মারমা তরুণী ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে
2018.02.20
ওয়াশিংটন ডিসি

আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি, ইস্টার্ন টাইম জোন বিকেল ০৫.৩০
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সংখ্যালঘু মারমা সম্প্রদায়ের এক তরুণীকে ধর্ষণ ও তাঁর ছোট বোনকে যৌন হয়রানির অভিযোগের পর তাঁদের অবৈধভাবে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, ওই দুই তরুণীর খোঁজ নিতে গেলে চাকমা রানি যেন যেন এবং এক স্বেচ্ছাসেবককে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পিটিয়ে জখম করে।
প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তিন সদস্যদের কমিটি গঠন করে বলেছে, তাঁরা ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করবেন।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। কারা এই ঘটনা ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত শেষ হলে জানা যাবে।”
তিনি বলেন, “ওই দুই তরুণীর মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাই আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ওই দুই মেয়েকে তাঁদের পিতা-মাতার জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
মন্ত্রী বলেন, দুই তরুণীকে আটকে রাখা হয়েছে-এই অভিযোগ ঠিক নয়।
কী ঘটেছিল সেদিন?
মানবাধিকার কর্মী ও ওই দুই তরুণীর আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা বেনারকে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্য গত ২২ জানুয়ারি রাতে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওরা সরি গ্রামের একটি মারমা বাড়িতে ঢুকে সেই বাড়ির দুই তরুণীর মধ্যে একজনকে ধর্ষণ করে ও তার বোনকে যৌন হয়রানি করে।
তিনি বলেন, ২৪ জানুয়ারি ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী ও তার বোনকে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালের একটি পরিত্যক্ত ওয়ার্ডে চিকিৎসার নামে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরায় আটকে রাখা হয়।
ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে দেরি করা হয় যাতে ধর্ষণের আলামত না পাওয়া যায়, বলেন সুস্মিতা চাকমা।
তিনি বলেন, ওই দুই তরুণীকে অবৈধভাবে আটকে রাখার বিরুদ্ধে মানবাধিকার কর্মীরা ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দুই তরুণীর নিরক্ষর পিতাকে দিয়ে হাইকোর্টে পাল্টা একটি রিট আবেদন করান।
ওই রিট আবেদনে তিনি দুই মেয়েকে তাঁর হেফাজতে নিতে চান।
আদালত অবৈধভাবে আটকের বিরুদ্ধে করা রিটের ওপর শুনানির আগেই বাবার করা রিটের ওপর শুনানি করে এবং ওই দুজনকে পিতা-মাতার হেফাজতে দিতে বলেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আদালতের আদেশের কপিসহ ভিকটিমদের বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। ওই দিন চাকমা রানি যেন যেন ও নারী স্বেচ্ছাসেবকেরা নির্যাতনের শিকার দুই তরুণীর খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে যান।
ভিক্টিম দুই তরুণী নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাবা-মার কাছে যেতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁদের বাবা জোর করেন। এতে উপস্থিত চাকমা রানি যেন যেন হস্তক্ষেপ করেন।
এরপর পুলিশ চাকমা রানি যেন যেন ও একজন নারী স্বেচ্ছাসেবককে পিটিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়।
সুস্মিতা চাকমা বলেন, এরপর ভিকটিম দুই তরুণীকে সাদা পোশাকে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সিলভার রঙের একটি নোয়া মাইক্রোবাসে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
বর্তমানে ওই দুই তরুণী, তার পিতা-মাতা, ভাই ও আরও কয়েকজনকে নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় পুলিশি প্রহরায় আটকে রাখা হয়েছে বলে জানান সুস্মিতা।
তিনি বলেন, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট সুলতানা কামাল ও পাঁচ আইনজীবীর করা রিটের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি গঠন
মারমা দুই তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
কমিশন সদস্য এবং রাঙামাটি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বাঞ্ছিতা চাকমা এই কমিটির আহ্বায়ক।
এ প্রসঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বেনারকে বলেন, “আমরা প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করব।”
নিন্দা, প্রতিবাদ, বিচার দাবি
গত এক সপ্তাহ ধরে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করছে বিভিন্ন সংগঠন। গত রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন দুই মারমা তরুণীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি দাবি করা হয়।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি মাঠে এক সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় চাকমা রানি যেন যেন এর ওপর হামলা ও দুই মারমা তরুণী ধর্ষণের বিচার দাবি করেন। গত এক সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।