মানবপাচারের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক বাংলাদেশির ৪৬ মাস কারাদণ্ড

জেসমিন পাপড়ি
2021.09.29
ঢাকা
মানবপাচারের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক বাংলাদেশির ৪৬ মাস কারাদণ্ড যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সীমান্তবর্তী রিও গ্র্যান্ডি নদীর তীরে টেক্সাস রাজ্য পুলিশের পাহারা। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১।
[রয়টার্স]

মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মানবপাচারের অপরাধে মোহাম্মদ মিলন হোসেন নামে এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিককে ৪৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। 

আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে তাঁকে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়। 

এতে বলা হয়, ৪১ বছর বয়সী বাংলাদেশের মিলন হোসেন মেক্সিকোর তাপাসুলাতে বসবাস করতেন। 

তিনি বাংলাদেশ, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকোতে বসবাসরত মানব পাচারকারীদের সঙ্গে যোগসাজশে বিপুল অর্থের বিনিময়ে লোকজনকে মার্কিন সীমান্তের কাছে নিয়ে আসতেন। পাচারের শিকার হওয়া লোকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর আগে মেক্সিকোর তাপাসুলার একটি হোটেলে রাখতেন। 

মিলন হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ লোকদের টিকিটসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহায়তা দিয়ে মেক্সিকোর মন্টেরিতে তার সহযোগী মোক্তার হোসেনের কাছে পাঠাতেন। এরপর মোক্তার মন্টেরি থেকে ওই লোকদের অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে সহায়তা করতেন। 

মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বেনারকে বলেন, “মানবপাচারে জড়িত এই ব্যক্তি সম্পর্কে দূতাবাস অবহিত ছিল। তাঁর সম্পর্কে ঢাকা এবং ওয়াশিংটনকে (যুক্তরাষ্ট্র) অবহিত করা হয়েছিল।” 

“মানবপাচারের বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে,” বলেন রাষ্ট্রদূত। 

মার্কিন আদালতের এই বিচারকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িতদের জন্য এটা একটা দৃষ্টান্ত।” 

মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়ের অপরাধ বিভাগের সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল কেনেথ এ পোলিট বলেন, মানব পাচারকারীরা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে তৎপরতা চালিয়ে বাংলাদেশের অভিবাসীদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছেন।” 

“মিলন হোসেনের মতো মানব পাচারকারীদের আটক করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যক্তিদের মূলোৎপাটনের জন্য মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয় দেশে এবং বিদেশে তার অংশীজনদের নিয়ে তৎপরতা অব্যাহত রাখবে,” বলেন তিনি। 

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মানবপাচারে যুক্ত থাকার দায়ে মিলনের সহযোগী মোক্তার হোসেনকেও কারাদণ্ড দেয় যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত। 

মোক্তারকে (৩২) মেক্সিকো থেকে টেক্সাস সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে পাচারে যুক্ত থাকার দায়ে ৪৬ মাসের সাজা দেয়া হয় বলে জানায় দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষে মোক্তারকেও আরো তিন বছর পর্যবেক্ষণে রাখার কথা বলা হয়।

বিচার বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়, মোক্তার ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের কথা স্বীকার করেছিলেন। 

মোক্তার মেক্সিকোর মন্টেরিতে বসবাস করতেন। সেখান থেকে মানব পাচার কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর আগে সেখানে এনে জড়ো করা ছাড়াও কীভাবে রিও গ্র্যান্ডি নদী পার করে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করানো হবে সে বিষয়েও গাড়ি চালকদের নির্দেশনা দিতেন। 

মোক্তারকে ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্র অবতরণের পর টেক্সাসের জর্জ বুশ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে মোক্তার মোট ১৪ জন বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের কথা স্বীকার করেছিলেন বলে সে সময় জানায় ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।