খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত, ৮ মে শুনানি
2018.03.19
ঢাকা

দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর ফলে তাঁকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন স্থগিত থাকছে।
আপিল বিভাগ প্রথমে ২২ মে পর্যন্ত জামিন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত দিলেও খালেদার আইনজীবীদের অনুরোধে এই মেয়াদ কমিয়ে ৮ মে নির্ধারণ করে।
এর আগে গত ১২ মার্চ এক আদেশে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি সংক্রান্ত আবেদনের ওপর শুনানি শেষে সোমবার সকালে সর্বসম্মতভাবে এই রায় দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ।
স্থগিতাদেশের পাশাপাশি হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ। চার সপ্তাহের মধ্যে মামলার সারসংক্ষেপ (নথিপত্র) জমা দেওয়ার সময় বেঁধে দিয়ে আদালত আগামী ৮ মে আপিল শুনানির জন্য দিন রেখেছে।
এই আদেশের ফলে আগামী ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও বর্তমানে আরও কয়েকটি মামলায় আটকাদেশের আওতায় আছেন খালেদা জিয়া।
তবে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগের দেওয়া এই আদেশকে নজিরবিহীন বলে দাবি করেছেন খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
তিনি বলেন, “আদালত জামিন স্থগিতের কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। এটি নজিরবিহীন আদেশ।”
এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বেনারকে বলেন, “আমরা আদালতে শুনানিকালে দেশি ও বিদেশি অসংখ্য নজির দেখিয়েছি। সেখানে আসামিপক্ষ আমাদের যুক্তি খণ্ডন করতে পারেননি।”
“সুপ্রিম কোর্ট আইন মোতাবেক আদেশ দিয়েছেন। আমরা আপাতত খুশি,” বেনারকে বলেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিএনপি
খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের প্রতিক্রিয়ায় ও তাঁর মুক্তির দাবিতে ২০ মার্চ সারা দেশে বিক্ষোভ ও ২৯ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফের জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবারও একই দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার ঘোষণা দিলেও পুলিশের অনুমতি না মেলায় তা সম্ভব হয়নি। তবে ২৯ মার্চ জনসভাটা করার ঘোষণা দিয়ে মির্জা ফখরুল জানান, এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএনপির এই জনসভা অনুষ্ঠানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানান দলটির মহাসচিব।
সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত
আদেশকালে প্রধান বিচারপতি জানান, আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিক্রমে খালেদার জামিন স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন কোন যুক্তিতে আদালত লিভ টু আপিল গ্রহণ করেছেন, সেটা জানতে চান।
প্রধান বিচারপতি নথি পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে জানালে জয়নুল আবেদীন বলেন, “আমরা তো মেরিটে (মামলার মূল বিষয়বস্তুতে শুনানি করিনি) বলিনি।”
প্রধান বিচারপতি জানান, আপিলে বলতে পারবেন।
এরপর জয়নুল আবেদীন সময়টা এগিয়ে আনার অনুরোধ করলে এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত থাকার পাশাপাশি ওই দিন আপিল শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। ওই দিন কার্যতালিকায় জামিন স্থগিতের বিষয়ে শুনানি অগ্রাধিকারে থাকবে বলেও জানানো হয়।
শুনানিতে যুক্তি–পাল্টা যুক্তি
গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট খালেদাকে চার মাসের জামিন দিলে সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। ১৪ মার্চ ওই জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে এই সময়ের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেন আপিল বিভাগ।
অন্যদিকে, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা, যা সেদিন চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে। আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। পরে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। রোববার এসব আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল।
শুনানিতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আছে, স্বল্প মেয়াদে সাজা হলে দ্রুত আপিল শুনানি করতে হবে। হাইকোর্টের আদেশ আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, “বিচার চলাকালে জামিন লাভের পর আদালতের অনুমতি ছাড়াই এমনকি আদালতকে অবহিত না করেই খালেদা জিয়া দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। এটা অডাসিটি। জামিনের এর থেকে বড় অপব্যবহার কী হতে পারে?”
বয়স্ক ও নারী বিবেচনায় বিচারিক আদালত সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর করায় একই বিবেচনায় তিনি দু’বার সুবিধা পেতে পারেন না বলে তিনি যুক্তি দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “খালেদা জিয়া অসুস্থতার বিষয়ে কোনো মেডিকেল সনদ জমা দেননি। তিনি এর আগেও অসুস্থতার কথা বলে জামিন নিয়ে মিটিং করেছেন, সমাবেশ করেছেন ও বিদেশ গেছেন। এবার যদি জামিন দেওয়া হয়, তাহলে আপিল শুনানি অনিশ্চিত হয়ে যাবে।”
সরকারি অর্থ তছরুপের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি বিশেষ অনুকম্পা পেতে পারেন না জানিয়ে এ প্রসঙ্গে তিনি পাকিস্তানের পারভেজ মোশারফ, ভারতের জয়ললিতা ও লালুপ্রসাদ যাদব, জিম্বাবুয়ের রর্বার্ট মুগাবের মামলার নজির তুলে ধরেন।
এর বিপরীতে বিভিন্ন নজির তুলে ধরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় হাইকোর্ট কারণ উল্লেখ করে জামিন দিতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদের সাজায় জামিন হয়েছে।
তিনি বলেন, “খুব ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারেন, যদি হাইকোর্টের আদেশ ন্যায়ভ্রষ্ট হয়। ৪৯৭ ধারায় আছে, নারী ও শিশুকে জামিন দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ৪২৬ ধারা একই। এটি ধারাবাহিকতা।”
খালেদার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “খালেদা জিয়ার মামলা বলে এর গুরুত্ব। তিনি না হলে আমরাও আসতাম না, সরকারও এত উৎসাহী হতো না। হাইকোর্টের এখতিয়ার আছে জামিন দেওয়ার।”