অসুস্থ খালেদাকে সামরিক হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার
2018.06.12
ঢাকা

দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তাঁকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়ার নতুন প্রস্তাব দিয়েছে সরকার।
তবে, খালেদা জিয়া সিএমএইচে চিকিৎসা নেবেন কি না-সেব্যাপারে কিছু জানাননি বলে মঙ্গলবার বেনারকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
নিজ খরচে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা করাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার আবেদন করেছেন বলেও জানান মন্ত্রী।
বিএনপি মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারকে হুঁশিয়ার করে জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার পরিণাম সরকারকেই বহন করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইনি ও কৌশলগত কারণে খালেদা জিয়ার পছন্দের ইউনাইটেড হাসপাতালে অনুমতি দিচ্ছে না সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “ওনার (খালেদা জিয়ার) ভাই আজ আমাদের কাছে আবেদন করেছেন যেন তাঁকে নিজ খরচে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে কারা বিধি অনুযায়ী কোনো বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব নয়। সেকারণেই আমরা তাঁকে সিএমএইচে চিকিৎসা নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। উনি এখনো কিছু জানাননি।”
মন্ত্রী বলেন, “উনি যদি সিএমএইচে না যান সেটা তাঁর বিষয়। তবে সরকার তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক ও সিরিয়াস।”
ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ে সিএমএইচ অনেক বেশি ভালো মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “সিএমএইচে না যাওয়ার কোনো কারণ দেখি না।”
এর আগে গতকাল সোমবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। খালেদা জিয়ার কাছে তিনি জানতে চান তিনি সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিতে রাজি আছেন কি না।
এ প্রসঙ্গে কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনি রাজি হননি।”
তবে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে, সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা করছে।
দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। এটা জানার পরেও তাঁকে আরও অসুস্থ করে ফেলার জন্য পরিত্যক্ত জেলখানার একমাত্র বন্দী হিসেবে নির্জনে রাখা হয়েছে। তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতির কথাও গোপন রাখার অপচেষ্টা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়ে রাজনৈতিক কারণে অবহেলা কিংবা বিলম্ব করা হলে তার পরিণাম সরকারের জন্য শুভ হবে না। দেশবাসী বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সরকারের অমানবিক আচরণে ক্ষুদ্ধ।”
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তাঁর দুই হাঁটু এবং দুই চোখেই অপারেশন করতে হয়েছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “৭৩ বছর বয়স্কা এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে যে পরিবেশে রাখা হয়েছে তা যেকোনো সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে ফেলার মতো।”
চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। অথচ নির্জন এই কারাগারে তাঁকে দেখার জন্য জুনিয়র ডাক্তার ও ডিপ্লোমা নার্স নিয়োগ করে সরকার দাবি করছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের দলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে দুইবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে এসব বিষয় উল্লেখ করে তাঁকে অনতিবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা এবং এমআরআইসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর দাবি করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কিছুই করা হয়নি।”
তিনি জানান, “তথাকথিত ১/১১ এর সরকারের সময়েও একবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছিল। আর তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এবং সাবেক সেনাবাহিনী প্রধানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি অনুমোদন ও অর্থ সংস্থানের বিষয়ে এত দিনেও সিদ্ধান্ত না হওয়া রহস্যজনক এবং নিন্দনীয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়াকে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়ার যে প্রস্তাব সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে সেটা গ্রহণযোগ্য। আমার মনে হয় তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করবেন না।”
তিনি বলেন, সিএমএইচ একটি ভালো হাসপাতাল। সেখানে উনি ভালো চিকিৎসা পাবেন।
ড. আতাউর রহমান বলেন, “খালেদা জিয়া যদি সিএমএইচে যেতে অস্বীকৃতি জানান, সে ক্ষেত্রে সরকার বলবে বিএনপি সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এগুলো ম্যাটার করে। আবার যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে যায়, তখন সরকারের ওপর কোনো দায় দায়িত্ব থাকবে না।”
ইউনাইটেড হাসপাতালে গেলে সেখানে নেতা–কর্মীরা ভিড় করবে। কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
বিশিষ্টজনের কর্মসূচিতে বাধা
ঈদের আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশিষ্টজনদের মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি পুলিশ। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত বিশিষ্ট নাগরিক সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের দাঁড়াতে দেয়নি।
এমাজউদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা একটি সম্পূর্ণ মানবিক আবেদন নিয়ে এসেছিলাম। পুলিশ আমাদের ব্যানারটিও খুলতেই দেয়নি। দাঁড়াতেও দেয়নি, বসতেও দেয়নি।”
পরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের এমন একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি করতে না দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক এবং নিন্দনীয়। এতে বোঝা যায় দেশে গণতন্ত্রের কী অবস্থা।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ খবর পায় যে সেখানে কিছু লোক জড়ো হয়েছেন, অনুমতি না থাকায় তাঁদের চলে যেতে বলা হয়।”