ছয় হাজার মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হবে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প
2017.05.05
ঢাকা

রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প কমপক্ষে ছয় হাজার মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই প্রকল্প ভবিষ্যতে বায়ু দূষণের একক বৃহত্তম কারণ হবে বলেও সতর্ক করা হচ্ছে।
শুক্রবার নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন পিস এ নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব তথ্য ওই গবেষণা প্রতিবেদনের।
সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র: সম্ভাব্য বায়ু দূষণ ও মানবদেহের ওপর প্রভাব’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে স্কাইপেতে যোগ দেন গ্রীন পিসের কয়লা ও বায়ু দূষণ বিশেষজ্ঞ লরি মাইলিভিরতার। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির অনুরোধে তিনি এই গবেষণাটি করেন।
বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল এলাকায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে ভারত। প্রকল্পটি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এই যুক্তিতে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী ব্যক্তি ও সংগঠনের বড় অংশ।
গত বছরের অক্টোবরে ইউনেসকো এই প্রকল্প সুন্দরবনের চিরস্থায়ী ক্ষতি করবে বলে সতর্ক করে। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ এ প্রকল্পে প্রতিবছর পাঁচ মিলিয়ন টন কয়লা ব্যবহার করা হবে। এই কয়লা পরিবাহিত হবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে।
জাতিসংঘ এই বলে সরকারকে সতর্ক করেছে যে, ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের জন্য এই বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
প্রতিবেদনের ওপর সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার এই প্রকল্পের পক্ষে তাঁর জোরালো অবস্থানের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই বিরোধিতা করা হচ্ছে।
গ্রীন পিসের এই প্রতিবেদন সম্পর্কে বক্তব্য পাওয়ার জন্য বেনারের পক্ষ থেকে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সঙ্গে। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সরকার সহসাই এ বিষয়ে তার অবস্থান তুলে ধরবে।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সরকার আমাদের ধমক দিয়ে গায়ের জোরে রামপাল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। আমাদের আবেগ নিয়ে ব্ল্যাক মেইল করছে। বলছে বঙ্গবন্ধু কন্যার শাসনামলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হতে পারে না।”
প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে
গ্রীন পিসের নতুন এই রিপোর্ট বলছে, শুধু সুন্দরবন বা বাংলাদেশ নয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতও বায়ু দূষণের মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ ঢাকার কাছে নরসিংদী থেকে শুরু করে ভারতের বসিরহাট কলকাতা পর্যন্ত ছড়াবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যত দিন চালু থাকবে, তা থেকে উদ্গিরণ হবে। এ থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদ্রোগ, শ্বাসকষ্ট এবং শিশুদের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগ দেখা দিতে পারে।
আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বায়ুতে যদি এখন দূষণের মাত্রা শূন্য হয়, তবে শুধু কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে ছয় হাজার মানুষ সময়ের আগে মারা যাবেন। ২৪ হাজার শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মাবে।
রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সচল অবস্থায় নিঃসরিত পারদের পরিমাণ হবে ১০হাজার কেজি। পারদ নিঃসরণের কারণে শিশুদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ু বিকৃতি ঘটতে পারে।
একই কারণে ৭০ কিলোমিটার এলাকার মাছ খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়বে। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মাছ অনিরাপদ হয়ে পড়তে পারে। বঙ্গোপসাগর ও এর উপকূলবর্তী এলাকা এবং সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে যে খাদ্যশৃঙ্খল সেটিও বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনে।
এ ছাড়া ২০১৮ সাল থেকে চালু হতে যাওয়া প্রকল্পটি থেকে প্রতিদিন এক লাখ ২৫ হাজার ঘনমিটার রাসায়নিক মিশ্রিত পানি নিঃসরণ হবে। গ্রীন পিস বলছে, এই পানি গিয়ে সুন্দরবনের আশপাশের নদী ও জলাভূমিতে পড়বে।
ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাধারণ সম্পাদক কাজী রকিবুল ইসলাম বলেন, এসব মন্তব্য করা হয়েছে খুব সতর্কভাবে গবেষণার পর।
“কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নিঃসরণ এবং নিঃসরণের কারণে জনস্বাস্থ্যের ওপর কী ঝুঁকি পড়তে পারে তা নিয়ে বিশদ গবেষণার পর প্রতিবেদনে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে,” কাজী রকিবুল ইসলাম বেনারকে বলেন।
অন্যদিকে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য শরীফ জামিল বেনারকে বলেন, “আমরা ধারাবাহিকভাবে গবেষণাভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছি। কিন্তু সরকারের কোনো বিকার দেখতে পাচ্ছি না,” বেনারকে বলেন শরীফ জামিল।