খাদ্য সহায়তা কমছে না: আপাতত শঙ্কামুক্ত রোহিঙ্গারা

আব্দুর রহমান
2025.03.28
কক্সবাজার
খাদ্য সহায়তা কমছে না: আপাতত  শঙ্কামুক্ত রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে আমেনা খাতুন নামে একজন রোহিঙ্গা মহিলা খাদ্য সহায়তা হ্রাসের কথা শুনে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ১৪ মার্চ ২০২৫
বেনারনিউজ/আব্দুর রহমান

বাংলাদেশের কক্সবাজার ও ভাসানচরে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে  জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।  আগামী এপ্রিল থেকে মাসে খাবারের বরাদ্দ কমিয়ে জনপ্রতি ৬ ডলারে নামানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

"রেশন সমন্বয় করা হবে, কমানো হবে না—কক্সবাজার ও ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য যথাক্রমে ১২ এবং ১৩ ডলার বরাদ্দ থাকছে, যা রোহিঙ্গাদের আগের মতো একই পরিমাণ খাদ্য পেতে সহায়তা করবে," বেনারনিউজকে বলেন ডব্লিউএফপির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের কমিউনিকেশন ও অ্যাভোকেসি প্রধান কুন লি। 

"দাতা সম্প্রদায়ের শক্তিশালী সহায়তার কারণে ডব্লিউএফপি পূর্ণ রেশন বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এপ্রিলের রেশন কাটছাঁট এড়ানো গেছে, বিশাল চাহিদার কারণে আমাদের এখনও টেকসই তহবিল সহায়তার প্রয়োজন, নইলে আমরা শিগগিরই আবার তহবিল সংকটে পড়ব," তিনি বলেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে যাওয়ার পর জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলো জাতিসংঘ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “ডব্লিউএফপি এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে, আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে ১২ ডলার বরাদ্দ কার্যকর হবে। “

fb274b7c-1be0-4204-a364-c506191f96e1.jpeg
বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) কেন্দ্র থেকে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বেরিয়ে আসছেন। ১৪ মার্চ, ২০২৫, (আবদুর রহমান/ বেনারনিউজ)

তবে ভাসানচরে যেসব রোহিঙ্গা বসবাস করছে তারা পাবেন ১৩ ডলার করে।  ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, তহবিল সংকট সত্ত্বেও খাদ্য সহায়তা একই রকম থাকছে,” বেনারকে মিজানুর রহমান।

এর আগে তহবিল সংকটের কথা উল্লেখ করে রোহিঙ্গাদের জন্য খাবারের বরাদ্দ সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে জনপ্রতি ৬ ডলারে নামানোর কথা জানিয়েছিল ডব্লিউএফপি।

গত ৫ মার্চ খাদ্য সহায়তা কমানো-সংক্রান্ত ডব্লিউএফপি’র চিঠি পেয়েছিল আরআরআরসি।  ওই চিঠিতে বলা হয়, রেশনের পরিমাণ সাড়ে ১২ ডলার অব্যাহত রাখতে তহবিল জোগাড়ের চেষ্টা করলেও প্রয়োজনীয় দাতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এরপর ১৪ মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের খোঁজখবর নেন।  রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ অর্ধেকে নামিয়ে আনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর বিষয়টি তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে জানাবেন।

এ সময় ক্যাম্পে  মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

দুশ্চিন্তা কমেছে রোহিঙ্গাদের

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কাছাকাছি কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমুড়া ২৭ নম্বর ক্যাম্পের অবস্থান।  নতুন-পুরানো মিলে সেখানে ২২ হাজার হাজারের বেশি রোহিঙ্গাদের বসতি।

ওই ক্যাম্পে হেড মাঝি মুহাম্মদ নুর (৩৫) বলেন, “ইতোমধ্যে জেনেছি আগামী এপ্রিল থেকে আমাদের ১২ ডলার করে দেওয়া হবে।  এটি রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক আনন্দের খবর।”

মুহাম্মদ নুর বেনারকে বলেন, “মূলত কিছু দিন আগে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের খোঁজখবর নেন।  সেসময় রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে বরাদ্দ কমানোর বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তাঁরা ক্যাম্প ঘুরে যাওয়ার পর এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত বিশ্বের কাছে বিরল হয়ে থাকবে।”

বেসরকারি সংস্থা পালস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আবু মোর্শেদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “খাদ্য সহায়তা আগের জায়গায় ফিরে আসায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের জন্য ভালো দিক।  কেননা বরাদ্দ কম হলে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প রাখা কঠিন হতো।  ফলে তারা (রোহিঙ্গারা) ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে স্থানীয়দের মজুরি দখল নিতেন, যার কারণে স্থানীয়-রোহিঙ্গাদের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।”

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, “বরাদ্দ কমিয়ে দিলে রোহিঙ্গারা পেটের তাগিদে অপরাধে জড়ানোর সম্ভবনা ছিল। আমি ধন্যবাদ জানাই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে-তাদের প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গারা অন্তত ঈদের আগে দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছে। ”

“আমি বিশ্বাস করি যারা খাদ্য সহায়তা সমস্যার সমাধান করেছে তারা চেষ্টা করলে রোহিঙ্গারা অব্যশই নিরাপদে মিয়ানমারে (নিজ দেশে) ফিরতে পারবে,” বলেন তিনি।

৭৩ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন ডলার নতুন সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সহায়তা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের জন্য জরুরি খাদ্য, পানীয় জল, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে।

সহায়তা প্যাকেজটি মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা- যেমন জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সহায়ক সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।

গতকাল পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস টুইটে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। মিয়ানমারে সামরিক অভিযান ও সহিংসতার মুখে তাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের আমন্ত্রণে সম্প্রতি সময়ে ৪ দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে আসেন আন্তোনিও গুতেরেস।

এর আগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে আন্তোনিও গুতেরেস প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সে সময় তিনি কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরও পরিদর্শন করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।