কোটা সংস্কার আন্দোলন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের মামলা
2018.07.24
ঢাকা

হুমকির পর এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দিয়েছে ছাত্রলীগ।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেওয়ার তিন দিনের মধ্যেই এ মামলা করা হলো। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে কটুক্তি করার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নির্বাহী সদস্য ইফতেখারুল ইসলাম ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে হাটহাজারি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
“সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে,” বেনারকে জানান ওসি বেলাল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
তবে এ মামলা উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম।
তিনি বেনারকে বলেন, “যেটা হয়েছে সেটা আসলে একদমই যুক্তিহীন, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি কাউকে কখনো কটুক্তি করিনি। কোটা আন্দোলনের সঙ্গে প্রথমদিকে সম্পৃক্ত ছিলাম। প্রথম এই ইস্যুতে অভিযোগ করল, পরে সেটা যখন টিকল না এখন নতুন ইস্যু নিয়ে আসছে।”
এমন অবস্থায় তিনি ও তাঁর পরিবার নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের ক্রমাগত হুমকির মুখে গত ১৫ জুলাই পরিবার নিয়ে আমি ক্যাম্পাস থেকে চলে এসেছি। এমনকি নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর আবেদনও জানিয়েছি।”
“তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বা আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি,” মঙ্গলবার বিকেলে বলেন মাইদুল ইসলাম।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ড সরকারের ইশারাতেই হচ্ছে, যা অগণতান্ত্রিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বেনারকে বলেন, “তারা (ক্ষমতাসীন দল) যে কাজ করছে তা অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক। তারা বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার হরণ করছে। গণতন্ত্রের পরিবেশ নষ্ট করছে।”
“প্রত্যেকেরই নিজস্ব কথা বলার অধিকার আছে। সেখানে ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের সকল অঙ্গসংগঠন নিজেদের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাবান মনে করে। এতে তারা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে,” বলেন তিনি।
“সবাই ক্ষমতাসীনদের সমর্থন করবে এটা ভাবা ঠিক নয়। যারা তাদের সমর্থন করবে না তাদের কথা বলতে দেওয়া উচিত,” মনে করেন নেহাল করিম।
নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন
কোটা সংস্কার নিয়ে লেখালেখির কারণে ছাত্রলীগের ক্রমাগত হুমকিতে ছিলেন মাইদুল ইসলাম। হুমকির মুখে তিনি পরিবার নিয়ে গত ১৫ জুলাই ক্যাম্পাস এলাকা ছাড়েন।
এরপর সোমবার নিরাপত্তা চেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন তিনি। ক্লাসে ফেরা, হুমকিদাতা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের বিচার চাওয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে বলেও তাতে উল্লেখ করেন তিনি।
চিঠিতে মাইদুল ইসলাম জানান, তাঁর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়ে ছাত্রলীগের এক নেতার ফেসবুক পোস্ট গত ১৪ জুলাই চট্টগ্রাম তাঁর নজরে আসে। বহিরাগত ছাত্রলীগের এ ধরনের আরও হুমকি তিনি ফেসবুকে দেখেছেন। এমন অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতা ও প্রাণনাশের আশঙ্কায় তিনি পরিবারসহ ১৫ জুলাই ক্যাম্পাস ছাড়েন।
পরদিন ১৬ জুলাই তাঁকে খুঁজতে ১০-৩০ জন নেতা-কর্মী বিভাগে গিয়ে তাঁকে না পেয়ে বিভাগীয় প্রধানের কাছে নালিশ দিয়ে আসে বলেও উল্লেখ করেন মাইদুল ইসলাম।
এর পরদিন ১৭ জুলাই মাইদুল ইসলাম এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজীকে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগ। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটুক্তি ও অরাজকতা তৈরিতে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনে ওই দুই শিক্ষককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তারা।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কোটা সংস্কার কমিটির মেয়াদ বাড়ল
নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধার প্রেক্ষাপটে গত ২ জুন সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি করে সরকার। কমিটিতে সাতজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়। গত বৃহস্পিতবার কমিটির মেয়াদ ৯০ কার্যদিবস বাড়িয়েছে সরকার।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবিতে কয়েক মাস আগে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’, যা ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল সংসদে বলেছিলেন, কোটা পদ্ধতিই থাকবে না, এটা ‘বাতিল’।
তবে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সংসদে বলেছেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাইকোর্টের রায় আছে।