সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের ভাস্কর্য: এবার ইসলামি আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

জেসমিন পাপড়ি
2017.03.03
ঢাকা
জুমার নামাজের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে গণমিছিল। জুমার নামাজের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে গণমিছিল। মার্চ ০৩, ২০১৭।
সৌজন্যে: ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ

মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে নির্মিত ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইসলামি দলগুলো। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের পর এবার একই দাবিতে গণসমাবেশের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ নামে আরেকটি ইসলামি সংগঠন।

ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপন করা গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল কট্টরপন্থী ইসলামি দলগুলো।

গত শুক্রবারের মতো আজও এই ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণের বাইরে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশ করে সমমনা দলগুলোর সমর্থকেরা।

ওই সমাবেশ থেকেই ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে আগামী ১৮ মার্চ গণসমাবেশ ও ২১ এপ্রিল জাতীয় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দেন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী।

তবে ইসলামি দলগুলোর এই দাবিকে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য বলছেন প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ। ইসলামের নামে দেশে অরাজকতা তৈরির জন্যই মৌলবাদীরা এ ধরনের আন্দোলনে নেমেছেন বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বেনারকে বলেন, কট্টরপন্থী দলগুলো যেটাকে মূর্তি বলছে সেটা মূলত: ন্যায় বিচারের প্রতীকী ভাস্কর্য। পৃথিবীর বহু মুসলিম দেশে এটি রয়েছে।”

তাঁর মতে, “বাংলাদেশে অরাজকতা তৈরির জন্য, সুপ্রিম কোর্টকে হেয় করার জন্য মৌলবাদী দলগুলো এ ভাস্কর্য অপসারণের আন্দোলনে নেমেছে। সরকারকে কঠোর হাতে এদের দমন করতে হবে।”

কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে ফোয়ারা সংলগ্ন স্থানে গত ডিসেম্বর মাসে ন্যায় বিচারে প্রতীক হিসেবে গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের আদলে এই নারী মূর্তি তৈরি করেছেন ভাস্কর মৃণাল হক। কোনো মূর্তিকে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা ইসলাম পরিপন্থী অভিযোগ তুলে এ ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানানো হচ্ছে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়েছে শুক্রবারের সমাবেশ থেকে।

সমাবেশে সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, “প্রায় ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে সর্বোচ্চ বিচারালয় প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহের পাশে ওই নারী মূর্তি স্থাপন করে মুসল্লিদের নামাজ বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

জাতীয় ঈদগাহ’র সম্মান রক্ষার্থে অবিলম্বে লেডি মূর্তি অপসারণ না করলে সর্বত্র কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ার করেন এই ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা।

সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে মূর্তি নেই উল্লেখ করে মাওলানা মাদানি বলেন, “কারা হঠাৎ করে এই গ্রিক মূর্তি স্থাপন করে বাংলাদেশে নতুন করে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা লাগাতে চায়, তাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করতে হবে। অন্যথায় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠবে।”

জানতে চাইলে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বেনারকে বলেন, “৯২ ভাগ মুসলমানের চিন্তাচেতনা বিরোধী গ্রিক মূর্তি স্থাপন করে মুসলমানের ইমানে চরম আঘাত করেছে। মূর্তির সংস্কৃতি ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র।”

তিনি বলেন, “মূর্তি অপসারণ না করলে যেভাবে দেশ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তাতে সরকার পতনের ঘণ্টা বেজে যাবে।”

নেপথ্যে যুদ্ধাপরাধের বিচার!

হেফাজতসহ এসব আন্দোলনকারীরা মূলত জামায়াতের উত্তরসূরি বলে দাবি করেছেন শাহরিয়ার কবীর।

তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্ট থেকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষ ছয় জামায়াত নেতার ফাঁসির আদেশ হওয়ায় তারই প্রতিশোধ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টকে বিতর্কিত করতে চাইছে এসব সংগঠনগুলো।

তিনি বলেন, “হেফাজতসহ এ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নেতাদের অনেকেই যুদ্ধাপরাধী। এখন যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের বিচারের দাবি উঠেছে। এ কারণে তারা সুপ্রিম কোর্টকে আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টকে তাঁরা দেশের মানুষের কাছে বিতর্কিত করতে চায়।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।