম্পিকের সময় এক রুমে দুইজন প্রতিযোগীও রাখা হয়েছিল। কিন্তু এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রত্যেকে আলাদা রুমে থাকবে। তাদের খাবারও রুমেই পরিবেশন করা হবে। তারা কোনওভাবেই কোন পাবলিক প্লেসে যেতে পারবে না।”
টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিতে আসা চেক প্রজাতন্ত্র ভলিবল দলের সদস্য ওন্দ্রে পেরুসিচের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে সোমবার এক বিবৃতিতে অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে। এর আগে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৭ বছর বয়সী টেনিস খেলোয়াড় কোকো গাউফ।
বাংলাদেশি প্রতিযোগীদের মধ্যে শুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকি, আর্চার রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দীকি শুক্রবার টোকিওর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। অ্যাথলেটিক্সের ৪০০ মিটারে অংশ নিতে জহির রায়হান রওনা দেবেন ২৫ জুলাই।
এ ছাড়া বাংলাদেশি দুই সাঁতারুর মধ্যে আরিফুল ইসলাম ১৮ জুলাই প্যারিস থেকে এবং ২৬ জুলাই জুনাইনা আহমেদ লন্ডন থেকে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া কথা রয়েছে।
১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে বাংলাদেশের অলিম্পিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তী নয়টি অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়ে কোনো পদক পায়নি বাংলাদেশ।
“নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে বাংলাদেশি প্রত্যেক প্রতিযোগীই টোকিও অলিম্পিকে ভালো করবে বলে আমি বিশ্বাস করি,” বেনারকে বলেন চপল।
গত বুধবার বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, “এই মুহূর্তে সুস্থ থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তারা (প্রতিযোগীরা) সুস্থ থেকে সেরাটা উজাড় করে দিতে পারবে।”