খালেদার অনুপস্থিতিতে বিএনপির নেতৃত্ব তারেকের হাতে
2018.02.09
ঢাকা

দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁর বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান ও দলের মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সমন্বয় করে দল পরিচালনা করবেন বলে জানান ওই নেতা।
রিজভী বলেন, “খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করবেন।”
বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত। এরপর থেকে তাঁকে পুরোনো ঢাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
একই মামলায় তারেক রহমানসহ আরও ৫ আসামিরও ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়। এর আগে ২০১৬ সালে মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তাঁকে সাত বছর কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট।
দলের নতুন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থান করছেন।
এদিকে দুটি মামলায় দণ্ডিত তারেকের দল পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে বিএনপি। তিনি অপরাধী হিসেবে দণ্ডিত। আর এই মামলায়ও তাঁর ১০ বছর কারাদণ্ড ও ২ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে।”
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের পর দেশের রাজনৈতিক সংকট নয় বরং বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকট বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
সংকটে বিএনপি
বিএনপির দলীয় প্রধানের কারাবরণ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাসিত হওয়ায় দলটি সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকেরাও।
“দলীয় প্রধানের শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া একটি দল চালানো খুব কঠিন,” বেনারকে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান।
“সিনিয়র নেতাদের অধিকাংশের কাছেই তারেক রহমানের নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। এ জন্য খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতিতে দলের ঐক্য হুমকির মুখে পড়তে পারে,” বলেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
তবে বিএনপি ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলবে বলে বেনারকে জানান খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। জানা গেছে, তিনি, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নয়জন নেতা সম্মিলিতভাবে দল পরিচালনা করবেন।
অন্যরা হলেন মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তবে যেকোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করবেন তাঁরা।
খালেদার মুক্তি দাবি তারেকের
দলের দায়িত্ব পাওয়ার পরে দেওয়া প্রথম বিবৃতিতে মা খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছেন তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিবৃতি পাঠ করেন রুহুল কবির রিজভী।
বিবিৃতিতে খালেদা জিয়াকে “সম্পূর্ণ নির্দোষ” ও “নিরপরাধ” বলে উল্লেখ করেন তারেক।
দেশে জাতীয় নির্বাচন যখন আসন্ন ঠিক সেসময়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই ধরনের রাজনৈতিক আক্রমণের মাধ্যমে শাসকদল জনগণের সামনে নিজেদের ভীতিকর চেহারাটাই উন্মোচন করেছে বলে মন্তব্য করেন তারেক।
গ্রেপ্তার আরও দুই শতাধিক
খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন। শনিবারও দলটি বিক্ষোভ করবে।
শুক্রবারও পুলিশের ধরপাকড় অব্যাহত ছিল। এদিন রাজধানী থেকে ৪ জন এবং ১৫ জেলায় নতুন করে আরও দুই শতাধিক নেতা–কর্মীকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ১১ দিনে সারা দেশে আটক ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার।
জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবাসের পরে দেশে শান্তি বজায় রাখার জন্য ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল উভয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস।
“খালেদা জিয়ার মামলার রায় এবং সর্বশেষ ঘটনাবলি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘ। আশা করি আমরা পরিস্থিতি আরও মূল্যায়ন করব,” জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক।
এদিকে খালেদা জিয়ার ‘সুষ্ঠু বিচার’ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
“বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। সকল ব্যক্তির সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র।
জনগণকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি দেওয়া এবং স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্যও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান যুক্তরাষ্ট্রের এই মুখপাত্র।
কেমন আছেন খালেদা
ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক রাত কাটিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে সেখানে সাধারণ বন্দী হিসেবে আছেন তিনি।
“খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেওয়া আদালতের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের হাতে না আসায় তাঁকে সাধারণ কয়েদি হিসেবেই রাখা হয়েছে। কাগজ পেলে প্রথম শ্রেণির বন্দীর সুযোগ-সুবিধা পাবেন তিনি,” সাংবাদিকদের জানান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর কবির।
“তবে শুক্রবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি ভালো আছেন,” বলেন এই কারা কর্মকর্তা।
এদিকে বার্তা সংস্থা ইউএনবি গতকাল জানিয়েছে, কারাগারের ঝকঝকে যে কক্ষে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে, সেখানে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) ব্যবস্থা ও টিভিতে ডিস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাশে রান্নাঘর এবং স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিষ্কার শৌচাগারের ব্যবস্থাও রয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দারসহ চার স্বজন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কারাগারে প্রবেশ করে পাঁচটার দিকে বের হয়ে যান তাঁরা। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি খালেদার স্বজনেরা।