মালদ্বীপের মডেল রাউধা ‘আত্মহত্যার’ ১২ দিন পরে হত্যা মামলা

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.04.10
ঢাকা
আদালত চত্বরে এভাবেই উপস্থিত হন রাউধার বাবা মোহাম্মদ আতিফ। হাতে লেখা কাগজে মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে আদালত চত্বরে এভাবেই উপস্থিত হন রাউধার বাবা মোহাম্মদ আতিফ। এপ্রিল ১০, ২০১৭।
স্টার মেইল।

মালদ্বীপের মডেল কন্যা রাউধা আতিফ আত্মহত্যা করেননি বরং তাঁকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে মামলা করেছেন তাঁর বাবা মোহাম্মদ আতিফ। তাঁর মৃত্যুর ১২দিন পরে সোমবার রাজশাহী মহানগর আদালতে মামলাটি করেন মালদ্বীপের এই নাগরিক।

রাউধার কাশ্মীরি এক সহপাঠীকে হত্যাকারী হিসেবে অভিযোগ করে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী কামরুল মনির।

তবে এখন পর্যন্ত হত্যার কোনো প্রমাণ পায়নি বাংলাদেশের পুলিশ। ঘটনা তদন্তে মালদ্বীপ থেকে দুজন পুলিশ আসলেও তারা ফিরে গেছেন।

গত ২৯ মার্চ রাজশাহী মহানগরীতে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রী হোস্টেলে তার কামরায় রাউধা আতিফের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তার দুই ভারতীয় সহপাঠী। বান্ধবীর ওড়না প্যাঁচানো ঝুলন্ত লাশ নিচে নামান তাঁরা।

মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং তাঁর মা-বাবাসহ পরিবারের ১২ সদস্য পরের দিন রাউধার লাশ দেখতে রাজশাহীতে যান। ৩১ মার্চ তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছেন উল্লেখ করে বোর্ড ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরদিন রাজশাহীর হেতেম খাঁ কবরস্থানে রাউধার দাফন করা হয়।

নিহত মডেল রাউধা আতিফ। ফাইল ছবি।
নিহত মডেল রাউধা আতিফ। ফাইল ছবি।
[স্টার মেইল]
রাউধা আতিফ রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীও একই প্রতিষ্ঠানের একই বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি ভারতের কাশ্মিরের উরিতে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী এখন রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন।

মহানগর আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য শাহ মখদুম থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন বলে জানান কামরুল মনির।

রাজশাহী মহানগর সহকারী কমিশনার (ডিবি) মো. আল-আমিন হোসেন বেনারকে বলেন, “আমরা আদালতের আদেশ মেনে কাজ করব।”

তিনি বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত এটি হত্যাকাণ্ড এমন কোনো আলামত পাইনি।”

আইনজীবী কামরুল মনির বলেন, রাউধার বাবা মনে করেন তাঁর মেয়ের কাশ্মীরি ওই সহপাঠী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কারণ, ওই সহপাঠী রাউধার লাশ নামিয়েছে।

বাবা মোহাম্মদ আতিফ আদালত চত্বরে একটি সাদা কাগজে “আমি আমার মেয়ে রাউধা আতিফের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই” লিখে বসে ছিলেন।

মোহাম্মদ আতিফকে উদ্ধৃত করে আইনজীবী মনির বলেন, “কাশ্মীরি ওই সহপাঠী রাউধাকে তার মৃত্যুর সাত দিন আগে ফলের রসের সঙ্গে ঘুমের বড়ি খাওয়ায়। বিষয়টি রাউধা তাঁর মাকে জানিয়েছিল।”

তাঁর ডাক্তার বাবা মোহাম্মদ আতিফ জানিয়েছেন রাউধার গলায় যে চিহ্ন তা ওড়নার নয়; বরং এটি দড়ির দাগ।

সহকারী কমিশনার (ডিবি) আল-আমিন হোসেন বলেন, “মালদ্বীপ থেকে দুজন পুলিশ অফিসার বাংলাদেশে এসে কয়েক দিন অবস্থান করে তদন্ত করে গেছেন। তাঁরা আমাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেননি যে এটা হত্যাকাণ্ড।”

গত ৩০ মার্চ থেকে রাজশাহীতে অবস্থান করছে রাউধার পরিবার। রাউধাকে রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আল-আমিন হোসেন।

তিনি বলেন, “পুলিশ ইতিমধ্যে রাউধার মোবাইল ফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র আলামত হিসেবে সংগ্রহ করেছে।”

“প্রতিটি হত্যার পেছনে মোটিভ থাকে। আমরা এখনো কাশ্মীরি ওই সহপাঠীর কোনো মোটিভ খুঁজে পাইনি,” বলেন আল-আমিন।

রাজশাহী মহানগরের নওদাপাড়া অধিবাসী আব্দুল মান্নান বেনারকে জানান, “ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করে।”

“এখানে অনেক দেশি-বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। রাউধার মৃত্যু রাজশাহীর তথা বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট করেছে। সরকারের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই মৃত্যুর কারণ বের করে জানানো,” মান্নান বলেন।

মান্নান বলেন, “তা না হলে রাজশাহীতে অবস্থানকারী অন্যান্য বিদেশিরা নিরাপদ বোধ করবে না। ভবিষ্যতে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলাদেশ ও রাজশাহীতে আসতে চাইবে না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, মালদ্বীপের দুই পুলিশ অফিসার আমাদের তদন্ত সঠিক মনে করে দেশে চলে গেছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।