ত্রাণের অর্থ পরিচালনায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ চান রোহিঙ্গা অধিকার কর্মীরা
2024.03.29
ওয়াশিংটন

মিয়ানমার থেকে বিতারিত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় "কারাগারের মতো" শরণার্থী শিবিরগুলোতে বাস করছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত এইসব শরণার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী অধিকার কর্মীরা বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, শিবিরগুলিতে বৈদেশিক সহায়তা আরও বাড়বে, যদি এর কিছুটা সরাসরি শরণার্থীদের-পরিচালিত সংগঠনগুলোকে দেওয়া হয়।
তবে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-ইউএসএআইডি’র একজন প্রতিনিধি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে যাওয়ার পরে খুব সামান্যই অবশিষ্ট থাকে। বর্তমানে শরণার্থীদের মাসে মাত্র ১১০০ টাকার (১০ ডলার মূল্যের) খাবার সরবরাহ করা যাচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’র তথ্য অনুসারে গত বছরের শেষ দিকে যখন মাসিক খাদ্যের রেশন জনপ্রতি প্রায় ৮৮০ টাকা (৮ ডলার) থেকে বাড়িয়ে ১১০০ টাকা (১০ ডলারে) করা হয় তখন প্রায় ৯০ শতাংশ শরণার্থী "গ্রহণযোগ্য পরিমাণের খাদ্যের জন্য’ সংগ্রাম করছিল।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে সংঘটিত মিয়ানমারের নৃশংসতাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র "গণহত্যা" হিসাবে চিহ্নিত করার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে ক্যাপিটল হিলে আয়োজিত ঐ অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গারা বলেন, ”কক্সবাজারে শরণার্থীদের জন্য দাতাদের দেয়া অর্থের সবটা কার্যকর উপায়ে ব্যয় হচ্ছে, এমন নয়।”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জন্মগ্রহণকারী কানাডা-ভিত্তিক অধিকার কর্মী এবং রোহিঙ্গা মাইয়াফুইনর কোলাবোরেটিভ নেটওয়ার্কের পরিচালক ইয়াসমিন উল্লাহ বলেছেন, এ অর্থ কার্যকরভাবে ব্যয় করার উপায় আছে।’

তার সংগঠন ক্রাউডফান্ডিং এর মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ টাকা (২০ হাজার ডলার) সংগ্রহ করেছে। এ অর্থ শিবিরে শরণার্থী-চালিত সংগঠনগুলি সেখানে জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য বিতরণ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সাহায্যের প্রবাহ অনেক বেশি।
‘ আমরা আমাদের সমস্যা জানি। আমরা জানি কিভাবে এবং কোথায় এই টাকা ব্যয় করতে হবে। আমরা মাত্র ১০ হাজার ডলার দিয়ে অন্য যেকোনো মানবিক সংগঠনের চেয়ে ভাল চালাতে পারি,” তিনি বলেন। "আমরা সাহায্য সদ্ব্যবহার করার জন্য সরাসরি উদ্বাস্তুদের-নেতৃত্বাধীন প্রকল্প এবং উদ্বাস্তু-নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলির কাছে যেতে বলছি।’
অমীমাংসিত সমস্যা
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা হ্রাস পেয়েছে। দেশটি থেকে সাহায্য সংস্থাগুলির চাওয়া প্রায় ৯৩৩ কোটি টাকা (৮৫০ মিলিয়ন ডলার) বার্ষিক অনুদানের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশেরও কম পূরণ করা হয়েছে।
২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যে পুনর্বাসিত রোহিঙ্গা শরণার্থী লাকি করিম, যিনি এখন রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযানের সাথে কাজ করছেন, বলেছেন, শরণার্থী শিবিরে থাকা লোকদের সাহায্য করার জন্য পাঠানো যে কোনও আন্তর্জাতিক সাহায্য "শরণার্থী হিসেবে আমাদের কাছে অনেক বড় ব্যাপার" ও প্রশংসনীয়।
কিন্তু তিনি প্রশ্ন তোলেন, প্রতি বছর শিবির গুলির জন্য হাজার কোটি টাকা পাঠানোর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না কেন?
করিম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র কত বছর ধরে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করে আসছে তা ব্যাপার নয়। বিষয় হল, আপনারা সমাধান করতে পারছেন কিনা?"
“আপনি কি শ্রম সমস্যার সমাধান করেছেন? আপনি কি শিবিরে যৌন সহিংসতাসহ ভিতরের অন্যান্য সহিংসতার সমাধান করেছেন? আপনি কি মানব পাচার সমস্যা সমাধান করেছেন? আপনি কি ক্যাম্পে নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিত করেছেন? আপনি কি রাতে ক্যাম্পে দাপিয়ে বেড়ানো অপরাধী চক্রদের শনাক্ত করেছেন? এগুলিই আমাদের কাছে মূল প্রশ্ন," বলেন তিনি।
"তহবিল বাড়ানো নিয়ে আমি যখন ইউএসএআইডির সাথে কথা বলেছিলাম, উদাহরণস্বরূপ, তারা বলেছিল, 'ওহ, না লাকি, যুদ্ধের কারণে আমাদের এখন অন্যান্য জায়গার কথা ভাবতে হচ্ছে, যেমন গাজা এবং ইউক্রেন। অন্যান্য অনেক কেস প্রতিবছর আসছে,” করিম বলেন।
তবে উল্লাহর মতো তিনিও বলেন, কিছু সাহায্য আরও কার্যকরভাবে ব্যয় করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, “কক্সবাজার এবং অন্যত্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যে পরিমাণ তহবিল পাঠাচ্ছেন তা সঠিক সময়ে সঠিক লোকেদের কাছে প্রয়োজন মাফিক যাওয়া উচিত। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া আপনি কীভাবে এটি নিশ্চিত করবেন?"
সীমিত তহবিল
ইউএসএআইডির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া পরিচালক পিটার ইয়ং অনুষ্ঠানে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সালের গণহত্যার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য ২০,৮৫২ কোটি টাকা (১.৯ বিলিয়ন ডলার) বেশি অনুদান পাঠিয়েছে।
তবে তিনি স্বীকার করেন যে পরিমাণ বৈশ্বিক সহায়তা যাচ্ছে তা শরণার্থী শিবিরে "মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।" শরণার্থীদের জন্য এক সময় মাসিক খাদ্য রেশন ছিল ১৩১৭ টাকা (১২ ডলার)। শেষ পর্যন্ত ১১০০ টাকায় (১০ ডলার) ফেরত যাওয়ার আগে গত বছর তা নামিয়ে মাত্র ৮৮০ টাকা (৮ ডলার) করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, এই স্বল্প রেশন বিতরণ করার পরে তাদের কাছে সামান্য তহবিল অবশিষ্ট থাকায় দিন শেষে সাহায্য সংস্থাগুলি তার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

ইয়াং বলেন, "রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে তাদের মাধ্যমে কাজ করার গুরুত্ব বিষয়ে, লাকি যেমনটি বলছিলেন, আমরা অবশ্যই একমত। সেখানে যাতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে পরামর্শ করে প্রকল্পগুলি তৈরি করা এবং তাতে রোহিঙ্গা কর্মী নিয়োগ করা হয় এ বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করি।"
"একই সাথে আপনারা অংক করে দেখুন ১০ লাখ মানুষের জন্য মাসে মাথাপিছ ১১০০ টাকার (১০ ডলার) বাজেট কতো দ্রুত শেষ হয়ে যায়," বলেন তিনি। "সুতরাং আমাদের যা আছে তা দিয়ে খাদ্য ছাড়া অন্যান্য প্রকল্প গ্রহণের পরিধি সীমিত।"
খাদ্যের বাইরে শরণার্থী শিবিরগুলির জন্য প্রথম অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে একটি হবে "টেকসই আশ্রয়স্থল। শিবিরগুলিতে ধ্বংসাত্মক দুর্যোগ প্রবণতা এবং "সেখানে প্রচুর লোক ভবিষ্যতে আরও অনেকদিন থাকবে এই বিষয় আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে," ইয়াং বলেন।
রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী করিম বলেন, “রোহিঙ্গাদের কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা না দেওয়া পর্যন্ত শিবিরগুলিতে তেমন কোনও পরিবর্তন হবে না। আর ছয় মাসে একবার ক্যাপিটল হিলে সভা করতে আসলে লাভ নেই।”
"আমাদের একগুচ্ছ নোট দিয়ে আপনারা বিদায় নেন, আর আমাদের ভুলে যান। এই ফোরামে আমাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট আসন চাই," বলেন তিনি।