শর্ত মেনে জামিন নিলেন খালেদা, বিদেশ যেতে অনুমতি লাগবে

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.10.19
ঢাকা
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে ঢাকার বকশিবাজারে বিশেষ জজ আদালতে হাজির হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে ঢাকার বকশিবাজারে বিশেষ জজ আদালতে হাজির হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৯ অক্টোবর ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

ভবিষ্যতে আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশে যেতে পারবেন না- এমন শর্তে ঢাকার একটি আদালত বৃহস্পতিবার দুটি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেছেন। হাজিরা না দেওয়ায় ১২ অক্টোবর দুটি মামলায় খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

তিন মাস পর বুধবার বিকেলে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পরের দিনই ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে এক লাখ টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক আখতারুজ্জামান।

এদিকে আদালতে হাজিরা না দিলে মামলা দুটি ট্রায়ালে চলে যেতে পারত বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী।

“ম্যাডাম, লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। আমরা আদালতকে কাগজপত্র দিয়েছিলাম। কিন্তু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়ে যায়। তাই আদালত ও আইনের শাসনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ম্যাডাম এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরে এসে আদালতে হাজির হয়েছেন,” বেনারকে বলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার।

তিনি বলেন, “আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন মঞ্জুর করেছেন।”

“আদালত বলেছেন, এরপর বিদেশ গেলে খালেদা জিয়াকে আদালতের অনুমতি নিয়ে যেতে হবে,” যোগ করেন তিনি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল খালেদার জমিনের বিরোধিতা করে বলেন, তিনি আদালতের অনুমতি না নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে বিদেশ গেছেন। তাই তাকে পুনরায় জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।

দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আখতারুজ্জামান জামিন মঞ্জুর করেন। তবে এর বাইরে আরও তিনটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

গত সপ্তাহে কুমিল্লার একটি আদালত অগ্নি-সংযোগ ও মানুষ পোড়ানো দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। আবার একই সময়ে ঢাকার একটি আদালত পতাকা অবমাননা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এই সময় তিনি হাঁটু ও চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন ছিলেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা দেশে ফিরলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সময়ে পুলিশ বিএনপির মিত্র জামায়াতের প্রধানসহ শীর্ষ-স্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে। মন্ত্রীর বক্তব্যের পর দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আশঙ্কার উদ্রেক হয় যে খালেদা জিয়া বন্দী হতে পারেন।

তবে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।”

জমিরউদ্দীন সরকার বলেন, “নেতা-কর্মীদের মধ্যে এমন আশঙ্কা ছিল যে ম্যাডামকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। আবার ম্যাডাম হাজিরা না দিলে উনার অনুপস্থিতিতে মামলাটি ট্রায়ালে চলে যেতে পারত। তা ছাড়া সরকারের অনেকেই চায়, ম্যাডামকে ফৌজদারি একটি মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হোক।”

জমিরউদ্দীন সরকার বলেন, “২০০৭-০৮ সালে সেনা-সমর্থিত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দীনের সরকার বিএনপি প্রধানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আর বর্তমান সরকার সেগুলোকে ‘ইনহেরিট’ করে চালিয়ে যাচ্ছে।”

দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র নেতারা মামলার শুনানির সময় উপস্থিত ‍ছিলেন।

আদালতে খালেদার জবানবন্দী

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়া।

তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও হয়রানিমূলক বলে দাবি করেন তিনি।

এই ট্রাস্টের অর্থায়ন, পরিচালনা বা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কিংবা তাঁর ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি।

খালেদা বলেন, “এমন একটি ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় আমার স্বাভাবিক জীবন, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।”

ক্ষমতাসীনেরা তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অবিরাম অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁর।

তিনি বলেন. “প্রধানমন্ত্রী, শাসক দলের মন্ত্রীরা বিচারাধীন মামলার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিচারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।”

খালেদা জিয়া বলেন, “মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে বন্দী ও প্রায় ৭৫ হাজার নেতা-কর্মী বিভিন্ন মেয়াদে কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। ৪ লাখের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ২৫ হাজারের মতো মামলা দায়ের করা হয়েছে।”

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে প্রাপ্ত দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন খালেদা জিয়াসহ দলীয় ছয়জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করে।

অন্যান্য আসামিরা হলেন: খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দীন আহমেদ, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান।

বৃহস্পতিবার কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দীন আহমেদ জামিন পেয়েছেন। বাকিরা পলাতক।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে জমা হওয়া তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের আগস্ট মাসে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন: খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ-নিরাপত্তা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকার সাবেকে মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

হারিস চৌধুরী ও জিয়াউল ইসলাম মুন্না পলাতক। মনিরুল ইসলাম খান জমিনে আছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আদালত অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচারকাজ শুরু করেন।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জেসমিন পাপড়ি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।