বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু, মানবপাচার বন্ধের আশবাদ
2020.01.22
ঢাকা

ভুয়া পাসপোর্ট রোধ ও পাসপোর্ট জালিয়াতি বন্ধ করতে বাংলাদেশ চালু করল ই-পাসপোর্ট। বুধবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ই-পাসপোর্ট চালুর ফলে জাল কাগজপত্র দিয়ে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরির মাধ্যমে মানবপাচার বন্ধ করা সম্ভব হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যে পাসপোর্টটা দিতে যাচ্ছি এটা বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট। সেখানে একজন পাসপোর্ট যে গ্রহণ করবে তার ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের কর্নিয়া থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যা ছিল। একসময় গলাকাটা পাসপোর্টও প্রচলিত ছিল। সেটা আর কখনো হবে না। এখন আর মানুষ ধোঁকায় পড়বে না।
“১১৮টি দেশে ইতিমধ্যে ই–পাসপোর্ট প্রবর্তন হয়ে গেছে। কাজেই বাংলাদেশ এখন হলো ১১৯তম দেশ। আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুনিম হাসান বেনারকে বলেন, “বর্তমানে আমরা যে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দিয়ে থাকি সেগুলো ভালো। তবে আমরা দেখছি জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া পাসপোর্ট ইস্যু হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ভুয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে মানবপাচার করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পর জালিয়াতির সুযোগ থাকবে না। ই-পাসপোর্টে পাসপোর্টধারীর সকল বায়োমেট্রিক তথ্য, চোখের আইরিসসহ সকল প্রয়োজনীয় তথ্য একটি চিপসে সংরক্ষিত থাকবে। চিপসটি পাসপোর্টের মধ্যে থাকবে।”
“এর ফলে বাংলাদেশিরা দেশে-বিদেশে বিমানবন্দরে খুব সহজে অভিবাসন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবেন। আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না,” বলেন মুনিম হাসান।
অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ওয়ারবি ফাউন্ডেশনের প্রধান সৈয়দ সাইফুল হক বেনারকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিদেশে জাল বাংলাদেশি পাসপোর্ট শনাক্ত হওয়ার কারণে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা বিভিন্ন বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, হাতে লেখা ভুয়া ও গলাকাটা পাসপোর্ট ব্যবহার করে কিছু অসাধু জনশক্তি রপ্তানিকারক মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের পাঠিয়েছে বলে বিভিন্ন সময় ধরা পড়েছে। সেকারণে বাংলাদেশি সবুজ পাসপোর্ট দেখলে হয়রানি হতে হয়।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে ২০১০ সাল থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দিতে শুরু করে বাংলাদেশ সরকার। তবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও জালিয়াতি শুরু করেছে মানবপাচার চক্র।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রবেশের পর ভুয়া পাসপোর্ট তৈরির তৎপরতা বেড়ে গেছে। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ভুয়া পাসপোর্ট বানিয়ে মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের পাচারের চেষ্টায় তৎপর পাচারকারীরা।
কক্সবাজার জেলা থেকে বেশ কয়েকটি ভুয়া পাসপোর্ট তৈরির ঘটনা ধরা পড়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট না পায় সেব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যারা এমন কাজের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “ই-পাসপোর্ট চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশিদের আর বিমানবন্দরে হয়রানি হতে হবে না। আমরা এখন বিশ্বের যে কোনো উন্নত দেশের মতো নিরাপদ পাসপোর্ট দেবো।”
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এ বছর ঢাকা থেকে ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে। আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে তা সারা দেশে বিস্তৃত করা হবে।
মালয়েশিয়া ফেরত পাবনার সাথিয়া উপজেলার মোখলেছুর রহমান বেনারকে বলেন, “আমি বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় যাই। সেখানে যাওয়ার পর বিমানবন্দরে বিশ্বের সব দেশের নাগরিককে এক দিকে, আর আমিসহ বাংলাদেশিদের আলাদা করে মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা। তারা আমাদের প্রত্যেককে অনেক সময় ধরে জেরা করে। পরে ঢুকতে দেয়।”
তিনি বলেন, “বিদেশে আমাদের পরিচয়, বাংলাদেশি পাসপোর্ট মানেই জাল পাসপোর্ট। ই-পাসপোর্ট এ ধরনের ইমেজ সংকট থেকে বাংলাদেশিদের রক্ষা করবে।”
ই-পাসপোর্ট তৈরিতে জার্মান একটি প্রতিষ্ঠান কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। আবেদনকারীরা চাইলে নির্ধারিত ফি দিয়ে ১০ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট নিতে পারবেন।