থাইল্যান্ডের দক্ষিণে মানব পাচারের শিকার ৩২ জনের কবর খুঁজে পেয়েছে পুলিশ
2015.05.01

দক্ষিণ থাইল্যান্ডে শুক্রবার মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে জঙ্গলের মধ্যে গণ কবর খুজে পেয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতে, সেখানে একটি আটক শিবির ছিলো তাতে ৩১ জন মুসলিম রোহিঙ্গার মৃতদেহ কবর দেয়া হয়েছে।
পুলিশ তাদের মধ্যে বেঁচে যাওয়া একজনকে শায়িত অবস্থায় দেখতে পেয়েছে, বলা হচ্ছে সে একজন বাংলাদেশি।
পুলিশ মনে করে, সংখলা প্রদেশের সাদাও জেলার পাদাং বেসার ক্যাম্পে ৩২ জন যারা না খেতে পেয়ে মারা গেছে তাদেরকে মানব পাচারকারীরা আটক শিবিরে রেখেছিল।
থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত দক্ষিণে মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে পাচারের লক্ষ্যে দুষ্টচক্র ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ঐ এলাকা ব্যবহার করে থাকে। বৌদ্ধ প্রভাবিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সহ সংখ্যালঘু মুসলমানরা এই পাচারকারীদের লক্ষ্য হয়ে থাকে।
পুলিশ জানায়, ঐ বন্দি শিবিরটি মালয় সীমান্ত থেকে ৩০০ মিটার দূরে মাত্র।
পাদাম বেসারের পুলিশ প্রধান কর্ণেল অয়েরেসান্ত টারনপিয়েম বলেন, সংখলা থেকে রোহিঙ্গাদের সাহায্যকারী একটি সংস্থা তার থানায় এসে গ্যাংদের হাতে আটক ঐ রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করতে অনুরোধ জানায়।
তিনি জানান, “ ৮৮ জন পুলিশ জঙ্গলের মধ্যে এক ঘন্টা ধরে খুজে ক্যাম্পটি খুজে পায়, এতে ৩৪টি শেল্টার, থাকার ঘর, রান্না ঘর ও বাথরুম দেখতে পায়।মনে হচ্ছে, খুব সম্প্রতি এটি পরিত্যাক্ত হয়েছে। পুলিশ থু দন খা(২৬) নামের এক বাংলাদেশিকে জীবিত কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় পায়। সে জানায়, সেখানে ১০০ রোহিঙ্গাকে আটকে রাখা হয়েছিল, কিন্তু দালালরা তাদেরকে নিয়ে পালিয়ে যায়।প্রায় ৩০ জনের কবর দেখতে পায় যারা রোহিঙ্গা বৃদ্ধ ও তরুন ছিলো”।
মাই খাম রেসকিউ ফাউন্ডেশন তাদের মধ্য থেকে ৫ জনের লাশ মাটি খুড়ে বের করে পুলিশকে সাহায্য করে।প্লাস্টিকে মোড়ানো ২টি মরদেহের ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়া হয়। জীবিত অসুস্থ বাংলাদেশিকে স্থানীয় হাসাপাতালে নেয়া হয়। মাই খাম ফাউন্ডেশন জানায় ৬টি মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য হাত ইয়াইতে পাঠানো হয়।
শুক্রবারের এই আটক শিবির আবিস্কারের আগে থাই-মালয় সীমান্তে মার্চ ৩০ তারিখে ৭৬জন আটকের ঘটনা ঘটে, যাদের মধ্যে অধিকাংশ মিয়ানমার থেকে আসা অবৈধ নাগরিক, ৬ রোহিঙ্গাও তাদের সঙ্গে ছিলো। থাই পুলিশ তাদেরকে মালয়েশিয়া গামী ট্রেনে আটক করে।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়। তারা সেখানে রাষ্ট্র পরিচয় হীন। নাগরিকত্বের অধিকার দেয়া হয় না। প্রায় তাদেরকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি বলেও চিহ্নিত করা হয়। ২০১২ সাল থেকে সংঘাতের মুখে হাজার হাজার রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালানো শুরু করে।তাদের অনেকে মালয়েশিয়ায় মুসলিম রিফুজি হিসেবে আশ্রয় লাভের চেষ্টা করে। সেখানে যাবার জন্য তারা পাচারকারীদের অর্থের বিনিময়ে থাইল্যান্ডকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে।
এর আগেও থাইল্যান্ডে বার্মিজরা ধরা পড়ে। থাই পার্লামেন্টে পাচার বিরোধী আইন পাশ করা হয়। পাদাং বেসারের এক স্থানীয় বাসিন্দা বেনার নিউজকে জানায়, “পাচারকারী রোহিঙ্গারা নিকটবর্তি জঙ্গলে মালয়েশিয়া ঢোকার আগে অবস্থান করে থাকে। মালয়েশিয়া প্রবেশের পর সেখানে আর একটা ক্যাম্পে অপেক্ষা করে পরের ধাপে পৌছার জন্য। দালালরা এজন্য মাথাপিছু ৫০হাজার বাথ বা দেড় হাজার ডলার পেয়ে থাকে বলে আমি শুনেছি”।