খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই: মেডিকেল বোর্ড

জেসমিন পাপড়ি
2018.04.10
ঢাকা
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কারাগারে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কারাগারে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৭ এপ্রিল ২০১৮।
বেনারনিউজ

কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য এখনই বিদেশে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন দেখছে না তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। তাঁর যে চিকিৎসায় চলছিল, সেটিই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তাঁর শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মঙ্গলবার এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তবে নতুন করে খালেদাকে ফিজিও থেরাপি নিতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

খালেদার চিকিৎসায় গঠিত বোর্ডের প্রধান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামান শাহীন সাংবাদিকদের বলেন, “আগে থেকেই খালেদা জিয়া অস্টিওআথ্রাইটিস ও রিউমেটয়েড আথ্রাইটিসে ভুগছিলেন। তাঁর দুটি হাঁটুই আগে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।”

“এ ছাড়া তাঁর বাম হাতে ব্যথা ছিল। তা থেকেই এখন নতুন করে ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয়েছে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা খুব একটা খারাপ নয়। এ পরিস্থিতিতে দেশেই চিকিৎসা তাঁর চলতে পারে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না,” বলেন তিনি।

তবে ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে ফিজিওথেরাপি নিতে হতে পারে এবং কিছু ব্যায়ামও করতে হবে বলেও জানান অধ্যাপক শামসুজ্জামান।

এ ছাড়া খালেদার পায়ে ব্যথার জন্য যে ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তাতে উন্নতি না হলে রিভিউ করার কথা বেনারকে জানান এই চিকিৎসক।

খালেদা জিয়ার শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষায় তাঁর রক্তের পরীক্ষায় কোনো সংক্রমণ বা কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি বলেও জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরা।

মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান মনসুর হাবীব, মেডিসিন বিভাগের প্রধান টিটু মিয়া ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেলী রহমান।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বিরূপ ও নিপীড়নমূলক পরিবেশে রাখার ফলে তার আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের সাবেক ডিন প্রফেসর ডা. সাইফুল ইসলাম।

“সূর্যের আলো ছাড়া স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের ভয়ঙ্কর মাত্রার ভিটামিন-ডি ও ক্যালশিয়ামের শূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা তাঁর হাড়ের জন্যে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে,” জানান সাইফুল ইসলাম।

দুর্নীতির মামলায় প্রায় দুই মাস ধরে কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে এর আগে গত শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়।

সেখানে এই বোর্ডের চিকিৎসকদের পাশাপাশি খালেদার ব্যক্তিগত তিনজন চিকিৎসকও তাঁকে দেখেন। তাঁদের পরামর্শে প্রথম ধাপে তাঁর রক্ত সংগ্রহ করা হয়। পরে হাড়ের এক্স রে করানো হয়।

সোমবার দুপুরে এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন কারা কর্তৃপক্ষ ঢাকা মেডিকেল কলেজে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডে পাঠান।

কুমিল্লার মামলায় জামিন হয়নি

এদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আটজনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় জামিন মেলেনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার।

মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার ৫ নং আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুস্তাইন বিল্লাহ তাঁর জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করে ওই আদেশ দেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মো. কাইমুল হক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেন ওই একই আদালত। খালেদা বর্তমানে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পুরান ঢাকার কারাগারে রয়েছেন।

তবে এই জামিন না মঞ্জুর আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন আইনজীবী কাইমুল হক। তিনি বেনারকে বলেন, “সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পর এ রায়ের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করা হবে।”

আদালত সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার ৫ নং আমলি আদালতে খালেদা জিয়ার জামিনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ঢাকার হাইকোর্টের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, কুমিল্লার কাজী নাজমুস সাদাত ও মো. কাইমুল হকসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক আইনজীবী। তবে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেন। দু’পক্ষের শুনানি শেষে জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে রায় দেন বিচারক।

এর আগে গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় পুলিশের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন গ্রহণ করে হাজিরা পরোয়ানা বা প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করে কুমিল্লার আদালত। পাশাপাশি তাঁকে ২৮ মার্চ মামলার শুনানির দিন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেদিনই খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে কুমিল্লার আদালতে আবেদন করেন বিএনপির আইনজীবীরা। গত ১৪ মার্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ও আদালতে হাজিরা পরোয়ানা জারির নির্দেশ বাতিল চেয়ে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে তাঁর উপস্থিতিতেই ২৮ মার্চ শুনানির দিন ধার্য রাখে আদালত।

পরে ওই দিনই পুনরায় ৮ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এই দুই তারিখে খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার আদালতে হাজির করা হয়নি। এরপর আদালত ১০ এপ্রিল জামিনের শুনানির দিন ধার্য করে। মঙ্গলবার শুনানিতে সেটি না মঞ্জুর করা হয়।

এ মামলা প্রসঙ্গে কুমিল্লার কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি জানান, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে আটজন যাত্রী নিহত হওয়ার মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত।

ওই মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৪৭ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তামিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কুমিল্লার আদালত। ওই মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৭৭ জন আসামির মধ্যে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আছে। এ ছাড়া ২৯ জন জামিনে এবং একজন জেল হাজতে রয়েছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।