ঢাকার বাতাস বিষাক্ত, দূষণের মাত্রা ভয়াবহ
2024.02.28
ঢাকা

কয়েক বছর ধরে আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বায়ু দূষণ। বুধবার সকালেও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছিল ঢাকা।
বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, শহরের চারপাশে ইট ভাটা, নগরজুড়ে যানজট, নানা নির্মাণ প্রকল্প ও খোলা আকাশের নিচে বর্জ্য পোড়ানোর কারণে নিয়মিত বায়ু দূষণ হচ্ছে এবং বিপজ্জনক স্তরে চলে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইন্সটিটিউটের ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বায়ু দূষণের ফলে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু প্রায় সাত বছর কমেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব দূষণ রোধে নানা রকম উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ু মানের কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো শহরের বাতাসের মান সূচকে যদি ৫১ থেকে ১০০ হয়, তাহলে মাঝারি বা গ্রহণযোগ্য মানের বায়ু বিবেচনা করা হয়।
১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে স্কোর হলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর; ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর; ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে তার উপরে স্কোর থাকলে দুর্যোগপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।

ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বিষাক্ত বাতাস
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (আইকিউএয়ার) বাতাসের মান সূচকে বুধবার সকাল ৯টায় বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল প্রথমে।
এই সময় ঢাকার স্কোর ছিল ২৬৭, যেটিকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বিবেচনা করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে টানা দুই দিন ঢাকার বায়ু ছিল দুর্যোগপূর্ণ। এর বাইরে অধিকাংশ দিনই বাতাসের মান ছিল অস্বাস্থ্যকর।
মাসজুড়ে ঢাকার অবস্থান শীর্ষ পাঁচের মধ্যে ছিল।
সকালে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক বেনারকে বলেন, “ঠিক কী কারণে সকালের দিকে দূষণের পরিমাণ এত ভয়াবহ আকার ধারণ করে তা আমরা নিশ্চিত না। তবে আমাদের ধারণা, রাতভর খোলা ট্রাকে নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন, খোলা স্থানে ময়লা আবর্জনা পোড়ানো ও সকালের বাতাসে কুয়াশা থাকায় দূষণের মাত্রা বেশি হয়।”
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বেনারকে বলেন, “গত ৮ বছরের মধ্যে দূষণের দিক থেকে ফেব্রুয়ারি মাস তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাতাসে বর্তমানে দূষণের গড় মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় দুই দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।”
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ পর্যন্ত ঢাকার বায়ু মান সূচক ছিল ২২৬। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি ছিল ২৩১ এবং ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছিল ২৩৬।

উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়
রাজধানীর বাসাবো এলাকার বাসিন্দা আশরাফ খন্দকার বেনারকে জানান, বায়ু দূষণের ভয়াবহতার কারণে তিনি কখনো কখনো সন্তানদের স্কুলে পাঠানো থেকে বিরত থাকেন।
“বাসাবো থেকে নন্দীপাড়া সড়কে রাতভর নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে ট্রাক চলাচল করে। ফলে এই এলাকার বায়ুর মান খুবই ভয়াবহ অবস্থায় থাকে,” বলেন তিনি।
শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও বয়স্কদের সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মানুষ বিবেচনা করা হয় জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বেনারকে বলেন, “বায়ু মানের এই অবস্থা নিয়ে অনেক কথা হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের সচেতন হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”
এ সময় মাস্ক পরার পরামর্শ দেন এই স্বাস্থ্য অধিকার কর্মী।
কামরুজ্জামান বলেন, বায়ু দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে সামনে আসছে নির্মাণকাজ ও ইটভাটা।
“দেশের বায়ু দূষণের ৬০ শতাংশের উৎস এই দুটি খাত। শুধু হুঁশিয়ারি না, প্রভাবশালীদের তোয়াক্কা না করে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “ আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর ১০০ দিনের যেসব অগ্রাধিকার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে বায়ু দূষণ মোকাবিলা অন্যতম। আমরা কাজ শুরু করেছি, আশা করি সুফল আসবে।”
কোনো পরিকল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এটিকে বাস্তবায়নের পর্যায়ে নিয়ে যেতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।