ভীত না হয়ে নিজের কথা বলো: তানজিল ফেরদৌস

বেনারনিউজ স্টাফ
2018.05.03
ওয়াশিংটন ডিসি
ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে ‘উদীয়মান তরুণ নেতা ২০১৮ পুরস্কার হাতে তানজিল ফেরদৌস। ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে ‘উদীয়মান তরুণ নেতা ২০১৮' পুরস্কার হাতে তানজিল ফেরদৌস। ২ মে ২০১৮।
বেনারনিউজ

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে সবেচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো ‘রোহিঙ্গা নারীদের মানসিক শক্তি’; এভাবেই নিজের পর্যবেক্ষণ বেনারকে জানান তানজিল ফেরদৌস।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সারা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত ১০ জনকে ‘উদীয়মান তরুণ নেতা ২০১৮’ হিসেবে বুধবার পুরস্কৃত করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

এই দশ তরুণের একজন বাংলাদেশের তানজিল ফেরদৌস; যিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে ওঠা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভলেন্টিয়ার ফর বাংলাদেশ এর মাধ্যমে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে অবদান রাখার জন্য এই পুরস্কার অর্জন করেন।

“আমি মূলত বছর তিনেক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স ওয়ার্কের গবেষণার সূত্র ধরেই রোহিঙ্গাদের সাথে কাজ শুরু করি,” বেনারকে জানান তানজিল।

তিনি বলেন “মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের ঘটনাগুলো শুনে খুবই খারাপ লাগে আমার। বিষয়গুলো আমাকে খুব বেশি নাড়া দেয়। আর তখনই মনে হয় যে, এদের জন্য সত্যি সত্যি কিছু করা দরকার।”

২৪ বছর বয়েসি তানজিল রোহিঙ্গাদের সাথে প্রথম সাক্ষাতের সময় চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর অর্থনীতির শিক্ষার্থী ছিলেন।

বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর একজন নিয়মিত কর্মী।

শরণার্থীদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তানজিল বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা নারীদের মাঝে সবচে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি আমি লক্ষ করেছি, তা হলো তাঁদের ধৈর্য ক্ষমতা এবং মানসিক শক্তি।”

তিনি বলেন, “এদের অনেকেই প্রায় সবকিছু হারিয়ে এসেছেন, অনেকে জানেনই না যে তাঁর স্বামী জীবিত কি না, কিন্তু তার পরেও তাঁরা ভেঙে পড়েননি, বরং টিকে থাকার জন্য প্রচণ্ড মানসিক শক্তি নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।”

“অথচ তাঁদের পেছনে যা ঘটেছে সেই দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা সবাই জানি যে, ভেতরের দিক থেকে তাঁরা খুবই ভেঙে পড়া মানুষ,” বলেন তানজিল।

‘উদীয়মান তরুণ নেতা’ হিসেবে পুরস্কৃত হবার অনুভূতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই পুরস্কারটাকে আমি শুধু আমার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেখি না। বরং এটা আমাদের দেশের সকল স্বেচ্ছাসেবীর কাজের স্বীকৃতি। আমি নিশ্চিত এই পুরস্কার দেশের সব স্বেচ্ছাসেবীকেই উৎসাহ যোগাবে।”

বাংলাদেশের নারীদের ‘নেতৃত্ব বিকাশ ও সাংগঠনিক দক্ষতা তৈরির’ ক্ষেত্রে তাঁর ভবিষ্যতে কাজের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তানজিল।

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময় বিষয়ক ব্যুরোর ওয়েবসাইটে তানজিল সম্পর্কে বলা হয়, তিনি বাংলাদেশে সমাজসেবামূলক কাজের পাশাপাশি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজে নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

এতে বলা হয়, তানজিল বিশ্বাস করেন, সমাজসসেবামূলক কাজে তরুণদের যুক্ত করতে পারলে তাঁরা উগ্রবাদী কার্যক্রম থেকে দূরে থাকবে।

‘নিজের কথা নিজেই বলো’

চট্টগ্রামের মেয়ে তানজিল বাংলাদেশের নারী ও কিশোরীদের সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বেনারকে বলেন, “অনেক কিছুই করতে চায় তাঁরা, কিন্তু পারিপার্শ্বিকতা এবং আমাদের সামাজিক মানসিকতার জন্য তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই বাধার সম্মখীন হন।”

“এরকম পরিস্থিতি আমার নিজের ক্ষেত্রেও ঘটেছে,” উল্লেখ করে তানজিল বলেন “এক্ষেত্রে আমি বাংলাদেশের তরুণীদের বলব- ভীত না হয়ে নিজের কথা বলো।”

তিনি বলেন “পরিস্থিতি যাই হউক না কেন, অন্য যে কেউ যাই সমালোচনা করুক না কেন, নিজের সমস্যার কথা নিজেকেই বলতে হবে। আর যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়, তার অনেকগুলোই শেষ পর্যন্ত সমাধান হয়।”

“কিন্তু সমস্যার কথা না বললে সেগুলোর অস্তিত্বের কথাই কেউ জানবে না, সমাধান তো দূরের কথা,” যোগ করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরি রয়েস (মাঝে) এর সাথে ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছেন পুরস্কারপ্রাপ্ত দশ তরুণ। ওয়াশিংটন ডিসি, ২ মে ২০১৮।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরি রয়েস (মাঝে) এর সাথে ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছেন পুরস্কারপ্রাপ্ত দশ তরুণ। ওয়াশিংটন ডিসি, ২ মে ২০১৮।
বেনারনিউজ

তানজিলের সাথে এ বছর ‘উদীয়মান তরুণ নেতা’ পুরস্কার পাওয়া অন্যরা হলেন, ইরাকের সারা আবদুল্লাহ আবদুলরহমান, ইন্দোনেশিয়ার দিওভিও আলফাত, তুরস্কের এচ সিফতিসি, লিথুয়ানিয়ার জিনা সেলিম হাসান হামু, পাকিস্তানের দানিয়া হাসান, নরওয়ের ন্যান্সি হার্জ, দক্ষিণ আফ্রিকার ইসাসিফিনকোসি মদিঙ্গি, পানামার হোসে রদ্রিগেজ ও তাজিকিস্তানের ফিরুজ ইয়োগবেকভ।

বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে এই দশ তরুণ নেতার হাতে পুরস্কার তুলে দেন দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরি রয়েস।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।