শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর এবার আন্দোলনে নামলেন পাটকল শ্রমিকেরা

প্রাপ্তি রহমান
2018.01.02
ঢাকা
শিক্ষামন্ত্রী  নুরুল ইসলাম নাহিদ আন্দোলনরত শিক্ষকদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁদের অনশন ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন| শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আন্দোলনরত শিক্ষকদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁদের অনশন ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। ০২ জানুয়ারী ২০১৮।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টানা আন্দোলন চলছিল। এ অবস্থার মধ্যেই মঙ্গলবার থেকে ধর্মঘটে নেমেছেন পাটকল শ্রমিকেরা। পেশাজীবীদের এই আন্দোলন কবে শেষ হবে, সরকার পক্ষ তাদের আন্দোলনে কতটুকুবা সাড়া দেবে, সে বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি বা আন্দোলনরতরা কিছুই বলতে পারছেন না।

সরকারের শেষ বছরে বিশেষ করে নির্বাচনের বছরে পেশাজীবীদের এ ধরনের কর্মসূচি সরকারকে চাপে ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। গতকাল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এক বৈঠকে স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর তাঁরা কর্মসূচি স্থগিত করেন।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আমরণ অনশন তৃতীয় দিনে পৌঁছেছে। দেশের প্রায় পাঁচ হাজার নন-এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে তাঁরা এমপিওভুক্ত আন্দোলন করছেন। এসব শিক্ষক রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন–ভাতার কিছুই পান না।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে যান। কিন্তু শিক্ষকদের তিনি শান্ত করতে ব্যর্থ হন।

এ সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে আলোচনা করছেন। নীতিমালার আলোকে বিষয়টির মীমাংসা হবে। তিনি বলেন, “এমপিওভুক্ত করে দেওয়া হবে। আশা করছি আপনারা আর কষ্ট করবেন না।”

শিক্ষামন্ত্রী প্রেস ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার পর আন্দোলনরত শিক্ষকদের অন্যতম সংগঠক এস এম ফিরোজ বেনারকে জানান, বৃহস্পতিবার থেকে অনশনে তাঁদের পাঁচজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আরও ৩০/৩৫ জন অসুস্থ। কিন্তু তাঁরা এখনো সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা পাননি।

ওই শিক্ষক আরও বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী এসেছিলেন। অথচ তিনি শিক্ষকদের অনশন ভাঙানোর কোনো চেষ্টা করেননি। শুধু দায়সারাভাবে বলেছেন, এমপিওভুক্ত করার জন্য তিনি চেষ্টা করছেন। কিন্তু কবে, কখন, সে ব্যাপারে কিছুই বলেননি। আমরা সুস্পষ্ট ঘোষণা চাই। কোনো প্রতিশ্রুতিতেই আমরা কাজে ফিরব না।”

পাটকল শ্রমিকেরা আন্দোলনে

বকেয়া মজুরি পাওয়াসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে খুলনার আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকেরাও ধর্মঘটে নেমেছেন। পাটকলগুলো হলো; ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, ইস্টার্ন, দৌলতপুর, আলিম, খালিশপুর ও কার্পেটিং জুটমিল।

খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করা যায়নি বলে শ্রমিকেরা মজুরি পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন সূত্রগুলো বলছে, প্রতিবছর কাঁচাপাট কেনার জন্য টাকা ছাড় করতে দেরি হয়ে যায়। ২০১৫ সালে পাটকলগুলোকে আগাম ২৬০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ফলে মৌসুমের শুরুতেই পাটকলগুলো পাট কিনে পণ্য উৎপাদনে যায়। এখন পাটকলে দুই থেকে ছয় মাসের আগাম পণ্য মজুত আছে। মজুত পণ্যের পরিমাণ ২১ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন। বিজেএমসি মনে করছে, এই পণ্য বিক্রি করলেই শ্রমিকদের দায়-দেনা মেটানো সম্ভব।

প্লাটিনাম জুটমিল সিবিএ-এর সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বেনারকে জানান, আটটি পাটকলে শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ২০ হাজার। শ্রমিকদের আট সপ্তাহ এবং কর্মচারী কর্মকর্তাদের ৪ মাসের বেতন বাকি।

ওই শ্রমিক নেতা বলেন, “শ্রমিকেরা উৎপাদনে কোনো ফাঁকি দেননি। মজুত যথেষ্ট। কিন্তু আমরা বেতন পাচ্ছি না। বলা হচ্ছে, বিক্রি হলেই শ্রমিকেরা বেতন পাবেন। তবে আমরা বেতন না পাওয়া পর্যন্ত মিলে ফিরব না।”

কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেন স্বাস্থ্য সহকারীরা

সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী গতকাল চার দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেন। এতে করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচির মতো জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমও চলেনি।

তকে গতকাল সন্ধ্যায় দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে স্বাস্থ্য সহকারীরা লাগাতার ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত করেন। আজ স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজে যোগ দেবেন। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য সহকারী অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

স্বাস্থ্য সহকারী অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও দাবি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এনায়েত রাব্বি বেনারকে বলেন, “সরকার আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে। তাই আমরা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি।”

স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবিগুলো হচ্ছে, বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দিতে হবে, ঝুঁকি ও মাঠ/ভ্রমণ ভাতা মূল বেতনের ৩০ শতাংশ হারে দিতে হবে, প্রতি ছয় হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য একজন করে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ ও শূন্যপদে নিয়োগ দিতে হবে এবং ১০ শতাংশ পোষ্য কোটা প্রবর্তন করতে হবে।

স্বাস্থ্য সহকারী অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এনায়েত বলেন, “আমরা আচমকা এই দাবি নিয়ে হাজির হইনি। ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী এই দাবিগুলো পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই আমাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, আমলাতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে।”

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর জাহাঙ্গীর আলম সরকার বেনারকে জানান, “তাঁদের দাবি-দাওয়াগুলো অযৌক্তিক নয় বলে আমরাও মনে করি। আমরাও চাই তাঁরা ভালো থাকুন।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।