আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল
2018.10.23
ঢাকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ-ইউনিটের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার শিক্ষার্থীকে আবার ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। মঙ্গলবার সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
“আপনারা জানেন, ঘ ইউনিটে পরীক্ষা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। ওই পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার পরীক্ষার্থী পাস করেছে। আজকের সভায় আমরা তাদের পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি,” বেনারকে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
পরীক্ষার তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরে গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ওই পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা। এই প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত নিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এই সিদ্ধান্তকে শিক্ষার্থী আন্দোলনের আরও একটি ফসল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ফলে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বাতিল হয় সকল প্রকার কোটা। এবার দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
“আলহামদুলিল্লাহ। ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আবার নেওয়া হবে। মেধাবীরা তাদের স্থান দখল করে নেবে। আমার ক্যাম্পাস হবে কলঙ্কমুক্ত,” এভাবেই ফেসবুকের স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সন্তোষ প্রকাশ করেন আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেন, যিনি এই পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে টানা ২৮ ঘণ্টা অনশন করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যান।
“...যে কারণেই হোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঘুম ভেঙেছে। ধন্যবাদ তাঁদের। এবার যেন প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয় সেই ব্যবস্থা নিন। যে কোনো পরীক্ষায় যতবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে, ততবার পরীক্ষা বাতিল করতে হবে। আর যাদের দায়িত্বে অবহেলায় ঘটেছে তাদেরও দায় নিতে হবে,” বলছিলেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট শরিফুল হাসান, যিনি প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন।
গত ১২ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তখনই ওই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন গণমাধ্যম পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের কথা তুলে ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকেও দেখানো হয় ভর্তি পরীক্ষার আগে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নের কপি। ফাঁস হওয়া কপির ৭২টি প্রশ্ন ভর্তি পরীক্ষার মূল প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, সেদিন পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ১৪টি ছবি আসে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠন করা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করে নেয়। তারপরেও ১৬ অক্টোবর ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। পরে রোববার ঘ- ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ।
এরই মধ্যে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বেনারকে বলেন, “আশা করি পুনঃপরীক্ষার মধ্য দিয়ে ডিজিটাল জালিয়াতি বা প্রশ্নপত্র ফাঁস- যাই হোক না কেন, সেই বিতর্কের অবসান হবে। এবং ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানে প্রকৃত মেধাবীরাই ভর্তির সুযোগ পাবে।”
“বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য যারা প্রথম পরীক্ষায় ৪৮ নম্বর পেয়ে পাস করেছে, কেবল তাদের নিয়েই পুনরায় পরীক্ষার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,” বলেন তিনি।
তবে এবারের পরীক্ষাতেও প্রশ্নফাঁস বা জালিয়াতি কীভাবে ঠেকানো সম্ভব এমন প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “এবারের পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন হবে তা চার ডিন বসে ঠিক করবেন। যেটা অত্যন্ত গোপন বিষয়।”
জানা যায়, ডিনস কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তির পুনঃপরীক্ষায় মূল সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকবেন। এ ছাড়া যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে থাকবেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইমদাদুল হক ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। বুধবার বৈঠক করে তাঁরা পরীক্ষার তারিখ ঠিক করবেন।