অর্ধযুগ ধরে স্থবির হয়ে আছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ধারাবাহিকতা
2017.07.11
ঢাকা

জনসংখ্যার তুলনায় পরিবার পরিকল্পনা সেবা, ডাক্তার ও কর্মীর অপ্রতুলতায় গত ছয় বছরে জন্মহার নিয়ন্ত্রণের ধারাবাহিকতা স্থবির হয়ে আছে বাংলাদেশে।
নারী প্রতি সন্তান সংখ্যা ২ এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য থাকলেও ২০১১ সাল থেকে তা ২.৩ জনে আটকে আছে, যা ১৯৭৫ সালে ছিল ৬.৩ জন।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা সংস্থা ইউএনএফপিএ’র এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
“স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একজন নারী গড়ে ৬.৩ জন সন্তান নিতেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই হার ধারাবাহিকভাবে কমে ২.৩ জনে নেমেছে; এটি একটি অর্জন। তবে বর্তমান বছর পর্যন্ত সেই হার একই ২.৩ রয়ে গেছে,” বেনারকে বলেন ইউএনএফপিএ’র টেকনিক্যাল অফিসার আবু সাঈদ মোহাম্মদ হাসান।
“১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে পরিবার পরিকল্পনার মাঠ কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারের কথা বোঝাতেন। একজন কর্মী মাসে ৩০০ বাড়ি যেতে পারতেন। দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে, তবে মাঠ কর্মীর সংখ্যা বাড়েনি,” বেনারকে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম নুরুন নবী।
তিনি বলেন “এদের অনেকেই অবসরে গেছেন; কেউ বা মারা গেছেন, আবার অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। আবার নতুন নিয়োগ ও হচ্ছে না। তাই পরিবার পরিকল্পনা সেবায় আমরা ঝিমিয়ে পড়েছি।"
সবাইকে পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়ার কথা চিন্তা না করে যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনসংখ্যার হার বেশি তাদের টার্গেট করে পরিবার পরিকল্পনা দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শরীফ বেনারকে বলেন, অধিফদতরের অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য ছিল। সম্প্রতি ৩৫০ জনের বেশি ডাক্তার যোগদান করেছে। আরও ১৫২টি ডাক্তারের পদ খালি আছে। আবার মাঠকর্মীদের সাড়ে চার হাজার পদের মধ্যে প্রায় ১,২০০ পদ শূন্য।
“আশা করা যায় খুব তাড়াতাড়ি আমাদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা গতি পাবে,” পরিচালক আশা প্রকাশ করেন।
লক্ষ্য নারী প্রতি ২ সন্তান
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ইউএনএফপিএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে নারী প্রতি সন্তান সংখ্যা ৬.৩ থেকে কমে দাঁড়ায় ৫.১। ১৯৯১ সালে এই সংখ্যা নেমে আসে ৪.৩। ১৯৯৩-৯৪ সালে তা ৩.৪ জনে নেমে আসে। ১৯৯৬-৯৭, ২০০৪ এবং ২০০৭ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৩.৩, ৩.০ এবং ২.৭ জন।
২০১১ সালে এই হার ২.৩ এ নেমে আসে। এখন পর্যন্ত এই হার একই স্থানে আটকে আছে। উল্লেখ্য, সরকারি হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি।
ইউএনএফপিএ’র কর্মকর্তা হাসান বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে সরকার নারী প্রতি সন্তান সংখ্যা দুটিতে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এভাবে চললে তা সম্ভব কি না সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায়।
তিনি জানান ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারের গড় হার শতকরা ৬১। বর্তমানে এই হার ৬২ শতাংশের কিছু বেশি।
জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারের হারও আশানুরূপভাবে বাড়ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ব্যবহার ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা।”
হাসান বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করা ৬২ ভাগ দম্পতিদের মধ্যে মাত্র আট ভাগ স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহার করেন; অন্যরা অস্থায়ী পদ্ধতি যেমন: কনডম, বড়ি বা ইনজেকশন ব্যবহার করে।
“অস্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের ঘটনা ঘটে। প্রতি বছর আমাদের দেশে ১৩ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঘটনা ঘটে,” তিনি বলেন।
“নারী প্রতি সন্তানের সংখ্যা না কমার আরেকটি কারণ হলো প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও কাউন্সেলিংয়ের অভাব। সন্তান প্রসবের পরে এই সেবা দিয়ে থাকেন ডাক্তারেরা। কিন্তু অধিকাংশ স্থানে ডাক্তারের পদ শূন্য। সুতরাং, প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মহিলারা আবারও গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছেন,” হাসান বলেন।
মঙ্গলবার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে জনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো: পরিবার পরিকল্পনা: জনগণের ক্ষমতায়ন, জাতির উন্নয়ন।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, সরকার জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে জনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো: পরিবার পরিকল্পনা: জনগণের ক্ষমতায়ন, জাতির উন্নয়ন।