আপিল বিভাগে বহাল রইল খালেদা জিয়ার জামিন

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.05.16
ঢাকা
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কারাগারে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কারাগারে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৭ এপ্রিল ২০১৮। [ফাইল ছবি]
বেনারনিউজ

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে আরও মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় আপাতত তিনি জামিন পাচ্ছেন না।

৮ মে থেকে কয়েক দফা শুনানির পর বুধবার সকালে বিএনপি প্রধানের জামিন বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ।

রায়ের পর খালেদার আইনজীবী মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল জামিন পেলেও বিএনপির চেয়ারপারসনের কারামুক্তি পেতে কিছুটা বাধা আছে। নিম্ন আদালতে থাকা ছয়টি মামলায় তাঁকে আসামি দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কুমিল্লায়, দুটি ঢাকায় ও নড়াইলে একটি মামলা আছে।

এদিকে আপিল বিভাগ বুধবারের রায়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটির হাইকোর্টের আপিল ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বেনারকে তিনি বলেন, “আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। এখন আপিল শুনানির জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হবে।”

বিএনপি শাসনামলে সৌদি আরব থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জনকল্যাণের জন্য পাঠানো দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা তছরুপের দায়ে ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত।

ওই মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও তাঁর ছেলে তারেক রহমান ও আরও চারজনকে দশ বছর কারাদণ্ড ও দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ড দেয় নিম্ন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন খালেদা জিয়া।

কয়েক দফা শুনানি শেষে ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন বিচারপতি এনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

ওই জামিনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন পৃথকভাবে পিটিশন দায়ের করে।

আপিল বিভাগ জামিনের বিষয়ে প্রথমে ৮ মে শুনানির দিন ধার্য করে। ওই দিন সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য প্রদান করেন।

পরদিন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাঁদের বক্তব্য পেশ করেন। দুপক্ষের শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায়ের দিন ঠিক করে আদালত। তবে, মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের কাছে আরও যুক্তি উপস্থাপন করে বক্তব্য দিতে চাইলে আদালত তা গ্রহণ করে।

মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানি শেষে বুধবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে আদালত। সেই অনুসারে বুধবার রায় ঘোষণা করা হলো।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ থেকে জামিন পেলেও খালেদা জিয়া এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বুধবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার নানা কৌশলে চেষ্টা করবে তাঁর মুক্তি বিলম্বিত করতে। এগুলোতে জামিন নিতে যতটুকু সময় লাগে, সেই সময়টুকু পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”

তাঁর মতে, “আপিল বিভাগ যেহেতু তার জামিন বহাল রেখে দিয়েছেন, এখন নিম্ন আদালতে জামিন পেতে আর খুব বেশি অসুবিধা হবে না।”

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে মামলা দিয়ে ঘায়েল করার সংস্কৃতি অনেক পুরনো। প্রতিটি সরকারই বিরোধীদলকে কাবু করতে মামলা-হুলিয়া ব্যবহার করেছে।”

তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো সম্পর্কে দেশের মানুষের অনেকেরই ধারণা যে মামলাগুলো রাজনৈতিক কারণে হয়েছে।”

“তবে আজকে বেগম জিয়ার জামিন প্রাপ্তিতে আওয়ামী লীগ বলবে যে আদালত তাদের আমলে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। তারা বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে প্রচার করবে,” যোগ করেন ড. আতাউর।

১৯ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বেঞ্চ হাই কোর্ট আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দেয় আদালত।

৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর পরই খালেদা জিয়াকে ওই দিন বিকেলে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন সেখানেই আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে মোট মামলার সংখ্যা ৩০ টিরও বেশি।

আপিল দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করা হবে

আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিম্ন আদালতের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে খালেদা জিয়ার করা আপিল শেষ করার যে আদেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ তা পালন করতে দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এ মামলার আপিলের পেপারবুক প্রস্তুত থাকায় খালেদা জিয়ার হাইকোর্টের দায়ের করা আপিলের শুনানি আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমরা আদালতে আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের যা করণীয় আমরা তা করব।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।