হাইকোর্টের নির্দেশে ছাত্রত্ব ফিরে পেল দুই শিশু
2016.03.29

অভিভাবকের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিতর্কের জের ধরে রাজধানীর স্যার জন উইলসন স্কুল কর্তৃপক্ষ দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছিল। গতকাল সোমবার স্কুল কর্তৃপক্ষের দেওয়া ওই আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট ।
আদালত বলেছেন, ওই দুই শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে দিতে হবে। এই রায়কে ‘যুগান্তকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন অভিভাবকদের কয়েকজন। তাঁরা বলছেন, রাজধানীর অভিজাত ও ইংরেজি মাধ্যম কয়েকটি স্কুল সামান্য অজুহাতে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করে থাকে।
“এটা ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা এবং এই আদেশের ফলে স্কুল কর্তৃপক্ষের অযৌক্তিক আদেশে বহিষ্কারের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা আইনের আশ্রয় নিতে উদ্বুদ্ধ হবেন,” বেনারকে জানান অভিভাবক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক জিয়াউল কবির দুলু।
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার ওই আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, স্কুল কর্তৃপক্ষের বহিষ্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ওই দুই শিক্ষার্থীর বাবা মিনহাজ আহমেদ। মিনহাজ আহমেদের এক মেয়ে ও এক ছেলে ওই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল।
মাস তিনেক আগে জন উইলসন স্কুল বাড্ডার সাতারকুলে কেনা জমিতে স্থায়ী ভবনে স্থানান্তর হয়। এর আগে স্কুলটি গুলশানে ছিল। ১৯৯৫ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইংরেজি মাধ্যম অভিজাত এই স্কুলটির শিক্ষার্থী সংখ্যা এখন প্রায় ১২শ।
এদিকে গত ২৪ মার্চ মিনহাজ হাইকোর্টে এই আবেদনটি করেন। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১০ মার্চ মিনহাজ আহমেদ তাঁর ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যান। ওই স্কুলের অভ্যর্থনাকক্ষে থাকা কর্মী জানতে চান, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কেমন হয়েছে।
জবাবে তিনি বলেন, ভালো হলেও স্কুলের মাঠটি খুব ছোট হওয়ায় সেখানে ঠিকভাবে খেলাধুলা করা যায় না।
এ সময় অভ্যর্থনাকক্ষের কর্মী মাঠ না থাকার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেন। কর্মীর সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে নিজেকে প্রকল্প পরিচালক পরিচয় দেন। এরপর মাঠ নিয়ে কথা বলার সূত্র ধরে অভিভাবকের সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
“আমি তাদের বলেছিলাম, স্কুলটি যেহেতু নিজের জায়গায় তৈরি হচ্ছে, সেহেতু মাঠটা একটু বড় করলে ভালো হতো। এতে ওই ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হলে আমি এ বিষয়ে কথা না বলে চলে আসি। ওই দিন বিকেলেই স্কুল কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে আমার দুই সন্তানকে বহিষ্কারের কথা জানায়,” বেনারকে জানান মিনহাজ আহমেদ।
“আমি স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছি। কিন্তু তাঁরা সন্তানদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় আইনের আশ্রয় নেই,” জানান ওই অভিভাবক।
স্কুলের অধ্যক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বেনারকে জানান, আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি ইঙ্গিত দেন, হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ আপিল করবেন।