নিরাপত্তা ঝুঁকি উপেক্ষা করেই উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠিত
2017.07.03
ঢাকা

অবশেষে উল্টোরথে মন্দিরে ফিরেছেন জগন্নাথ। নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাতে পুলিশ প্রশাসন রথের মেলা বন্ধ করে দেবার প্রতিবাদে ধামরাইয়ের হিন্দুরা গত রোববার ৪০০ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে উল্টোরথ না টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মেলা আয়োজনের সুযোগ দেওয়ার শর্তে সোমবার উল্টোরথ টেনেছেন হিন্দু সম্প্রদায়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে ক্ষুব্ধ ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়। অবশেষে প্রশাসন তাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে। রথযাত্রার আয়োজক যশোমাধব মন্দির ও রথ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে প্রশাসনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান রথযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে ধামরাইয়ে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে তিনি কথা বলেন বেনারের সঙ্গে।
“দেখুন, একটা হুমকির কারণে আমাদের কিছুটা কঠোর হতে হয়েছে। রথযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা মেলাকে কেন্দ্র করে। কারণ মেলায় প্রচুর লোকসমাগম হয়। ঝুঁকিটাও সেখানে,” শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন।
এদিকে গতকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে রথযাত্রা আয়োজক কমিটির প্রধান জীবন কানাই দাশ বেনারকে বলেন, তাঁরা রথযাত্রা ও মেলা দুইই করবেন।
“চারশ বছর ধরে এই রথযাত্রা হচ্ছে, মেলাও হচ্ছে। এর সঙ্গে মানুষের আবেগ অনুভূতি জড়িত। ২০-২৫ হাজার মানুষ যুক্ত হবেন এই যাত্রায়। সে কারণে আমরা দুঃখে ধর্মীয় অনুষ্ঠান রথযাত্রা থেকেও সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম,” জীবন কানাই দাশ বলেন।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত পুলিশের উপস্থিতি পর্যাপ্ত। তাঁরাও প্রায় ৩শ স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিয়েছেন। তবে কারও কারও মধ্যে ভীতি আছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার রাতে ধামরাই রথযাত্রা আয়োজক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেন। ওই আলোচনায় স্থানীয় সাংসদও উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান, স্থানীয় সাংসদ আবদুল মালেক এবং ইউএনও আবুল কালাম যশোমাধব মন্দির ও রথযাত্রা আয়োজক কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। রাত ৮ থেকে ১২ টা পর্যন্ত চলা ওই বৈঠকে তাঁরা ঐকমত্যে পৌঁছান।
সাধারণত মেলা রথের দিন শুরু হয়ে তিন সপ্তাহ ধরে চলে। এ বছরও রথযাত্রার দিন থেকে মেলা বসেছিল।
রথের মেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বীরাও অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দু ধরনের মত পাওয়া গেছে। তাঁদের একজন কবির আহমেদ। তিনি বলেন, “আমরা শুনেছি, জঙ্গি হামলা হতে পারে এমন একটা আশঙ্কা আছে। আগে তো প্রাণে বাঁচতে হবে তারপর রথ।”
তবে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম বেনারকে বলেছেন, প্রশাসন ও পুলিশ সতর্ক থাকায় রথযাত্রা নির্বিঘ্ন হয়েছে।
ধামরাই এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, যথাযথভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হলেও রথযাত্রা ও মেলা নির্বিঘ্ন করা প্রয়োজন। কারণ, এই রথযাত্রা একটা ঐতিহ্যের অংশ।
তিনি বলেন, এভাবেই আস্তে আস্তে দেশ থেকে মেলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এ বছর শীত মৌসুমে বিভিন্ন জায়গায় গানের আসর বসেনি। এই অনুষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবতা জগন্নাথের সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসবটি হলো রথযাত্রা। এই উৎসবের সময় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি মূল মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বের করে এনে কাঠের তৈরি তিনটি বিরাট রথে করে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভক্তরাই এই রথগুলি টেনে নিয়ে যান। যেখানেই জগন্নাথ মন্দির আছে, সেখানেই এই ধরনের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে দীর্ঘ বিরতির পর শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে ফেরেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, ওই দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রথ একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে টেনে অপর একটি স্থানে নিয়ে যান। আবার নয়দিন পর একাদশী তিথিতে ওই রথকে টেনে আগের জায়গায় নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় দফায় রথ টেনে আনাকে উল্টোরথ বলে।