মানবপাচার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ
2015.05.08

থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলের গণকবর থেকে বাংলাদেশিদের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর পাচারকারীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। শুক্রবার কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন তিন সন্দেহভাজন মানব পাচারকারী। এই তিনজনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মানবপাচারকারী বলে জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ওসি মো. আতাউর রহমান।
এছাড়া মানবপাচার রোধে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এদিকে থাই গণকবর থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া দুই বাংলাদেশি(একজন কিশোর), যাদেরকে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের শংখলা প্রদেশের সাদাও এলাকা পরিদর্শন করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম। তিনি এই দুই বাংলাদেশির নাগরিকত্ব যাচাই করে তাদের সাক্ষাতকার নেবেন বলে বেনারকে জানান।
মানবপাচারের অভিযোগে টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে নিহতরা হলেন- শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়া এলাকার ধলু হোসেন (৪৫), কাটাবুনিয়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম (৪০) ও হারিয়ারখালী এলাকার জাফর আলম (৩৯)।
এদের মধ্যে ধলুর বিরুদ্ধে মানব পাচারের নয়টি, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আটটি এবং জাফরের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে বলে জানান টেকনাফের ওসি আতাউর।
তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে টেকনাফের ২০ হ্যাচারি এলাকায় এসব তালিকাভুক্ত মানব পাচারকারীদের ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পাল্টাপাল্টি ছোড়া গুলিতে এসব আসামি নিহত হয়।”
সম্প্রতি মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে থাইল্যান্ডের সংখলা প্রদেশে পাহাড়ি জঙ্গলে বন্দি শিবিরের খোঁজ পায় পুলিশ। গত ১ মে এক শিবিরে একটি গণকবর থেকে ২৬ জনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। ওই বন্দি শিবিরে পাচার বা অপহরণের শিকার হওয়া পাঁচ শতাধিক অভিবাসীকে মেরে ফেলা হয়ে থাকতে পারে বলে বেঁচে যাওয়া একজনের বরাত দিয়ে জানায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
এসব বন্দির অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বলেও এসব প্রতিবেদনে বলা হয়। দফায় দফায় আরো গণকবরের সন্ধান মিলছে সেখানে। মানবপাচারের শিকার হয়ে বাংলাদেশ, মায়ানমারসহ এ অঞ্চলের অভিবাসীরা অবৈধ পথে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী এ এলাকায় পৌঁছে জিম্মি হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওই খবর প্রকাশের পর থাইল্যান্ডে মানবপাচারকারীদের খুঁজে বের করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ।
শুক্রবার থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশ সফরকারী রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম উদ্ধারকৃত বাংলাদেশিদের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য নিয়ে শংখলা প্রদেশের গভর্নর এবং পুলিশ প্রধানের সঙ্গেও দেখা করার কথা রয়েছে বলে জানান।
এদিকে মানবপাচাকারীদের রোধে ‘কঠোর’ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বেনারকে বলেন, সম্প্রতি থাইল্যান্ডের গণকবর থেকে কিছু বাংলাদেশির মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। মানবপাচারের শিকার মানুষগুলোর এই পরিণতি আমাদের স্তম্ভিত করেছে। মানবপাচার রোধে সরকার আরও কঠোর হবে। শিগগির মন্ত্রিসভার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটিতে বিষয়টি তুলবো। পাচারকারীদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্তে যেতে হবে সরকারকে।
থাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানায়, উদ্ধারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে সংখলা প্রদেশে অভিযান জোরদার করা হচ্ছে।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই মানব পাচারের ঘটনা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। মূলত টেকনাফের দুটি রুট দিয়ে মানবপাচার হচ্ছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারা বাড়ানোর পাশাপাশি থাই সরকারের সঙ্গেও পাচারকারীদের তথ্য আদান প্রদান জরুরি। তার জন্য দুদেশের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন হওয়া জরুরি। সে বিষয়েও কাজ চলছে।
তিনি বলেন, পাচারকারীদের পাশাপাশি পাচারের শিকার হওয়ার পর উদ্ধার হয়ে যারা দেশে ফিরছেন তাদেরকেও হিসেবে ধরে শাস্তির মুখোমুখি করা জরুরি।
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে মানবপাচার রোধ করতে ঢাকার সঙ্গে ব্যাংকক একটি চুক্তি করতে চায় বলে জানান মুনা তাসনিম।
মাশরুম সংগ্রহে ওই এলাকায় যাওয়া গ্রামবাসী এ গণকবরের সন্ধান পায় বলে জানান তিনি।