মন্ত্রীর দাবি সরকারের অনুরোধেই ভুয়া আইডি বন্ধ করছে ফেসবুক

প্রাপ্তি রহমান
2017.04.18
ঢাকা
ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারী শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান এখন দ্বিতীয়। ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারী শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান এখন দ্বিতীয়। এপ্রিল ২০১৭।
স্টার মেইল

সপ্তাহের শুরু থেকেই বাংলাদেশে আলোচনার বড় অংশ দখল করে নিয়েছে ফেসবুক। সরকারের তরফ থেকে ধারাবাহিক দেনদরবারের পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গত শনিবার থেকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে শুরু করেছে।

এরই মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারী শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান এখন দ্বিতীয়।

মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গত রোববার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ভুয়া পেজ ও অ্যাকাউন্ট বন্ধের কাজ করছে।

“বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংসদ সদস্যদের বাস্তব পেজগুলো ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ‘ভেরিফায়েড’ করে দেবে। এর বাইরে তাঁদের নামে থাকা যে কোনো অ্যাকাউন্ট তখন ভুয়া বলে বিবেচিত হবে। আমরা কিছু আইডি এখান থেকে পাঠিয়েছি, ওরা নিজেরাও কিছু করছে,” সাংবাদিকদের বলেন তারানা হালিম।

ফেসবুক এ অভিযানের নাম দিয়েছে স্প্যাম অপারেশন। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ অন্য কয়েকটি দেশ থেকে আসা ভুয়া লাইক ও মন্তব্য প্রতিরোধে ফেসবুক এ উদ্যোগ নিয়েছে।

ফেসবুকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক শবনম শায়খ একটি ব্লগ পোস্টে বলেন, ছয় মাস চেষ্টার পর ফেসবুক একটি সংঘবদ্ধ চক্র শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ভুয়া আইডি ব্যবহারকারী এই চক্রটি অযাচাইকৃত তথ্য পোস্ট করছিল।

ওই পোস্টে শবনম আরও বলেন, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। এর ব্যাখ্যায় তারা বলছে, “আমরা দেখেছি মানুষ যখন তার নিজেকে উপস্থাপন করে, তখন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করে। মিথ্যা বা ভুয়া অ্যাকাউন্টে সেভাবে করে না।”

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইন্টারনেট সেফটি সার্ভিস (বেসিস) এর সভাপতি মোস্তফা জব্বার ফেসবুকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন ভুয়া পরিচয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা অনৈতিক।

“প্রযুক্তির কারণে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে। এই আইনের প্রথম শর্তই হলো অনলাইনে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। ফেসবুক এই উদ্যোগ নিয়েছে, তাদের সাধুবাদ জানাই,” বেনারকে বলেন মোস্তফা জব্বার।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ২ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছে। দেশে যত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে, এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই ফেসবুক। ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ পুরুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন, নারীর সংখ্যা ৬৩ লাখ নারী। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ৯৩ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে।

কত অ্যাকাউন্ট বন্ধ হলো, কেন বন্ধ হচ্ছে

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মোট কতটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে তা জানেন না বলে এক প্রশ্নের উত্তরে সাংবাদিকদের জানান তারানা হালিম।

বলা হচ্ছে, কেউ যদি মনে করেন অন্যায়ভাবে তাঁর আইডি অচল করে দেওয়া হয়েছে, তাহলে তিনি ফেসবুকের একটি সুনির্দিষ্ট ফরম ব্যবহার করে প্রতিকার চাইলে অ্যাকাউন্ট ফিরে পেতে পারেন।

তবে ফেসবুকের আচরণে অনেকেই বিরক্ত হচ্ছেন। খালিদ হাসান জীবন নামের এক ব্যক্তি বেনারকে বলেন, তাঁর আইডিটি আট বছরের পুরোনো। সেই আইডি আচমকা বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক।

দেনদরবারের পর ফেসবুকের সাড়া

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, ২০১৩ সাল থেকেই বাংলাদেশ সরকার ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারের ডাকে সাড়া দেয়নি।

২০১৬ সালের এপ্রিলে ফেসবুক জানায়, বাংলাদেশ সরকার ৩১ জন ফেসবুক ব্যবহারকারী সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়েছিল। ফেসবুক ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রশ্নের জবাব দিয়েছ। গত বছরের ১২ জুন, সংসদে দেওয়া বক্তব্যে তারানা হালিম বলেন, গুগল, ফেসবুক ও মাইক্রোসফট ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের করা প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হয়েছে।

এ বছরের শুরুর দিকে তারানা হালিম সিঙ্গাপুরে ফেসবুকের সঙ্গে বৈঠক করেন। মার্চে পুলিশ সদর দপ্তরের আমন্ত্রণেও ফেসবুক ঢাকায় আসে। কোনো সমঝোতা স্মারক সাক্ষরে রাজি না হলেও অব্যাহত যোগাযোগের প্রতিশ্রুতি দেয়। সে অনুযায়ী মার্চেই ঢাকায় একটি ডেস্ক চালু করা হয়।

পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান গতকাল সোমবার বেনারকে বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের যৌথ প্রচেষ্টায় ভুয়া আইডি বন্ধের কাজ করছে ফেসবুক।

“ফেসবুকের কাছে আমরা বলেছি, দেশে যত তরুণ জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে তার প্রায় ৮০ ভাগই অনলাইনের মাধ্যেমে উদ্বুদ্ধ হয়। ফেসবুকে নিজের নাম পরিচয় দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুললে, পরে কোনো অপরাধে জড়ালেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে—এই কথাটাই আমরা ফেসবুককে বোঝাতে চেয়েছি,” মনিরুজ্জামান বলেন।

ফেসবুক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে ঢাকা দ্বিতীয়

সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারী হিসেবে সারা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা এখন দ্বিতীয়। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান উই আর সোশ্যাল ও কানাডার ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হুট স্যুট সম্প্রতি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে এখন ২ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ সক্রিয়ভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছেন।

ওই তালিকার শীর্ষে আছে ব্যাংকক। ঢাকার পর রয়েছে জাকার্তা ও মেক্সিকো। গত জানুয়ারিতে ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।