পশ্চিমবঙ্গে খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ: অভিযুক্ত বাংলাদেশির আজীবন কারাদণ্ড
2017.11.08
কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রাণাঘাটের গাংনাপুরের কনভেন্ট স্কুলে আড়াই বছর আগে ৭২ বছরের খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত বাংলাদেশি নজরুল ইসলাম ওরফে নজুকে আজীবন কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ৫০ হাজার রুপি জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। বুধবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতের অতিরিক্ত বিচারক কুমকুম সিংহ এই সাজা ঘোষণা করেন।
একই সঙ্গে বিচারক বাকি পাঁচজনের মধ্যে বাংলাদেশি চারজনকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার রুপি জরিমানার সাজা দিয়েছেন। অনাদায়ে আরও আড়াই বছরের কারাবাসের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
ষড়যন্ত্র করা ও দুষ্কৃতকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে অভিযুক্ত ভারতীয় নাগরিক গোপাল সরকারকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও দেড় বছরের কারাবাসের সাজার কথা বলা হয়েছে।
বিচারক বলেন, জরিমানার অর্থের অর্ধেক লাঞ্ছিতা সন্ন্যাসিনী পাবেন। তিনি নিতে অস্বীকার করলে তা তিনি যে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার বিচারক ধর্ষণ ও ডাকাতির মামলায় ধৃত ছয় অভিযুক্তের মধ্যে নজরুল ইসলামকে ধর্ষণের অভিযোগে এবং বাকিদের ডাকাতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। গত ৩০ অক্টোবর এই মামলার বিচার শেষ হয়। রুদ্ধদ্বার এজলাসে মামলার শুনানি হলেও রায় ঘোষণা হয়েছে প্রকাশ্যে।
অভিযুক্তদের শাস্তি ঘোষণার আগে বিচারক বলেন, “স্বয়ং যিশুও এদের ক্ষমা করতে পারবেন না। এটা ক্ষমাহীন অপরাধ।”
২০১৫ সালের ১৪ মার্চ কলকাতা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে নদীয়া জেলার রাণাঘাট মহকুমার গাংনাপুরের কনভেন্ট অব জেসাস অ্যান্ড মেরী স্কুলে একদল দুষ্কৃতকারী নৈশপ্রহরী এবং তিন সন্ন্যাসিনীকে বেঁধে রেখে লুটপাট চালায়। একজন দুষ্কৃতকারী দোতলায় উঠে ৭২ বছরের প্রবীণ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যে এই তথ্যই উঠে এসেছে।
যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে তারা হলো- নজরুল ইসলাম ওরফে নজু, মিলন সরকার, ওহিদুল ইসলাম, মহম্মদ সেলিম শেখ, খালেদ রহমান ও গোপাল সরকার। একজন এখনো পলাতক।
শাস্তি ঘোষণায় সন্তোষ
অভিযুক্তদের শাস্তি ঘোষণার সংবাদ শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাণাঘাটের কনভেন্ট অব জেসাস এন্ড মেরী স্কুলের সন্ন্যাসিনীরা। সাজা ঘোষণার পর কনভেন্ট অফ জেসাস অ্যান্ড মেরীর সুপিরিয়র জেনারেল সিস্টার মনিকা জোসেফ বলেন, “বিচার পেলাম।”
“অভিযুক্তদের বিচারক যে শাস্তি দিয়েছেন তাতে আমি খুশি,” বেনারকে বলেন কলকাতার আর্চ বিশপ টমাস ডি সুজা।
তিনি বলেন, “প্রবীণ সন্ন্যাসিনীর ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়ে গিয়েছে। তবে এই ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠতে চার্চের অনেক সময় লাগবে।”
রাণাঘাটের গাংনাপুরের বাসিন্দা সুষমা চক্রবর্তী বেনারকে বলেন, “অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তি দেওয়ায় আমরা খুশি। তবে এই ঘটনার কলঙ্ক রাণাঘাটের মানুষের ওপর থেকে সহজে ঘুচবে না।”
শিক্ষকতা ছেড়ে একান্তে দিনযাপন
ধর্ষিতা সন্ন্যাসিনী অপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, তবে অপরাধকে নয়। এ কথা জানিয়েছেন রাণাঘাটের কনভেন্ট স্কুলে তাঁর এক সহকর্মী। ঘটনার পর পরই চার্চ কর্তৃপক্ষ তাঁকে দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বর্তমানে উত্তর ভারতে অন্যান্য সন্ন্যাসিনীদের সঙ্গে একান্তে দিন কাটাচ্ছেন।
এক সন্ন্যাসিনী বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “ঘটনার পরেই তিনি আর শিক্ষকতা না করার কথা জানিয়ে দেন। অথচ ৫০ বছর ধরে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত থাকার জন্য কনভেন্ট তাঁকে সংবর্ধিত করেছিল।”
চার্চের এক আধিকারিক বলেন, “ধর্ষণে অভিযুক্তকে জেলের মধ্যে টিআই প্যারেডে শনাক্ত করতে তিনি সাহস দেখিয়েছেন। কোনো কথা না বললেও দশজন অপরাধীর মধ্যে সোজা অভিযুক্তের কাছে গিয়ে তাঁর হাত ধরে তাকিয়ে থেকেছেন।”
সীমান্ত পেরিয়ে ডাকাতি
রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে বাংলাদেশের দলটির সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসে ডাকাতির তথ্য। অভিযুক্ত গোপাল সরকারের বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা নিয়মিত আশ্রয় নিত বলে পুলিশ আদালতে জানিয়েছে।
এই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার বিজয় যাদব বেনারকে বলেন, “মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, কখনো পাসপোর্ট নিয়ে, কখনো বিনা পাসপোর্টে ভারতে এসে বাংলাদেশের এই দলটি বালুরঘাট, মালদহ, খড়্গপুর, বারুইপুরে ডাকাতি করেছে। প্রতিবারই অপরাধ করে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে যায়।”
সিআইডির ধারণা, পলাতক অভিযুক্ত দুষ্কৃতকারী বাংলাদেশে চলে গিয়েছে।