নির্বাচনের বছরে মন্ত্রিসভায় আকস্মিক রদবদল
2018.01.03
ঢাকা

সরকারের শেষ সময়ে এসে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল আনা হয়েছে। মঙ্গলবার নতুন তিনজন মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন। এর পরদিনই বুধবার মন্ত্রিসভার পুরোনো চার সদস্যের মধ্যে দপ্তর পূনর্বণ্টন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস জানিয়েছে, প্রশাসনকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে মন্ত্রিসভায় এই রদবদল আনা হয়েছে। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে এই রদবদলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, আসছে নির্বাচনের আগে এটাই হয়তো মন্ত্রিসভায় শেষ রদবদল।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “মূলত মন্ত্রিসভার কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত কিংবা দায়িত্বে রদবদল করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিবেচনাও কাজ করেছে। এসব বিবেচনায় নিয়েই হয়তো মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়িয়ে দায়িত্ব পূর্ণবণ্টন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আশা করি এর মাধ্যমে সরকারের কাজে গতিশীলতা বাড়বে।”
“নির্বাচনকে সামনে রেখে যেসব অঞ্চলে মন্ত্রী নেই, মন্ত্রিসভায় সেসব এলাকার প্রতিনিধিত্ব রাখার জন্যই নতুন সদস্যদের যোগ করা হতে পারে,” মনে করেন তিনি।
তবে এই রদবদল মন্ত্রিসভার দক্ষতায় খুব বড় ধরনের কোনো ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন না সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান।
তিনি বেনারকে বলেন, “সামনে জাতীয় নির্বাচন। শেষ মুহূর্তের এই রদবদলের পেছনে রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ রয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগে আগে এসব মন্ত্রী যদি ভালো পারফরমেন্স দেখাতে পারেন, তবে তা ভোটারদের মনে দাগ কাটতে পারে, পরিবর্তনের পেছনে এমন আশা হয়তো রয়েছে।”
নতুন সদস্য যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও ৩৩ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৩ জনে। এ ছাড়া মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর আরও ছয়জন উপদেষ্টা রয়েছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের জয়ী হওয়ার পরে ১২ জানুয়ারি ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী নিয়ে ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করে যাত্রা শুরু করেছিল বর্তমান সরকার। এরপর কয়েক দফায় মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ানো হয়।
কার কোন মন্ত্রণালয়
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার, লক্ষ্মীপুরের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল এবং রাজবাড়ীর সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী।
এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দপ্তর বণ্টনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়েও রদবদল আনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেসব মন্ত্রীর দপ্তর বদলেছে, তারা সবাই সরকারের শরিক দলের নেতা।
বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রুলস অফ বিজনেস, ১৯৯৬ এর রুল ৩ (রা) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এসব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন ও পুনর্বণ্টন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নতুন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালকে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সরকারের শুরু থেকেই এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করে তাঁকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরকারের শুরুতে মন্ত্রিসভা গঠনের সময় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এবার তাকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে এই দায়িত্ব পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির (এরশাদের) প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তাঁকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
টেকনোক্রেট মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার পেয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আর ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা তারানা হালিমকে পাঠানো হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। আওয়ামী লীগের এই একজন সদস্যের দায়িত্বে পরিবর্তন হয়েছে।
গত মাসে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মুহাম্মদ ছায়েদুল হক। শূন্য এ পদটির দায়িত্ব পেয়েছেন প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
নতুন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া কাজী কেরামত আলীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া রাশেদ খান মেনন বেনারকে বলেন, সামনে নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, “পর্যটন খাতে সুদিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছিলাম। এটা হয়তো অব্যাহত থাকবে।”
তাঁর মতে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গরিব, প্রতিবন্ধীসহ অসহায় মানুষকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রদবদলের বিষয়টি তিনি আগে জানতেন না। তাঁর ধারণা, অন্যরাও বিষয়টি জানতেন না।