নিরাপদ সড়ক ও কোটা আন্দোলনের প্রায় সবাই মুক্ত
2018.08.20
ঢাকা

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে আদালত। সোমবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৯ জন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া ১২ জন জামিন পান।
এর আগে রবিবার নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া ৩২ ছাত্রসহ ৩৯ জন জামিন পান। এ নিয়ে দুই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ৬৩ ছাত্রসহ মোট ৭০ জন জামিন পেলেন, যাদের কেউ কেউ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, কেউবা মঙ্গলবারের মধ্যে ছাড়া পাবেন।
ঈদের আগে দুই আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মুক্তি চেয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের নেতারা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত দুই দিনে আদালত চত্বরে জামিন পাওয়া শিক্ষার্থীদের মা–বাবা ও স্বজনদের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সাম্প্রতিক সময়ে এই দুটি ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়েছিল। এদের মধ্যে একমাত্র কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বেনারকে বলেন, প্রতিটি মামলা জামিনযোগ্য। ছাত্রদের এভাবে, এতোটা সময় জেলে রাখা ঠিক হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল না।
সোমবার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জামিনের পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই এসব ছাত্র কারাগারে আছে। তারা আন্দোলন করেছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।
বিচারক তখন জানতে চান কোন ছাত্র কত দিন ধরে কারাগারে আছেন। আইনজীবীরা এটা আদালতকে অবহিত করেন। এরপর বিচারক বলেন, নথি পর্যালোচনা করে তিনি আদেশ দেবেন। বিকেল চারটার দিকে তিনি জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন।
এই আদেশে শুধু রাশেদ নন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার আরও ১৮ জন ছাত্র জামিন পেলেন। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (লিগ্যাল এইড) এসব শিক্ষার্থীর জামিনে সহায়তা করে।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুর রহমান বেনারকে জানান, সবার জামিননামা গতকাল কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার তাঁরা জামিন পেতে পারেন।
গত ১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানকে মিরপুর থেকে আটক করেছিল পুলিশ। দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ছেলের গ্রেপ্তারের খবরে ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় আসেন তাঁর বাবা নবাই বিশ্বাস ও মা সালেহা বেগম। ছেলের মুক্তির দাবিতে মা সংবাদ সম্মেলন করেন, অংশ নেন বিভিন্ন মানববন্ধন ও সভা–সমাবেশে। ছেলের মুক্তি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাশেদের মায়ের আকুল আবেদন সবাইকে স্পর্শ করে।
আদালত চত্বরে সালেহা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, “আমার বাবা জামিন পেয়েছে...। এবার বাবাকে নিয়েই বাড়ি ফিরব।”
নিরাপদ সড়কের ১২ ছাত্রের জামিন
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হওয়া আরও ১২ ছাত্রকে জামিন দিয়েছে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। এই ছাত্রদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় ভাঙচুর, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বাড্ডা, ভাটারা, ধানমন্ডি, রমনা ও উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা ছিল।
এর আগে সোমবার সকালে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আরও ১৩ ছাত্র জামিনে মুক্তি পান। প্রথম দফায় সকাল সাড়ে আটটার দিকে নয়জন ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আরও চারজনকে জেল থেকে ছাড়া হয়।
১৮ দিন পর মুক্ত অন্তঃসত্ত্বা স্কুলশিক্ষিকা
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এক স্কুলশিক্ষিকা। গতকাল হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ তাঁকে জামিন দেন।
গত ৪ আগস্ট রাত একটার দিকে অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানা-পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ভুক্তভোগী নারীর বাবা ও স্বামী আইনগত সহায়তা চেয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টে (ব্লাস্ট) আবেদন করেন।
জামিন পাননি চার নারী
অন্তত ৭০ জন জামিন পেলেও ধানমন্ডি থানার তিনটি ভাঙচুর মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বর্ণালী চৌধুরী লোপার জামিন হয়নি। বর্ণালীর মা আম্বিয়া খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।
এ ছাড়া গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া অভিনয়শিল্পী নওশাবা আহমেদ, ফেসবুকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুন্নাহার ওরফে লুমা সরকার ও হাজারীবাগের কফিশপ মালিক ফারাহ মাহজাবীন জামিন পাননি।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন। সপ্তাহজুড়ে আন্দোলন, সংঘাত ও সহিংসতায় পুলিশ ৫২ মামলায় ৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের ৫২ জনই শিক্ষার্থী, গত দুইদিনে তাদের ৫১ জন জামিন পেয়েছে।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া ১৯ জনের সবাইকে সোমবার জামিন দিয়েছে আদালত।