প্রধানমন্ত্রীর ‘সুস্পষ্ট নির্দেশনা’ চায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকারীরা
2018.04.10
ঢাকা

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এদিকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের দায়ে ছাত্রলীগের হল সভানেত্রীকে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। সারা বাংলাদেশের রাস্তা অবরোধ করা হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তাঁরা।
এদিকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রলীগের হল সভানেত্রী ইফফাত জাহান ইশার নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
“মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে সুফিয়া কামাল হলে আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ। এর মধ্যে চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয় তারা।” বেনারকে জানান হলে অবস্থানকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী।
এই ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ইশাকে মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে রাত দুইটার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী হলে এসে ইশাকে উদ্ধার করেন বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
“প্রক্টর নিজেই হলে আসেন। তিনিই ইশাকে উদ্ধার করে হাউস টিচারদের ভবনে নিয়ে গেছেন,” বেনারকে জানান প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা।
এদিকে রাতেই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে (১১ এপ্রিল তারিখে স্বাক্ষরিত) ইশাকে সংগঠন থেকে বহিস্কারের কথা জানান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন।
এর আগে সোমাবার দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে ছাত্রলীগ তা অস্বীকার করেছে।
আহতদের দেখতে গেলেন ভিসি
মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ভিসি বলেন, “আহতদের খোঁজখবর নিয়েছি। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আছে।”
এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হামলায় ২৬২ জন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বলে বেনারকে জানান আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।
“আন্দোলনে আমাদের ২৬২ জন সহযোদ্ধা আহত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো আমরা তাঁদের কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি,” বলেন মামুন।
তিনি বলেন, “বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
এদিকে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘উপাচার্যকে সপরিবারে হত্যার চেষ্টার প্রতিবাদ’ শীর্ষক এক কর্মসূচি থেকে কোটা সংস্কারের দাবির প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সংহতি জানায়।
সমিতির সভাপতি মাকসুদ কামাল বলেন, “কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের নৈতিক দাবির প্রতি সমর্থন আছে।”
কোটা ও ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন একসাথে
সোমবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক প্রাক-বাজেট আলোচনা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা করেন, আগামী অর্থবছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করা হবে।
এরই জের ধরে মঙ্গলবার কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যোগ দেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১২টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা আটকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে কোটা এবং ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন একই সঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তাঁরা।
তবে মঙ্গলবার সচিবালয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) লভ্যাংশ প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ভ্যাট আরোপ করা হবে না, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মালিকদের ইনকাম ট্যাক্স (আয় কর) দিতে হবে।”
ওই অনুষ্ঠানে আগামী বাজেটের পরে (জুন মাস) কোটা সংস্কারে হাত দেওয়ার কথা জানান আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নূর বলেন, “এই দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া আমরা মানি না।”
রাত সাড়ে আটটায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে আন্দোলনকারীরা। বুধবার সকাল ১০টায় ফের টিএসসি’তে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়
বাংলাদেশি রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা কারও কাম্য হতে পারে না।”
“ব্যক্তিগতভাবে আমি কোটার বিপক্ষে। আমাদের নিয়োগ পদ্ধতি এখন অবশ্যই মেধাভিত্তিক হওয়া উচিত। এখানে কোনো বৈষম্য থাকা উচিত নয়,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিজ্ঞান সমিতির এই সাবেক সভাপতির অভিমত, “মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে তাঁদের পোষ্যদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে। আর কোনো কোটা থাকারই দরকার নেই।”