পদ্মা সেতু প্রকল্প: মিথ্যা অভিযোগকারীদের আইনের আওতায় নিতে আদালতের রুল


2017.02.15
ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। জানুয়ারি ২৫, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তৈরির নেপথ্যে থাকা প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে রুল জারি করেছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে তাদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জারি করা ওই রুলে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না—তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিটি বা কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না—সরকারের কাছে তাও জানতে চেয়েছে আদালত।

তবে তথ্য প্রমাণ থাকলে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের ‍মুখোমুখি করা যথার্থ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। অকারণে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেন ‘টার্গেটের’ শিকার না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “যদি কেউ অন্যায় করে থাকে, তাহলে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হোক। তবে এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে কাউকে হেনস্তা করা ঠিক হবে না। এতে যেন কারো বাক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন না হয়, কারো কণ্ঠ যাতে রোধ না হয়।”

গত শুক্রবার কানাডার আদালতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় সমালোচকদের দিকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে সরকার। এই রায়ে সরকারের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হয়েছে মনে করা হচ্ছে।

সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ আদালতে যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ঘুরেফিরে আসছে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন নাম, যিনি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর মন্ত্রীত্ব হারান। আরেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি হলেন বর্তমান শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ওই অভিযোগ ওঠার পর। তবে তাদের দুজনের কেউই মামলা করছেন না।

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদে সাধারণ আলোচনা হবে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সংসদীয় কমিটিতে ডেকে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারের মন্ত্রী–সাংসদদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বেনারকে বলেন, “দুর্নীতির অভিযোগ তোলা বিশ্বব্যাংক এবং এ দেশের কিছু ব্যক্তিকে সংসদীয় কমিটিতে ডেকে পাঠানো হতে পারে। জাতীয় সংসদে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ আলোচনা হবে।”

তিনি বলেন, সরকা​রের পক্ষ থেকে কিছু একটা করার জন্য সরকারি দল ও শরিকদের পক্ষ থেকে চাপ আছে।

দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করতে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক, সরে যায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্য দাতারাও। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছে বাংলাদেশ।

এরই মধ্যে বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, যোগযোগ সচিব, দুদক চেয়ারম‌্যান ও আইজিপিকে বিবাদী করে রুল জারি করেছে আদালত। দুই সপ্তাহের মধ‌্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজতে কমিটি বা কমিশন গঠনে কী উদ‌্যোগ নেওয়া হয়েছে—৩০ দিনের মধ‌্যে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

“মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাবে ‘ইউনূসের বিচার দাবি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনের সঙ্গে আরও কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত এই রুল জারি করেছেন। আগামী ২০ মার্চ এ বিষয়ে পরবর্তি শুনানি হবে,” বেনারকে জানান ডেপুটি অ‌্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

পদ্মা সেতুর রায়ের পর সরকারের ভাবনা নিয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, “কানাডার আদালতের রায়ে সরকারের সততা ও স্বচ্ছতা প্রমাণ হয়েছে। তবে যারা দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগ এনেছিল ও এ সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছিল তাদেরকে সংসদীয় কমিটিতে ডাকা ও এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।”

তবে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে, এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়, এমন কিছু করা উচিত হবে না। কেননা আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় দাতা বিশ্বব্যাংক।”

পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করলেও অন্যান্য প্রকল্পে এর চেয়ে বেশি অর্থসহায়তা বিশ্বব্যাংক দিয়েছে উল্লেখ করে ওই অর্থনীতিবিদ বলেন, “২০০৯–২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বছরে বিশ্বব্যাংকের গড় সহায়তা ছিল ৪২০ মিলিয়ন ডলার। ২০১৪-২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪০ মিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ তে আরো বেশি সহায়তা আসবে। সুতরাং এই সহায়তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।