কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে তুলে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে
2018.04.16
ঢাকা

কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে পুলিশ ‘গুম’ করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, মুহাম্মদ রাশেদ খান এবং নুরুল হক নূরকে সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে তুলে নেওয়া হয়।
ফারুক হাসান বেনারকে বলেন, “আমাদের চোখ বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। খবরটি গণমাধ্যমে আসার পরপরই তারা আমাদের ছেড়ে দেয়। না হলে হয়তো আমাদের ‘গুম’ করে ফেলা হতো।”
“গুলিস্তান থেকে গামছা কিনে আমাদের চোখ বাঁধা হয়। এরপর মাথায় হেলমেট পরিয়ে ডিবি অফিসে নেয়া হয়। এটি একটি অপহরণ,” বলেন নুরুল হক নূর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের এই ছাত্রও মনে করেন, “মিডিয়া না জানলে আমরা আর ফিরে আসতাম কিনা সন্দেহ।”
এর আগে সকালে ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দুই দিনের মধ্যে প্রত্যাহারের আলটিমেটামসহ ফের রাজপথে নামার হুমকি দেন সংগঠনের নেতারা।
“এই সংবাদ সম্মেলনের ঘণ্টাখানেক পর ওই তিনজনকে রিকশা থেকে নামিয়ে একটি বড় মাইক্রোবাসে তুলে পুলিশের মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়,” বেনারকে বলেন আন্দোলনের আহবায়ক হাসান আল মামুন।
গ্রেপ্তার অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যরা সাদা পোশাকে ছিলেন বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, “তিনজনকে তুলে আনা হয়নি। তাদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে।” তবে যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, “তাদের তদন্তের প্রয়োজনে নিয়ে আসা হলেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
“ভিসির বাসায় যে হামলা হয়েছিল, এই ঘটনায় যেসব ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি সেগুলো যাচাই বাছাই করার জন্য তদন্তের প্রয়োজনে তাদের ডেকে এনেছিলাম,” যোগ করেন আব্দুল বাতেন।
ফারুক বেনারকে বলেন, “বলা হয়েছিল ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের আনা হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই দেখানো হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।”
“ডিবি পুলিশ বলেছে, তোমাদের ওপর হামলার আশঙ্কা ছিল। সে জন্য নিয়ে আসা হয়েছে,” জানিয়ে নূর আরও বলেন, “ছেড়ে দেওয়ার সময় বলা হয় আবার ডাকলে ডিবি অফিসে যেতে হবে।”
ফারুকের অভিমত, “নিরাপত্তা ইস্যু থাকতেই পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার ডাকলে আমরা অবশ্যই যেতাম, পালাতাম না। কিন্তু তারা আমাদের এভাবে না নিয়ে গেলেও পারতো।”
ডিবি কার্যালয়ে পানি খেতে চাইলে দেয়া হয়নি বলেও উল্লেখ করেন ঢাবির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের এই ছাত্র।
প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার সাংবাদিকদের জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ফেসবুকে মিথ্যা, গুজব ও উসকানিমূলক তথ্য প্রচারকারী এবং ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পাঁচটি মামলার তদন্ত চলছে।
এদিকে আন্দোলনের তিন যুগ্ম আহ্বায়ককে প্রায় দুই ঘণ্টা পর আটক রেখে ছেড়ে দেয় পুলিশ । এরই প্রেক্ষিতে বিকেলে আবারও সংবাদ সম্মেলন ডাকে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
তারা বলে, “আবার যদি আমাদের কাউকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তবে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।” নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার কথা জানিয়ে সংগঠনের নেতারা সরকারের কাছে নিজেদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানান।
একই সময়ে মুহাম্মদ রাশেদ খানের ঝিনাইদহ সদরের চর মুরারীদহ গ্রামের বাড়ি থেকে তার বাবা নবাই বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে পুলিশ।
“রাশেদের বাবাকে কয়েকটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাকা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে,” বলে সাংবাদিকদের জানান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ইমদাদুল হক।
এদিকে রাশেদ খান বলেন, “আমার বাবার কোনো দোষ নাই। তাকে ছেড়ে দেওয়া হোক।”
“এখন আমার বাবার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চলছে,” বলেও অভিযোগ করেন ঢাবির এমবিএ’র (ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ) এই ছাত্র।
সংবাদ সম্মেলন শেষে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। এর আগে সোমবার সকালেই আন্দোলনকারীদের সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমের সাথে কথা হয়।
হাসান আল মামুন বেনারকে বলেন, “শামীম ভাই আমাদের বলেছেন, তোমরা নিশ্চিন্তে থাকো, কোনো সমস্যা হবে না।”
“আন্দোলনে আহত সকলের চিকিৎসার ব্যয়ভার খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেবেন বলেও তিনি আমাদের জানিয়েছেন,” যোগ করেন আন্দোলনের এই আহবায়ক।
কোটার পক্ষে আন্দোলন
এদিকে কোটা বাতিলের ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্য ও তাদের সমমনাদের ৪২ টি সংগঠন নিয়ে গঠিত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদ, শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোববার এক জমায়েত থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সব সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে মহাসমাবেশ এবং ৫ মে জাতীয় কনভেনশন করার ঘোষণা দিয়েছে তারা।