বনানী ধর্ষণ মামলায় ৫ আসামির বিচার শুরু
2017.07.13
ঢাকা

রাজধানী ঢাকার রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দুই নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ সফিউল আজম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ২৪ জুলাই দিন ঠিক করেন।
মামলা দায়েরের মাত্র দুই মাসের মাথায় আলোচিত ঘটনাটির বিচার শুরুর বিষয়টি ইতিবাচক বলে মত দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তবে শুধু আলোচিত মামলাগুলোই নয়, এ ধরনের সব মামলা গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বেনারকে বলেন, “ওপরের কোনো চাপ না থাকায় বনানী ধর্ষণ মামলার অগ্রগতি সন্তোষজনক। পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারক যদি সমন্বিতভাবে কাজ করে তাহলে এভাবেই বিচার এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।”
তাঁর মতে, “তবে আলোচিত মামলাগুলোর ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি দেখা গেলেও এ ধরনের অনেক সেনসেটিভ মামলা ধামাচাপা পড়ে আছে। সেগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে।”
নির্যাতিত ছাত্রীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সন্তোষ প্রকাশ করে বেনারকে বলেন, “বিচার শুরু হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে দ্রুত এই বিচার শেষ করার মাধ্যমে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক—এটাই চাই।”
এই মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হচ্ছে; আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘ই-মেকার্স’ এর কর্মকর্তা নাঈম আশরাফ, ঢাকার পিকাসো রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক রেগনাম গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ এবং সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী।
গত ৬ মে বনানী থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন নির্যাতিত এক তরুণী। এতে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত ২৮ মার্চ রাতে বনানীর পাঁচতারকা রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে তাদের দুজনকে ধর্ষণ করার অভিযোগ আনা হয়।
আসামিদের সবাই আটক রয়েছে। অভিযোগ গঠনের শুনানিতে কারাগার থেকে গতকাল তাদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানিকালে আসামিদের কাছে বিচারক জানতে চান, তারা দোষী না নির্দোষ?
জবাবে আসামিদের সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন। এই মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। অবশ্য শুনানি শেষে সে আবেদন খারিজ করে আসামিদের বিচার শুরুর নির্দেশ দেন বিচারক।
আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুর রহমান হাওলাদার, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মোহাম্মদ নজিবুল্লা হিরু, খায়রুল ইসলাম লিটন ও মাহবুব আহমেদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ আদালতের বিশেষ কৌঁসুলি আলী আকবর।
মামলা দায়েরের প্রায় এক মাসের মাথায় গত ৮ জুন ঢাকার হাকিম আদালতে ৪৭ জনকে সাক্ষী করে অভিযোগপত্র দেন পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। ধর্ষণে সাফাত ও নাঈম সরাসরি অংশ নেয় এবং বাকি তিনজন তাদের সহযোগিতা করে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, মামলা হওয়ার পর গত ১১ মে সিলেট থেকে সাফাত ও সাদমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরও চার দিন পরে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয় সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত। আর ১৭ মে সবশেষে মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হয় নাঈম আশরাফ।
অনুরূপ ঘটনায় আরেক অপরাধীর দোষ স্বীকার
রেইনট্রি-র ঘটনার মতোই বনানীতে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে বাসায় ডেকে এনে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গত বুধবার নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে একমাত্র আসামি বাহাউদ্দিন ইভান।
বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। গত ৪ জুলাই রাতে বনানীর ন্যাম ভিলেজে ইভানের অ্যাপার্টমেন্টে ওই তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই তরুণী একজন মডেল।
পরদিন বনানী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করা হয়। নারায়ণগঞ্জের একটি বাসা থেকে ইভানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।