শিশু রাকিব হত্যাকারীদের সাজা কমাল হাইকোর্ট

জেসমিন পাপড়ি
2017.04.04
ঢাকা
রাকিব হত্যার দুই আসামি মো. শরীফ ও মিন্টু মিয়াকে রিমান্ডে নেওয়ার পথে। রাকিব হত্যার দুই আসামি মো. শরীফ ও মিন্টু মিয়াকে রিমান্ডে নেওয়ার পথে। ১১ আগস্ট ২০১৫। ফাইল ফটো
বেনারনিউজ

শিশু রাকিব হাওলাদারকে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। নিহতের পরিবারকে জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে দুই আসামিকে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওমর শরিফ ও মিন্টু খান নামের দুই আসামির হিংশ্রতা আর নিষ্ঠুরতার নির্মম বলি হয়েছিল ১২ বছরের রাকিব। পায়ুপথে বায়ু ঢুকিয়ে হত্যা করা হয় তাকে।

মঙ্গলবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আলোচিত এ মামলাটি রায় ঘোষণা করেন।

তবে এ রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রাকিবের পরিবার ও মানবাধিকার কর্মীরা। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বেনারকে বলেন, “নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া উচিত ছিল। কারণ, সাজা কমানোর ফলে সমাজে এ ধরনের অপরাধের মাত্রা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।”

তবে এই রায়ে ‘আংশিক ন্যায়বিচার’ পেয়েছেন জানিয়ে সাজা মওকুফের আশায় হাইকোর্টের রায়ে বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

রায়ে বিচারকরা বলেন, “দুই পক্ষের তথ্য-প্রমাণ বিচার করে আমরা যথার্থ রায় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। অফেন্ডারদের মধ্যে মধ্যে ভিকটিমকে বাঁচানোর একটা চেষ্টা ছিল, যা তথ্য প্রমাণে এসেছে।”

নিহত রাকিব হাওলাদার। ফাইল ফটো।
নিহত রাকিব হাওলাদার। ফাইল ফটো।
[ফোকাস বাংলা]
যা ঘটেছিল

খুলনার টুটপাড়া কবরখানা মোড়ে শরীফের মোটর ওয়ার্কশপে এক সময় কাজ করত রাকিব। পরে কাজ ছেড়ে অন্য কোথাও কাজ নেয় সে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওয়ার্কশপটির মালিক শরীফ ও তার দূর সম্পর্কের চাচা মিন্টু ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট রাকিবকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

ওই ওয়ার্কশপের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ডেকে নিয়ে কমপ্রেসার মেশিনের নলের মাধ্যমে মলদ্বার দিয়ে বাতাস ঢোকানো হয়। এর ফলে পেটের ভেতরের নাড়ি, মলদ্বার, ‍মুত্রথলি ফেটে রক্তক্ষরণে রাকিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ওই রাতেই মারা যায়।

পৈশাচিক ওই ঘটনায় সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রায় চার মাসের মধ্যেই দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সে বছরের ১৮ নভেম্বর আসামি শরীফ ও মিন্টুর ফাঁসির আদেশ দেয় খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত।

নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশের অনুমোদন এবং আসামিদের আপিল আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার দুই আসামির সাজা কমানোর রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।

এ মামলার অভিযোগপত্রে শরীফের মা বিউটি বেগমকেও আসামি করা হয়েছিল। তবে অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেয় জজ আদালত।

রাকিবের পরিবার হতাশ

হাইকোর্টের রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না রাকিবের মা-বাবা। টিভিতেই খবরটি পান তাঁরা। কিন্তু সন্তান হত্যাকারী দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের খবর শুনে হতাশা প্রকাশ করেন তাঁরা।

রাকিবের বাবা নুরুল আলম টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “সারা দেশের মানুষ রাকিবের হত্যাকারীদের ফাঁসির চেয়েছিল। খুলনার কোর্টে (নিম্ন আদালতে) ফাঁসির রায়ও দেওয়া হয়। আমরা সে রায় কার্যকর হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, হাইকোর্টে গিয়ে সাজা কমে গেলো আসামিদের।”

রাকিবের পরিবারের পক্ষে উচ্চ আদালতে শুনানিতে অংশ নেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বেনারকে বলেন, “আদালত এ হত্যাকে যেমন এটা নিষ্ঠুর-অমানবিক কাজ বলেছেন, তেমনি আসামিরা রাকিবকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল বলেও জানিয়েছেন। আমি মনে করি আদালতের এমন বক্তব্য সাংঘর্ষিক। আমরা ন্যায় বিচারের জন্য অবশ্যই এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করর।”

আপিল করবে আসামিপক্ষ

এদিকে আসামিরা আংশিক ন্যায়বিচার পেয়েছে বলে জানান শরীফের আইনজীবী গোলাম মো. চৌধুরী আলাল। তারাও এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন তিনি।

আলাল বলেন, “রাকিবকে হত্যা করার কোনো পরিকল্পনা আসামিদের ছিল না। অনাকাঙ্খিতভাবে ঘটনাটি ঘটার পরে তারা (আসামিরা) পালানোর চেষ্টা না করে ভিকটিমকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এমনকি রক্তও দিয়েছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।