সৌদি ফেরার টিকিটের জন্য আটকে পড়া প্রবাসীদের ঢাকায় বিক্ষোভ

জেসমিন পাপড়ি
2020.09.22
ঢাকা
সৌদি ফেরার টিকিটের জন্য আটকে পড়া প্রবাসীদের ঢাকায় বিক্ষোভ1000 সৌদি আরবে যাওয়ার প্লেনের টিকিটের দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় সৌদি এয়ারলাইন্স ঘেরাও করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০।
নিউজরুম ফটো।

সৌদি আরবে ফেরার টিকিট পাওয়ার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের ​মতো মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার প্রবাসী শ্রমিক। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা সড়ক ছেড়ে​ দেন।

এই তথ্য জানিয়ে তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল উদ্দিন বেনারকে বলেন, সরকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে—এমন আশ্বাস পেয়ে শ্রমিকেরা অবরোধ স্থগিত করেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রবাসীরা জানান, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে আটকা পড়েছেন তাঁরা। এর আগে সোমবারও মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা।

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশে এসে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের জন্য ইতিমধ্যে তিন দফা ইকামার (ভিসা) মেয়াদ বাড়িয়েছে সৌদি সরকার। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ওই মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ওই সময়ের আগেই সৌদিতে ফিরতে চান প্রবাসীরা। অন্যথায় চাকরি হারাতে হবে তাঁদের অনেককেই।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নতুন শ্রমিকও আছেন, যাদের সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ভিসা, নিয়োগপত্রসহ সব কিছু প্রস্তুত রয়েছে। তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।

বর্তমানে শুধুমাত্র সৌদি এয়ালাইন্সই ঢাকা থেকে সৌদি আরবে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সৌদিতে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেলেও বিমান অবতরণের অনুমতি এখনো পায়নি বলে বেনারকে জানান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন।

তিনি বলেন, “সৌদি আরব ১ অক্টোবর থেকে বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। আমরা স্লটও পেয়েছি। তবে আসন বরাদ্দ আরম্ভ করার আগে ল্যান্ডিং পারমিশন লাগে, এটা পা্ওয়ার চেষ্টা চলছে।”

“কিন্তু এটা (ল্যান্ডিং পারমিশন) এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে যাত্রীদের আসন বরাদ্দের জন্য এখনই ফ্লাইট ঘোষণা করা যাচ্ছে না। আমাদের লোক ল্যান্ডিং পারমিশনের জন্য ওখানে (সৌদিতে) আছে,” জানান মোকাব্বির।

এ অবস্থায় সেপ্টেম্বর থেকে সৌদি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দেয়ায় টিকিটের জন্য ভিড় করতে থাকেন প্রবাসীরা। বেশিরভাগ প্রবাসী টিকিট না পেয়ে দুই দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন। যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখার কথা জানায় সৌদি এয়ারলাইন্স।

সৌদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে মাত্র দুটি সাপ্তাহিক ফ্লাইট পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছে। সৌদি যেতে আগ্রহী বিপুল সংখ্যক যাত্রীর তুলনায় অনুমোদিত এই ফ্লাইটের অনুমোদিত সংখ্যা অপ্রতুল।

সৌদি এয়ারলাইন্স জানায়, অন্তত ৩০ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক সৌদি আরবে নিজেদের কর্মস্থলে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগেরই ভিসার মেয়াদ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নিকট ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়াতে আবেদন করেছে সৌদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

চাকরি হারানোর শঙ্কায় প্রবাসীরা

মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার এলাকায় কয়েক হাজার অভিবাসী শ্রমিক সৌদি যাওয়ার টিকিটের জন্য বিক্ষোভ করে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ সময় রাজধানীর ব্যস্ততম এই এলাকায় প্রায় ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ থাকে।

টিকেটের জন্য বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাতক্ষীরার বাসিন্দা আবদুর রউফ বেনারকে বলেন, “গত মার্চ মাসে ছুটি নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম। ছুটি শেষ হলেও লকডাউনের কারণে সৌদি ফিরতে পারিনি।”

“দেশে ফেরার সময় সৌদি এয়ারলাইন্সে ফিরতি টিকিটও কেটেছিলাম। তারপরেও সব দেশে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় ফেরা হয়নি। এদিকে আকামার মেয়াদও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। টিকিটের জন্য কয়েকদিন ধরে হোটেল ভাড়া করে ঢাকায় অবস্থান করছি,” বলেন তিনি।

“বেশ কিছুদিন দেশে থাকায় জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছি ধার-দেনা করে। সৌদিতে যেখানে কাজ করতাম, সেই মালিক ফেরার তাড়া দিয়েছেন। আকামার মেয়াদ থাকতে থাকতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেতে না পারলে বেকার হয়ে পড়তে হবে,” বলেন আবদুর রউফ।

ভোলা থেকে আসা মো. আবদুল্লাহ বেনারকে বলন, “সাত লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে কাজে যাওয়ার ভিসা সংগ্রহ করেছেন তিনি। গত ২৫ মার্চ তাঁর সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা মহামারির কারণে তাঁর সৌদি যাওয়া আটকে যায়।”

তিনি বলেন, “ঋণ নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার টাকা যোগাড় করেছিলাম। কাজ করে ঋণ শোধ করার কথা। কিন্তু যেতে না পারায় ঋণের বোঝাও বাড়ছে। আবার আমার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে। সৌদি যেতে না পারলে পুরো পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।”

জহিরুল আলম নামে একজন শ্রমিক বেনারকে বলেন, জেদ্দায় তাঁ​র কর্মস্থল। সেখানে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে না পৌঁছুলে তাঁর চাকরি থাকবে না।

আকামার মেয়াদ বাড়াতে সৌদিকে চিঠি

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে এসে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের আকামার মেয়াদ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়াতে সৌদি আরবের প্রতি অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লেখা এক চিঠিতে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস এই অনুরোধ জানিয়েছে বলে বেনারকে জানান দূতাবাসের উপ-মিশন প্রধান আনিসুল হক।

তিনি বলেন, “আগামী জানুয়ারির আগে সৌদি আরব কোনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করবে না। আমরা অনুরোধ করেছি বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালুর অন্তত এক মাস পর পর্যন্ত যাতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।