শেখ হাসিনার অদম্য শাসন
2024.01.08
ওয়াশিংটন ডিসি

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও শরিকদের যুগপৎ আন্দোলন ও বয়কটের মধ্যে অনেকটা ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন’ ও ‘একতরফা’ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ করার প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বলেন, “চলার পথে যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি করে থাকি, তাহলে আপনারা ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন—এটাই আমার আবেদন। আবার সরকার গঠন করতে পারলে ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ পাব। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।”
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে “মানবতার জননী” হিসেবে অভিহিত করা হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ পরিচালনায় তিনি ও তাঁর সরকার সমালোচকদের ক্ষমা করেনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী নীতি অনুসরণ, সাংবাদিক ও সমালোচকদের গ্রেপ্তার, গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ, বিরোধীদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যুসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ ওঠে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিএনপির অভিযোগ, রোববার নির্বাচনের আগ পর্যন্ত গত কয়েক মাসে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী দলগুলোর কয়েক হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে, নির্বাচনের আগে দলের শীর্ষ নেতাদের পাঠানো হয় কারাগারে।

বেদনায় গড়া রাজনৈতিক জীবন
ঘাতকের বুলেট শেখ হাসিনাকে রাজনীতিতে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের গুলি করে হত্যার ছয় বছর পর হাসিনা দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যার সময় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় সেই রক্তবন্যার কবল থেকে রক্ষা পান।
“আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য রাজনীতিতে পা দিয়েছি,” বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন শেখ হাসিনা।
তাঁর প্রয়াত পিতার দায়িত্ব এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছেন হাসিনা। বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত শেখ মুজিবুর রহমান নতুন দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সব রাজনৈতিক দল ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সংবাদপত্রকে নিষিদ্ধ করেন। বাকশাল নামে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আদলে একদলীয় ব্যবস্থা চালু করেন।
সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিন প্রকাশিত শেখ হাসিনার প্রোফাইলে লেখা হয়েছে, তিনি মুজিবের ব্যক্তিত্বকে ঘিরে এক শ্বাসরুদ্ধকর ধর্ম প্রচার করেছেন; জাতির পিতার এক বিশাল প্রতিকৃতি আমাদের কথোপকথনে ফুটে উঠেছে এবং তাঁর ছবি প্রতিটি সরকারি কার্যালয় ও ওয়েবসাইটে শোভা পায়।
সমালোচকদের অভিযোগ, হাসিনা প্রকৃতপক্ষেই দ্বিতীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে তিনি ক্ষমতায় আরোহণ করেছিলেন অধিকতর গণতান্ত্রিক পথে।
এর আগে তিনি ৬০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পঞ্চম মেয়াদ শুরুর সময় তার উত্তরাধিকারী কে হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এক সময় তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ উত্তরাধিকারী হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তবে তিনি উত্তরাধিকারী হবেন কি না এখন আর তা স্পষ্ট নয়।
হাসিনার বোন শেখ রেহানাকে প্রায়ই নির্বাচনী সমাবেশে দেখা যায় এবং তিনিই তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরি বলে গুঞ্জন রয়েছে।
‘জননেত্রী’
আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই হাসিনা ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তখন দেশ শাসন করতেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, যিনি ছিলেন একজন সামরিক জেনারেল।
হাসিনা ফিরে আসার কিছু দিন পর এক সেনা অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন, যার মধ্য দিয়ে আরেক সেনা জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্ষমতা দখলের পথ তৈরি হয়।
গণআন্দোলনে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে দুই নেত্রীর বৈরিতা শুরু হয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য হাসিনাকে “গণতন্ত্রের মানসকন্যা” অভিহিত করা হয়।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি উপেক্ষা করে বিএনপি নির্বাচন আয়োজন করে। সেই নির্বাচন বর্জনে বিরোধী দলগুলোর নেতৃত্ব দেন হাসিনা।
হাসিনার ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মতোই বিএনপি সেবার কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল। আওয়ামী লীগের ক্রমাগত রাস্তার আন্দোলন খালেদা জিয়ার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে এবং একটি নবগঠিত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনে নতুন নির্বাচন আয়োজন হয়।
ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।
তাঁর প্রথম মেয়াদে রাজনৈতিক ‘গডফাদারদের’ উত্থানের কাল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাকে মূল্য দিতে হয়েছিল।
তিনি ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছিলেন। যদিও তৎকালীন বিদ্রোহীদের কেউ কেউ এখন বলেন, তাঁরা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন এবং বিক্ষিপ্ত সহিংসতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে আশির দশকের অশান্ত যুগের তুলনায় এই অঞ্চলটি আজ অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ।

বিরোধীদলে থাকার বছরগুলো
২০০১ সালে আবার বিরোধী দলে গেলেও আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক কৌশলের জন্য পরিচিত হাসিনার আওয়ামী লীগ একটি নিরলস শক্তি ছিল। দলটির ডাকা ঘন ঘন দেশব্যাপী ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধ বিএনপি সরকারকে পিছু হটিয়েছিল।
ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ও মুসলিম চরমপন্থার উত্থান থেকে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি পর্যন্ত তৎকালীন সরকারের রোগগুলো তিনি সফলভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন। এতে তিনি পশ্চিমা দেশ, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও সুশীল সমাজের একটি বড়ো অংশের সহানুভূতি অর্জন করেছিলেন। সেই সুশীল সমাজ নিয়ে তিনি মাঝেমধ্যে তির্যক মন্তব্য করেন।
বারবার জীবনের ঝুঁকিতে
আওয়ামী লীগের পরিসংখ্যান অনুসারে, তিনি ১৯টির মতো হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন। যার মধ্যে শেষেরটি ঘটেছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। সেই ঘটনায় তিনি গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান, যাতে প্রায় দুই ডজন মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা ওই ঘটনায় বিএনপি সরকারকে দায়ী করেছেন এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন।
২০০৬ সালে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে বিএনপির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় কারসাজির অভিযোগ এনে হাসিনার দল আবারও নির্বাচন বয়কট করে।
এর মাধ্যমে সৃষ্ট রাজপথের রক্তাক্ত সংঘাত ২০০৭ সালে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ করার পথ পরিষ্কার করেছিল এবং এর জন্য তিনি বিজয় মিছিল করেছিলেন। সেনা সমর্থিত নতুন সরকার দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া উভয়কেই কারাগারে পাঠায়।
এক বছর পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দু’জনকেই মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ওই নির্বাচনে হাসিনা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন।

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের সীমান্ত বাহিনীর সদস্যরা সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে হাসিনার নতুন মেয়াদ প্রথম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। ফলে আরেকটি অভ্যুত্থানের হুমকি সৃষ্টি হয়েছিল।
পরবর্তী বছরগুলোতে শেখ হাসিনা বিপুল প্রতিরক্ষা বাজেট ও অন্যান্যভাবে বড়ো অংকের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে এবং যাদের প্রতিপক্ষ মনে হয়েছে তাঁদের মূল উৎপাটনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।
হাসিনা ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ বিএনপির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করার অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিচারের জন্য তাঁর সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। অভিযুক্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
যদিও মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই বিচার ত্রুটিপূর্ণ বলে সমালোচনা করে।
ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন ও নাস্তিকদের কঠোর শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে একটি পৃথক মুসলিম প্রেশার গ্রুপ হেফাজতে ইসলাম আবির্ভূত হয়। অধিক মাত্রায় শক্তি প্রয়োগ ও কূটকৌশলের মাধ্যমে হাসিনা তাদের দমন করেন বলে অভিযোগ আছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে সে সময় গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েছিল। তবে সরকারি কর্মকর্তারা এই ধরনের সমালোচনার মুখে ক্রমাগত পিছু হটেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সে সময় বেনারকে বলেছিলেন, “এসব (অভিযোগ) সত্য নয়। আমরা তথাকথিত অপহরণের রিপোর্ট করা প্রতিটি ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে নিই।”
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যার জেদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই হাসিনাই তা বিলুপ্ত করলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে। ফলে তিনি অনায়াসে আবারও সরকারে আসেন।

বাংলাদেশে মুসলিম চরমপন্থার সমস্যা মোকাবেলায় হাসিনাকে ব্যাপকভাবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়; বিশেষ করে ইসলামিক স্টেট ও আল-কায়েদার মতো দলগুলো দেশে ধর্ম নিরপেক্ষ লেখক ও ব্লগারদের হত্যা করার পর।
দেশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলা হয়েছিল হাসিনার আমলে। গুলশানের একটি ক্যাফেতে আইএসপন্থী জঙ্গিরা অনেককে জিম্মি করলে অন্তত ২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই ঘটনার বিচার সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠতে থাকে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠীগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালের নির্বাচনী বছরে মাদকবিরোধী অভিযানে ৪০০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে।
ওই বছর সরকার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে একটি আইন সংশোধন করে আরও কঠোর রূপ দেয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের মতপ্রকাশের অধিকারকে খর্ব করে। সরকারের সমালোচকরা ওই আইনে গ্রেপ্তার হতে থাকেন এবং নিরবচ্ছিন্ন মতপ্রকাশের পরিবেশ রুদ্ধ হয়।
সেই বছরই হাজার হাজার স্কুল শিক্ষার্থী সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নির্মমভাবে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দি হন এবং পরে মানবিক কারণে নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান। তারপর থেকে তিনি রাজনীতিতে নীরব। চিকিৎসকদের পরামর্শ সত্ত্বেও তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে ভ্রমণ করতে দেওয়া হয়নি।
২০১৮ সালের নির্বাচনেও হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পথ তৈরির জন্য পদত্যাগ করতে রাজি হননি। তবে বিএনপির বিপর্যস্ত নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে রাজি হন। ওই নির্বাচনে আগের রাতেই ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ ওঠে। হাসিনার দল ৯৫ শতাংশের বেশি আসনে জয়ী হওয়ার এক অস্বাভাবিক ফলাফল আসে।
শক্তিশালী তৈরি পোশাক খাত এবং লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বদৌলতে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছিল।
এই সময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে এবং ২০১৫ সালে দেশটি স্বল্পোন্নত থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে, যে প্রক্রিয়া ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
হাসিনার সরকার বহু কোটি ডলার ব্যয়ে চীন সমর্থিত অনেকগুলো বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প চালু করে, যা প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মূল আমদানিকারক পশ্চিমা দেশগুলোতে মহামারির প্রভাব দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধাক্কা দিয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেল ও শস্যের দাম বেড়েছে, জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়েছে; যা অনেক মধ্যম আয়ের পরিবারকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার উল্লেখযোগ্য অবমূল্যায়ন এসব পরিবারের সঞ্চয়ের ওপর টান তৈরি করেছে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে কমে ১৭০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা দিয়ে মাত্র তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সরকার আগামী বছর বিপুল বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ শুরু করলে তা আরও হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ অবস্থায় অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ তাঁর শাসনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারমুখী বলে ভবিষ্যৎ বাণী করছেন।
সম্ভাব্য রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও তাঁর সম্ভাব্য পরিণতি পর্যবেক্ষণ করে ব্রাসেলসভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ গত সপ্তাহে তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, “সরকার আরও স্পষ্ট কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।”
সংস্থাটি বলেছে, “অর্থনীতিতে টানা-পোড়েনের মধ্যে সমর্থন হ্রাস পাওয়ায় ক্ষমতার ওপর দখল বজায় রাখতে আওয়ামী লীগকে সম্ভবত অধিক মাত্রায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ এবং জবরদস্তিতে জড়িত হতে হবে।”