আবার নিরাপদ সড়কের দাবিতে উত্তাল ঢাকা

কামরান রেজা চৌধুরী ও শরীফ খিয়াম
2019.03.20
ঢাকা
190320_students_protest_1000.JPG নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ২০ মার্চ ২০১৯।
[মেঘ মনির/বেনারনিউজ]

আট মাসের ব্যবধানে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও উত্তাল রাজধানী ঢাকা। বাসের চাপায় এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত দুদিন থেকে রাস্তা অবরোধ করে ঢাকা শহরকে কার্যত অচল করে রেখেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের এক অংশ আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অবহ্যাত থাকবে বলে জানিয়েছে অন্যরা।

মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা গেটের সামনে বাস চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর প্রতিবাদে শুরু হয় এই আন্দোলন।

গত বছরের মতো ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিয়ে বুধবার সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা শহরের অন্যান্য অংশেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে ‘আমরা বিচার চাই, নিরাপদ সড়ক চাই’ স্লোগান দিতে থাকে। সারা দিন অবরুদ্ধ থাকায় বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানজটে পুরো ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

কেউ বলছেন স্থগিত, কেউ বলছেন চলবে

শিক্ষার্থীদের এক পক্ষ থেকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা এলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার কথা বলছে অন্য পক্ষ।

বুধবার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের সাথে শিক্ষার্থীদের এক প্রতিনিধিদলের সভার পর আগামী ২৭ মার্চ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সভায় মেয়র ও ঢাকার পুলিশ কমিশনার সাত দিনের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করার সময় চেয়ে নিয়েছেন।

তৌহিদুল বলেন, “আমরা বলেছি, ২৭ তারিখের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়িত না হলে আমরা ২৮ মার্চ পুনরায় রাস্তায় নামব। পুরো ঢাকা হবে বিক্ষোভের শহর। সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে।”

তবে দাবি আদায়া না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অন্য পক্ষ।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম বেনারকে বলেন, “যতক্ষণ আমাদের দাবি বাস্তবায়িত না হবে তত দিন আমরা রাস্তায় থাকব। আন্দোলন শুরু হলে আমাদের বলা হয়, সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। আন্দোলন শেষ হয়ে গেলে আবার বিশৃঙ্খল অবস্থা শুরু হয়।”

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে মঙ্গলবার থেকে দফায় দফায় সভা করেন।

তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিকে যৌক্তিক বলে আখ্যা দিয়ে তাঁদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।

বসুন্ধরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “আপনাদের যৌক্তিক দাবির সাথে সরকার আপনাদের সাথে রয়েছে। এখন থেকে সুপ্রভাত পরিবহনের বাস আর চলবে না। বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের কাজ করতে দিন। আপনারা ফিরে যান।”

আবরার যেখানে নিহত হন সেখানে বুধবার তাঁর নামে একটি ফুট ওভার ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছাত্রদের সকল দাবি মেনে নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিলটন বেনারকে বলেন, “আমাদের দাবি, সরকার অবৈধ যানবাহনের চলাচল বন্ধ করবে, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এবং দায়ী ড্রাইভার ও অন্যান্যদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।”

এদিকে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নূরুল হক নূর বুধবার শাহবাগে এসে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। তিনি বলেন, গতকাল থেকে অনেক সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

ওই সময় সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা চলাচলকারী যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করতে থাকেন।

গত বছর ২৯ জুলাই বাসের জন্য অপেক্ষারত শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে হত্যা করে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস। এর প্রতিবাদে প্রথমে রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।

পরে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ৮ আগস্ট পর্যন্ত চলা সেই আন্দোলন বন্ধ করতে পুলিশি অ্যাকশন নিতে হয় সরকারকে।

তবে এখন পর্যন্ত চলমান আন্দোলনে কোনো সংঘাতের তথ্য পাওয়া যায়নি।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ২০ মার্চ ২০১৯।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ২০ মার্চ ২০১৯।
[মেঘ মনির/বেনারনিউজ]

আদালতের রুল জারি

আবরারের মৃত্যুতে মঙ্গলবার রাতে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন তাঁর বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফ আহমেদ চৌধুরী। মামলায় তিনি মালিক, চালক ও সহকারীকে অভিযুক্ত করেন।

পুলিশ ইতিমধ্যে চালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার আদালত চালকের সাত দিনের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

আবরারের মৃত্যুর বিষয়টি নজরে এনে তাঁর পরিবারকে কেন পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপুরণ দেয়া হবে না সে বিষয়ে আদালতের রুল চাইলে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ একটি রুল জারি করেন।

রুল আবেদনকারী আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, আদালত প্রাথমিক ক্ষতিপূরণ বাবদ আবরারের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দিতে সুপ্রভাত বাসের মালিককে নির্দেশ দিয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আবরারের নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এদিকে বুধবার সাতক্ষীরা ও গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে দুই স্কুল শিক্ষার্থী।

একইদিন যশোরের নাভারনে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারান এক স্কুলছাত্রী। ওই দুর্ঘটনার প্রতিবাদে তাঁর সহপাঠীরা যশোর-বেনাপোল সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে প্রশাসনে হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।