খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আগামী সপ্তায়, অন্য মামলায়ও গ্রেপ্তার
2018.02.12
ঢাকা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হলে এবং তারেক রহমান দেশে না ফিরলে বিএনপি কার নেতৃত্বে পরিচালিত হবে এবং আগামী নির্বাচনে কে দলটির হাল ধরবেন-সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজা হচ্ছে।
সোমবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ। যদিও গতকাল রাত পর্যন্ত এ সংক্রান্ত পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছেনি।
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের অনুলিপি প্রস্তুত করতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সোমবার আদালতে তিন হাজার পৃষ্ঠা কাগজ (কার্টিজ পেপার) জমা দিয়েছেন। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর হাইকোর্টে জামিন আবেদন ও আপিল আবেদন করা হবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বেনারকে বলেন, রায়ের অনুলিপি হাতে পেলেই তা পর্যালোচনা করে হাইকোর্টে জামিন ও আপিল আবেদন করা হবে। তিনি আশা করেন এই সপ্তাহেই অনুলিপি হাতে পাবেন। আগামী সপ্তাহে হাইকোর্ট-এ আবেদন জানাবেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা আছে। এর মধ্যে ৪টি মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
কুমিল্লায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি বাস কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় আসামাত্র দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে ঘটনাস্থলে সাতজন ও হাসপাতালে নেওয়ার দুদিন পর আরও একজনসহ মোট আটজন মারা যান এবং ২৭ জন আহত হন।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা করে। ঘটনা তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৬ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ৭৮জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। আদালত ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
কুমিল্লার কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি ওই মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে পাঠান। এটি কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে। আজ কালের মধ্যে এই পরোয়ানা তামিল করা হবে।
এর আগে শাহবাগ ও তেজগাঁও থানায় দায়ের করা দুটি মামলায় খালেদাকে আদালতে হাজির করার পরোয়ানা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মানববন্ধন কর্মসূচি, গ্রেপ্তার ৮৮
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সোমবার দেশজুড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি ডেকেছিল বিএনপি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচিতে বলেন, আজ জনগণের উপস্থিতি প্রমাণ করে খালেদা জিয়া দেশে জনপ্রিয় নেত্রী। তাঁকে অন্যায়ভাবে মামলা দিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে।
গতকালের কর্মসূচি থেকে খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই কর্মসূচি শেষে ফেরার সময় মৎস্য ভবনের সামনে থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামানসহ ১৮ জনকে আটক করে পুলিশ। সোমবার রাত এগারোটা পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি পুলিশ।
এদিকে গত রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত বিএনপির হিসাবে সারা দেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮৮ জন। সোমবার দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা উপলক্ষে গত ৩০ জানুয়ারি থেকে পুলিশের ধরপাকড় চলছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি দুই দিন বিক্ষোভ কর্মসূচির পর শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে তিন দিনের টানা কর্মসূচি ঘোষণা করে, যার প্রথম দিনের কর্মসূচি হিসেবে এই মানববন্ধন করা হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
বাংলাদেশের মানুষ সব সময় নির্যাতিত নেতা-নেত্রীদের পক্ষে থাকে বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেছেন বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। “কারাদণ্ড প্রাপ্ত হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে। উনি বেরিয়ে আসলে দলের সকল সমস্যা মিটে যাবে।”
দলের প্রধান তারেক, বিতর্ক
বেগম খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ হওয়ার পর তার দণ্ডপ্রাপ্ত ও নির্বাসিত পুত্র তারেক রহমানকে দলীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর-বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সরকার বলছে, একজন দণ্ডিত ব্যক্তিকে দলীয় প্রধান করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় হুইপ ইকবালুর রহিম সোমবার বেনারকে বলেন, “দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত তারেককে দলীয় প্রধান করায় আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে।”
তিনি বলেন, “রাজনীতি হলো কৌশলের খেলা। শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে খালেদা জিয়া ও তার দল পরাজিত।”
লন্ডনে বসবাসকারী তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ও দলের মহাসচিব যৌথভাবে দল পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন সিনিয়র নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার বেনারকে বলেন, “বর্তমান ডিজিটাল যুগে তারেকের লন্ডনে অবস্থান কোনো সমস্যা নয়। তারেকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।”
“খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে সরকার আগামী নির্বাচনে তাঁর দলকে চাপে রাখতে চায়। ক্ষমতাসীনরা কতটুকু সফল হবে তা নির্ভর করছে খালেদা দলকে কতটুকু ঐক্যবদ্ধ রেখে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে পারেন তার ওপর,” বেনারকে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান।